ভারতে পালানোর সময় বিচারপতি মানিক আটক
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে ভারতে পালানোর সময় আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাতে সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তাকে আটক করে বিজিবি।
বিজিবি সদরদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভারতে যাওয়ার প্রাক্কালে সীমান্ত থেকে বিজিবি সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করেছে। তার বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নানা সময় বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি।
এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে অবসরে যান। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টকশোতে কথা বলতেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় মানিকের নামে গত সোমবার নোয়াখালীর আদালতে মামলা হয়েছে। কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান পলাশ বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করেন।
একই অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে আইনজীবী মো. জিয়াউল হক বাদী হয়ে আরেকটি মামলার আবেদন করেন। আদালত অভিযোগটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা। আত্মগোপনের তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের কোনো মন্ত্রীকে গ্রেফতারের খবর প্রথম আসে ১৩ আগস্ট। সেদিন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
১৪ আগস্ট সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু; সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
১৬ আগস্ট রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়ি থেকে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
১৬ আগস্ট রাতে সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকেও গ্রেফতার করা হয়। জিয়াউল আহসান সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। তাকে নিউমার্কেট থানার হকার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
১৯ আগস্ট সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মুদিদোকানি আবু সায়েদকে গুলি করে হত্যার মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
২০ আগস্ট রাতে কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য কথিত ইয়াবা গডফাদার আবদুর রহমান বদিকে গ্রেফতার করে র্যাব। কক্সবাজারের টেকনাফে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
পরদিন ২১ আগস্ট ভোরে ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে একাত্তর টিভির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধান প্রতিবেদক-উপস্থাপক ফারজানা রুপাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
২২ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকেও নিউমার্কেট হওয়া একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
সর্বশেষ ২৩ আগস্ট জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও আটবারের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
টিটি/ইএ