হেলিকপ্টার থেকে গুলি

‘একটা চাকরি দেন, নইলে পুরো পরিবার না খেয়ে মরবো’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৯ এএম, ২৭ আগস্ট ২০২৪
দুই পা নিয়ে শঙ্কায় আহত মনির হোসেন/জাগো নিউজ

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)। পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় ক্যাজুয়ালটি-২ ইউনিট। এই ইউনিটে প্রবেশ করতেই চোখ পড়ে এক যুবকের ওপর। দুই পায়ে রিং নিয়ে শুয়ে আছেন বেডে, চোখেমুখে স্পষ্ট শঙ্কার ছাপ।

কাছে গিয়ে জানা যায়, আহত মোহাম্মদ মনির হোসেন গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকার আলমগীর হাওলাদারের ছেলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের সময় দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। একাধিকবার অস্ত্রোপচার করা হলেও এখনো শঙ্কা কাটেনি। কবে নাগাদ দুই পায়ে হাঁটতে পারবেন সেই আশায় সময় গুনছেন মনির। আবার সুস্থ হলেও চাকরি পাবেন কি না, আছে সেই দুশ্চিন্তাও। তিনি সুস্থ না হলে পুরো পরিবার যে অথই সাগরে পড়বে, সেই শঙ্কাও ভর করছে মনিরের ওপর।

সোমবার (২৬ আগস্ট) নিটোরে গিয়ে দেখা যায়, এই ইউনিটের ৫৬টি শয্যার সবকটিতেই ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুলির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হওয়ায় তাদের কারও পা কেটে ফেলা হয়েছে। কারও আবার পায়ে রড লাগানো হয়েছে। কারও গুলি লেগে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে হাড়।

‘একটা চাকরি দেন, নইলে পুরো পরিবার না খেয়ে মরবো’

তাদেরই একজন মনির হোসেন। গুলিতে দুই পায়ের হাড় ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে গেছে। হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। রিং লাগানো হয়েছে দুই পায়েই। কয়েকবার অস্ত্রোপচার হলেও এখনো শঙ্কা কাটেনি।

মনিরের সংসারে ছয়জন সদস্য। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনিই। একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে স্বল্প আয় দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। নতুন সরকার নিত্যপণ্যের দাম কমাবে, সেই আশায় আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে অংশ নেন। মনিরের দাবি, ২০ জুলাই গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে করা গুলিতে তার দুই পা ঝাঁঝরা হয়ে যায়।

আহত মনির জাগো নিউজকে বলেন, ‘হেলিকপ্টার থেকে করা গুলি আমার দুই পায়ে লাগ। হাজার হাজার মানুষ আন্দোলনে ছিলাম। হেলিকপ্টার থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়া হয়। এখন আমার দুই পা অক্ষম। এই পা নিয়ে এখন আমি কী করবো? একটা পোশাক কারখানায় ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতাম। এরই মধ্যে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। বাড়িভাড়া দিতে পারিনি।’

কেন আন্দোলনে অংশ নিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মনির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে। আমরা কম বেতন দিয়ে চলতে পারি না। এজন্য ওই সরকারের পতন চেয়েছি যেন নতুন সরকার এসে দ্রব্যমূল্যের দাম কমায়। এখন আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। সরকারকে বলবো, আমাকে একটা চাকরি দেন, নইলে পুরো পরিবার না খেয়ে মরবো।’

এমওএস/ইএ/এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।