‘লড়াই শেষ হয়নি’: শহীদি মার্চে চট্টগ্রামের ছাত্রনেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৫৯ এএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু হয়েছিল কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার হটিয়ে এখন রাষ্ট্র সংস্কারে পৌঁছেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এমন দেশ তৈরি করতে চায়, যেখান থেকে নতুন কোনো স্বৈরাচার তৈরি হবে না। ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চায় শিক্ষার্থীরা। তাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হয়নি।’

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্ণ হওয়ায় শহীদদের স্মরণে ‘শহীদি মার্চ’ উপলক্ষে এক সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের নেতারা এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ষোলশহর রেলস্টেশনে এ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্র-জনতা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও এর আওতাধীন ৭ কলেজের শিক্ষার্থীসহ ছাত্র-জনতা। এসময় তাদের বেশিরভাগের হাতে ও মাথায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেখা যায়।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিকেল সাড়ে ৩টার পর ষোলশহর স্টেশন চত্বর থেকে ‘শহীদি মার্চ’ নিয়ে বহদ্দারহাট এলাকায় যায় ছাত্র-জনতার মিছিল। পরে সেটি ঘুরে মুরাদপুর এলাকায় গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীদের নানা স্লোগানে উত্তাল হয়ে চট্টগ্রাম নগরের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা। স্লোগানগুলোর উল্লেখযোগ্য ছিল- ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’; ‘আমাদের শহীদেরা, আমাদের শক্তি’; ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘এই যুদ্ধে জিতবে কারা, আমাদের শহীদেরা’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আইয়ুব-মুজিব-হাসিনা স্বৈরাচার মানি না’, ‘শহীদের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’।

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের তিস্তার পানি ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। কেউ কেউ তাদের বহন করা প্ল্যাকার্ডে লিখে আনে ‘সীমান্ত হত্যা বন্ধ করো, করতে হবে’। একই দাবিতে ‘পানি পানি পানি চাই, তিস্তার পানি চাই’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান তোলেন শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘যারা ছাত্র-জনতার এই বিজয়কে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র লিপ্ত রয়েছে, তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। এই রাষ্ট্র সংস্কারে ছাত্র-জনতা এভাবেই মাঠে থাকবে। ছদ্মবেশে থাকা আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে লুটপাট, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে যারা মেতে উঠেছে তারা সাবধান না হলে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধেও ছাত্র সমাজ মাঠে নামবে।’

শেখ হাসিনাসহ ছাত্র আন্দোলনে হত্যা-নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী শরীফ হাসনাত বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, আমরা আজ তাদের শদ্ধা জানাচ্ছি। তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা নতুনভাবে অর্জন করেছি, তা সমুন্নত রাখতে লড়াই অব্যাহত রাখার শপথ নিচ্ছি। রাষ্ট্রের কাঠামোয় এখনো ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। রাষ্ট্রের কাঠামো এখনো ঠিকমতো কাজ করছে না। সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করবে ছাত্রসমাজ।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত জুলাইয়ের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগসহ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা-নির্যাতনের একপর্যায়ে তা সরকারের পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিনদিন পর গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেয়।

এএজেড/ইএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।