ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ নগর পরিবহন, যাত্রীদের ভোগান্তি

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৮:০৯ এএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ঢাকা নগর পরিবহন/ফাইল ছবি

• ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর নগর পরিবহন চালু হয়
• এ রুটে বিআরটিসির লোকসান ৮ কোটি টাকা, সব বাস উঠিয়ে নিয়েছে সংস্থাটি
• নগর পরিবহন চালুর দাবি শিক্ষার্থীদের

রাজধানীতে যাত্রী পরিবহন সেবায় শৃঙ্খলা ফেরাতে চালু হয় ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি চালু করে এ সেবা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কোনো ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ নগর পরিবহনের বাস। বিআরটিসিসহ অন্য বেসরকারি কোম্পানিগুলো সব বাস তুলে নিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এ রুটের নিয়মিত যাত্রীরা।

সরকার পতনের পর থেকে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সব কার্যক্রমও বন্ধ। যে উদ্দেশ্যে এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তার সুফল আর মিললো না। এখন করণীয়ও ঠিক করতে পারছে না বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। আর ঠিক কী কারণে এই পরিবহন সেবা বন্ধ হলো, তাও তারা স্পষ্ট করে বলছে না।

ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ নগর পরিবহন, যাত্রীদের ভোগান্তি

২০১৫ সালে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তখন আনিসুল হককে আহ্বায়ক করে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গঠন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন বলা হয়েছিল, ঢাকার পুরোনো ও জরাজীর্ণ বাসগুলো সরিয়ে চার হাজার নতুন বাস নামানো হবে। একটি রুটে একটি কোম্পানির অধীন চালানো হলে বাসে বাসে প্রতিযোগিতা রোধ হবে, দুর্ঘটনা কমে ফিরবে শৃঙ্খলা।

৫ আগস্টের পর ২৬ নম্বর রুটে বিআরটিসি বাসে যাত্রী পরিবহন বন্ধ। ২১ নম্বর রুটে পাঁচ থেকে সাতটি বাস চলছে। এখন শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ওই রুটগুলোতে বিআরটিসি বাস বাড়ানো হবে।- বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল মোহাম্মদ মোবারক হোসেন মজুমদার

২০১৭ সালে আনিসুল হক মারা যান। এরপর এই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ২০২০ সালে ডিএসসিসিতে মেয়র নির্বাচিত হয়ে এই কমিটির দায়িত্ব নেন শেখ ফজলে নূর তাপস। আর কমিটির অন্যতম সদস্য হয়ে কাজ করেছেন ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৩ আগস্ট গোপনে দেশ ছাড়েন ডিএসসিসির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে আত্মগোপনে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। মূলত এর পর থেকেই নগর পরিবহন সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও নগর পরিবহন সেবা ফের চালু করতে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) মতিঝিলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) সামনে মানববন্ধন করেন যাত্রীরা।

ঢাকা নগর পরিবহন

২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত (২১ নম্বর রুট) ঢাকা নগর পরিবহন চালু হয়। এরপর ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের পাগলা (২৬ নম্বর রুট) ও ঘাটারচর থেকে রাজধানীর উত্তরায় (২২ নম্বর রুট) চালু হয় এই সেবা। এসব রুটে বিআরটিসির ৪০টি দ্বিতল বাসসহ বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির দেড় শতাধিক বাস যাত্রী পরিবহন করতো। তবে শুরু থেকেই এসব বাসে যাতায়াতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে কোনো ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ রাস্তা থেকে উধাও সব বাস।

ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ নগর পরিবহন, যাত্রীদের ভোগান্তি

ডিটিসিএ সূত্র জানায়, কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই নগর পরিবহন সেবা চালুর নির্দেশ দিয়েছিলেন ডিএসসিসির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ফলে এ সেবার শুরু থেকেই যাত্রীদের প্রচুর অভিযোগ ছিল। তারপরও কারও কথা না শুনে ২৪ ও ২৫ নম্বর রুটও চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন শেখ তাপস। তার এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তের কারণে নগর পরিবহন আলোর মুখ দেখেনি। অথচ প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করলে যাত্রীসেবা উন্নত বিশ্বের মতো হতো।

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য ছিলেন ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। সম্প্রতি তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটিতে এককভাবে কর্তৃত্ব ছিল ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের। তিনি যা বুঝতেন, তা-ই সিদ্ধান্ত নিতেন। কারও কোনো কথা তিনি শুনতেন না। মালিক সমিতিকেও তিনি কোনো গুরুত্ব দেননি। ফলে সমীক্ষা ছাড়া এই পরিবহন চালু করায় সুফল পায়নি নগরবাসী।

ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ নগর পরিবহন, যাত্রীদের ভোগান্তি

জানতে চাইলে ডিটিসিএর ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাময়িকভাবে নগর পরিবহন সেবা বন্ধ আছে।’ তবে এ সেবা কবে চালু হবে, তা স্পষ্ট করে বলেননি তিনি।

নগর পরিবহন চালুর দাবি

নগর পরিবহনের ২১ ও ২৬ নম্বর রুট চালুর দাবিতে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) মতিঝিলে বিআরটিসি ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন এই পরিবহনে যাতায়াত করা শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ যোগ দেন। মানববন্ধন শেষে দাবি আদায়ে বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বরাবর চিঠিও দিয়েছেন তারা।

ওই চিঠিতে বলা হয়, নগর পরিবহনে বাসের সংখ্যা বাড়ানো, প্রতি ১০ মিনিট পরপর বাস পরিচালনা, কাউন্টারের মাধ্যমে গাড়ি চালানো, কাউন্টার বাদে কোনো যাত্রী ওঠানো বা না নামানো, প্রথম বাস ভোর ৫টায় ছাড়া, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া, দুস্থ-অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে ভ্রমণ চালু, রাত ১১টা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন, নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতকরণে বাস শ্রমিকদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম এবং সম্মানজনক মজুরি বাস্তবায়নের দাবি জানানো হচ্ছে।

ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ নগর পরিবহন, যাত্রীদের ভোগান্তি

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জুরাইনের মিজানুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নগর পরিবহনে যাতায়াতে কিছু ভোগান্তি থাকলে জুরাইনের মানুষ কষ্ট করে এই পরিবহনে যাতায়াত করতেন। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে ২৬ নম্বর রুটে কোনো বাস চলছে না। এখন নাগরিকদের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে গেছে। তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই মানববন্ধনে গেছি।

জানতে চাইলে বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল মোহাম্মদ মোবারক হোসেন মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা নগর পরিবহন মূলত বিআরটিসিসহ কয়েকটি কোম্পানির বাস দিয়ে পরিচালিত হতো। কিন্তু ওই দুটি রুটে বাস চালাতে গিয়ে গত দুই বছরে বিআরটিসির প্রায় আট কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। কারণ, বাস রুট রেশনালাইজেশনের সিদ্ধান্ত ছিল ২১ ও ২৬ নম্বর রুটে ঢাকা নগর পরিবহনের বাস ছাড়া অন্য কোনো পরিবহনের বাস যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না। অথচ বাস্তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। ফলে বিআরটিসি বাসে যাত্রী সংকট থাকতো।’

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ২৬ নম্বর রুটে বিআরটিসি বাসে যাত্রী পরিবহন বন্ধ। ২১ নম্বর রুটে পাঁচ থেকে সাতটি বাস চলছে। এখন শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ওই রুটগুলোতে বিআরটিসি বাস বাড়ানো হবে।’

এমএমএ/এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।