মামুন-হারুনসহ ১৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিএনপির মামলা
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক গোয়েন্দা প্রধান মো. হারুন অর রশীদসহ ১৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুইটি মামলার আবেদন করেছে বিএনপি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে এবং দুই বছর আগে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের নামে লুটপাট ও ডাকাতির অভিযোগে মামলা দুইটি করা হয়।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে পল্টন মডেল থানায় বিএনপির ‘মামলা তথ্য ও সংরক্ষণ’ বিষয়ক কর্মকর্তা সালাহ উদ্দীন খান বাদী হয়ে দুইটি মামলার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগগুলো গ্রহণ করেছেন পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেন্টু মিয়া।
সালাহ উদ্দীন খান বলেন, ‘আপনারা জানেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ অফিসাররা অনেক মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, হয়রানি করেছেন, আমাদের গুম করেছেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের একটি ঘটনা নিয়ে এসেছি। হারুন অর রশীদ, মেহেদি হাসান, বিপ্লব কুমার সরকার এরা আমাদের অফিসের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে অফিসের সব মালামাল নিয়ে যায়। প্রায় ৪৭ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতি করেছে। আর তিন লাখ ৫০ টাকার মালামাল নষ্ট করেছে। সেই সংক্রান্ত একটা মামলার অভিযোগ আজ আমরা এখানে এফআইআর জমা দিয়েছি।’
আরও পড়ুন
- আইজিপির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো আবদুল্লাহ মামুনকে
- সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন এখন কোথায়?
- এবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলার আবেদন
বিএনপির মামলা তথ্য ও সংরক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, ‘দ্বিতীয়টা গত ১৬ জুলাই। সেদিন ডিবির হারুন অর রশীদ, ডিএমপির মেহেদি হাসান, বিপ্লব কুমার সরকার এরা অস্ত্র তৈরি করার হাতিয়ারসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কক্ষে রাখে, তৃতীয় তলায় অবৈধ বোমা রাখে। একটা নাটক সাজিয়ে তারা বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। এই যে তারা (পুলিশ কর্মকর্তারা) অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমা রাখলো, কার্যালয়ের বাইরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভয়ভীতি দেখালো, তার একটি অভিযোগ নিয়ে আমরা এসেছি। আমরা ডিউটি অফিসার এসআই মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে ওসি সেন্টু মিয়া অভিযোগগুলো গ্রহণ করেছেন। মামলা নম্বর ১ এবং ২ ।’
মামলার বিবাদীরা হলেন সদ্য সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ, রেজাউল আলম, হাফিজ আক্তার, আসাদুজ্জামান, যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) খোন্দকার নুরন্নবী, সঞ্জিত কুমার রায়, বিপ্লব কুমার সরকার, মেহেদি হাসান, উপকমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) তারিক বিন রশিদ, উপকমিশনার (মতিঝিল জোন) হায়াতুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত উপকমিশনার (সোয়াট টিম) জাহিদুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (মতিঝিল জোন) গোলাম রুহানী, পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিন মিয়া ও একই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান।
ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ প্রবেশ করে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। ডাকাতি যাওয়া মালামালের মূল্য ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং এতে ক্ষতির পরিমাণ দেওয়া হয়েছে তিন লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। এই অভিযোগ পুলিশ প্রধানসহ ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়।
আরেকটি অভিযোগে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন সাদা পোশাকে নয়াপল্টনের অফিসে প্রবেশ করে এবং বাইরে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা অস্ত্র-গোলাবারুদ, বাঁশের লাঠিসোঁটা, রড ও পিস্তল নিয়ে মহড়া দেয়। তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তছনছ করে অবৈধ অস্ত্র-সস্ত্র রেখে দেয়। তারা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ মহানগর নেতাদের আসামি করে মিথ্যা মামলা করে।
মামলায় হারুন অর রশীদ ছাড়াও ডিএমপির ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন উপকমিশনার মো. মহিদ কবির সেরনিয়াবাত, অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আফসার উদ্দিন খান, সাইফুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ কমিশনার এরশাদুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) কবির হোসেন চৌধুরী, এসআই মনিরুজ্জামান, নুরুল ইসলাম, ফরমান আলী, এএসআই স্বপন মিয়া, রেজাউল করীম, এরশাদ আলী, রবিউল ইসলাম, ইব্রাহিম শেখ, কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম, খোরশেদ আলম ও মেহেদি হাসান মাসুদ।
অভিযোগ দেওয়ার সময়ে সাবেক ছাত্রনেতা শরীফুল ইসলাম শাওন, তারেক আহমেদ ও মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ৬ আগস্ট রাতে আইজিপি পদ থেকে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে সরকারের সম্পাদিত চুক্তিপত্রের অনুচ্ছেদ-৭ অনুযায়ী পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হলো।
২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ৩১তম আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। এরপর ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে তাকে ২০২৪ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত আইজিপি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ৫ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আইজিপি হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আরও এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এক মাসের মাথায় সেই নিয়োগ বাতিল করা হলো।
এদিকে জুলাই মাসের শেষদিকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে ডিবি থেকে ডিএমপি সদরদপ্তরের ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগে বদলি করা হয়।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর থেকে এই পুলিশ কর্মকর্তার কোনো সাক্ষাৎ মেলেনি।
জানা গেছে, ওই দিন বিকেলে হারুনসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা মাস্ক পরে পুলিশ সদরদপ্তরের দেওয়াল টপকে নগর ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর সেখান থেকে তারা সিভিলে পালিয়ে যান।
কেএইচ/ইএ/এমএমএআর/এমএস