এনআইডি সেবা বন্ধ
প্রকল্প থেকে রাজস্বকরণের দাবিতে চলছে কর্মবিরতি
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগের আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেসের (আইডিইএ)-২ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দুই দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। এতে সারাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
নির্বাচন পরিচালনা থেকে শুরু করে এনআইডির সব সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এ প্রকল্পের (আইডিইএ) জনবল ব্যবহার করতে হয়। এর কারণ হলো নির্বাচন কমিশন-ইসির নিজস্ব যা জনবল রয়েছে তা দিয়ে নাগরিকদের পুরোপুরি সেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। এখন আইডিয়া প্রকল্পের ২ হাজার ২৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে কর্মবিরতিতে চলে গেছেন। ফলে এনআইডির সব সেবা বন্ধ।প্রকল্পের আওতায় কর্মরত সব কর্মচারী রাজস্বকরণের দাবি জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাতে এক বৈঠক থেকে এমন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় প্রকল্পের কর্মচাররীরা। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃষ্টিতে ভিজে ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
প্রকল্পের কর্মচারীদের দেওয়া দু-দফা কর্মসূচি হলো, এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা। দ্বিতীয়ত, আইডিইএ প্রকল্পের সব আউট সোর্সিংয়ে কর্মরতদের চাকরি রাজস্বে স্থানান্তর।
প্রকল্পের কর্মচারীরা জানান, আইডিইএ প্রজেক্টের দুই হাজার ২৬০ জন লোকবল রয়েছে। এদের মাধ্যমেই এনআইডির যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন। এই কর্মসূচি কেবল ঢাকার নির্বাচন ভবনে নয়, সারাদেশের সব নির্বাচন কার্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন হচ্ছে। আইডিয়া-২ প্রজেক্ট’র ৯ গ্রেড থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন এই কর্মসূচি।
আইডিএ-২ প্রকল্পের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল আমরা ঢাকার হেড অফিসে যারা কর্মরত আছি থানা নির্বাচন অফিসে যারা ছিল সম্মিলিতভাবে আমরা বৈঠক করেছি। নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সামনে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই কর্তৃপক্ষকে আর সুযোগ দেওয়া হবে না।
নির্বাচন কমিশন কোনো আশ্বাস দিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু দেশ একটা সংস্কারের পথে আছে। আমাদের নতুন যে কমিশন গঠন হবে তারা যেন আমাদের স্থায়ীকরণের বিষয়টা দেখে।
এনআইডি কার্যক্রম কতদিন বন্ধ রাখবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজে ফিরবো না। সারা বাংলাদেশে এনআইডি সেবা বন্ধ আছে।
আইডিএ প্রকল্পের সহকারী প্রোগামার রুবেল চন্দ মজুমদার বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে। আজকে শুরু করছি কখন শেষ হবে এটা আমরা বলতে পারবো না। কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিলে আমরা এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অতীতের মতো টালবাহানা করছে। তারা আইনের ফাঁকফোকড় দেখাচ্ছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবো।
এদিকে, এনআইডি অনুবিভাগ ইসি থেকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন নেওয়ার জন্য স্বতন্ত্র একটি আইন প্রণয়ন করে সরকার। তবে সেখানে বলা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে কার্যক্রম না নেবে ততদিন পর্যন্ত তা ইসির অধীনেই থাকবে। সরকার আইনটি করার সময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা এনআইডি ইসির অধীনে রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, যেহেতু ভোটার তালিকারভিত্তিতে এনআইডি সরবরাহ করা হয়, সেহেতু ইসির অধীনে এই কার্যক্রম থাকাই নিরাপদ। এছাড়া ইসির এই কার্যক্রমের জন্য রয়েছে দেড় যুগের দক্ষতা, অবকাঠামো। নতুন করে অন্য কোনো দপ্তরের অধীন নিলে নতুন করে লোকবল, অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এতে রাষ্ট্রের ব্যয় ও নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়বে।
এমওএস/এসএনআর/এএসএম