‘বাবা রেমিট্যান্স পাঠায়, দেশ তাকে দিয়েছে আমার ভাইয়ের লাশ’
‘আমাদের দুই বোনের একমাত্র ভাই ছিল। আমার বাবা একজন রেমিট্যান্সযোদ্ধা। ৫ আগস্ট আমার ভাইকে গাজীপুর আনসার একাডেমির সামনে গুলি করে বুক ঝাঁঝরা করে হত্যা করা হয়। আমার মা পাগলপ্রায়। মা দুপুরে ভাত বেড়ে রেখেছিল, আবদুল্লাহ এসে ভাত খাবে। কিন্তু তার কাছে পৌঁছাল ছেলের লাশ। আমার বাবা মাসে মাসে রেমিট্যান্স পাঠায়, কিন্তু এই দেশ তাকে উপহার দিয়েছে আমার ভাইয়ের লাশ।’
বুধবার (১৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন থেকে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আব্দুল্লাহ আল মামুনের বোন। ‘গণহত্যায় জড়িত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের অবিলম্বে বিচারের দাবিতে’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে শহীদদের পরিবারের সদস্য ও নিপীড়িত ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়’র মা। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে যখন গুলি খেয়েছে তখন আমি রংপুরে আন্দোলনকারীদের সাহায্য করছি। মারা যাওয়া লোকগুলোর জন্য আমি কেঁদেছি। কিন্তু যখন শুনলাম, আমার ছেলে গুলি খেয়েছে কিন্তু তার লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে যখন তার লাশ পাওয়া গেলো, তখন থেকে আমি আর কাঁদতে পারিনি। যারা মারা গেছে তাদের জন্য আমরা দোয়া করবো। কিন্তু এখন যেটা সব থেকে বেশি জরুরি সেটা হলো যারা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে তাদের জন্য এগিয়ে যাওয়া। আমার যদি সামর্থ্য থাকতো, আমার এই অসুস্থ সন্তানদের চিকিৎসার ভার আমি নিতাম।’
মানববন্ধন থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যরা ৭টি দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে-
>> গণহত্যার হুকুমদাতা শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার করতে হবে।
>> ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের মধ্যে যারা গণহত্যায় জড়িত, এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে এবং সরকারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে, তাদের সবাইকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।
আরও পড়ুন
- জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে
- ১৭ জুলাই সাঈদের ছবি পোস্ট, দুদিন পর নিজেই গুলিতে নিহত হন মামুন
>> গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা হামলা ও হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত ছিল, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
>> শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশসহ তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা সরকারিভাবে করতে হবে।
>> আন্দোলনে শহীদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় বীরের মর্যাদা দিতে হবে।
>> বৈষম্য প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর (আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগের) গুণগত পরিবর্তন করতে হবে।
>> জাতিসংঘের অধীনে গণহত্যার তদন্ত করে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।
এমএইচএ/ইএ/এমএস