অধিকাংশ সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই, বিশৃঙ্খলা-ভোগান্তিও কমেনি
ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর থেকে কর্মবিরতিতে রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এতে কার্যত ভেঙে পড়ে পুরো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সেই নড়বড়ে অবস্থা এখনো চলছে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে। যদিও এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের কিছু অঞ্চলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এখনো অধিকাংশ সড়কে নেই ট্রাফিক পুলিশ। এতে যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি বেড়েছে জনভোগান্তি।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজধানীজুড়ে ষষ্ঠ দিনের মত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। তবে এ কাজে তাদের দক্ষতা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সড়কে বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তি কমছে না বলে জানিয়েছেন পথচারী ও গাড়ি চালকেরা। যদিও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের ভূমিকার প্রশংসাও করছেন তারা।
রোববার (১১ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মগবাজারে ওয়্যারলেস মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। এসময় দায়িত্ব পালন নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।
জানতে চাইলে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আজান জাগো নিউজকে বলেন, নির্দেশনা ছিল সড়কে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু এখানে সকাল থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও আসছে। এতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ঝামেলা হচ্ছে। যদিও পরে তা ঠিক হয়ে গেছে।
- আরও পড়ুন
- ৬ দিন পর সীমিত পরিসরে সড়কে ফিরলো ট্রাফিক পুলিশ
- পুরান ঢাকার সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা
পরিবহন চালক ও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। পাঁচ জনে পাঁচ রকম সিগন্যাল দিচ্ছেন। যেখানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পাঁচজন প্রয়োজন সেখানে ১৫ জন নেমে পড়ছেন। সড়কে কয়েক মিটার পর পর ৩-৪ জন দাঁড়িয়ে সিগন্যাল দিচ্ছেন। এতে যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
ওয়্যারলেস মোড়ে কথা হয় লাব্বাইক পরিবহন বাসের চালক রাশেদের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ওয়্যারলেস মোড়ে কখনো ট্রাফিক ছিল না। এখানে ট্রাফিকের দরকার হয় না। গত কয়েকদিন ধরে ফ্লাইওভারের মুখ থেকে শুরু করে মৌচাক মোড় পর্যন্ত সড়কে অনেক শিক্ষার্থী। যেখানে তিন-চারজন থাকলেই যথেষ্ট, সেখানে ১৫-২০ জন নেমে পড়ছেন। যাত্রী নামানো-উঠানোর জন্যও তারা সময় দিচ্ছেন না।
সিএনজি অটোরিকশাচালক সুমির বলেন, সিএনজি অটোরিকশার পেছনে লাঠি দিয়ে বাড়ি মারে। আমরা তো স্ট্যান্ড ছাড়া যাত্রী পাই না। কোনো মোড়ে দাঁড়াতে দেয় না।
মালিবাগে আবুল হোটেল মোড়ে কথা হয় অটোরিকশাচালক জহিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সড়কে অনেক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। শিক্ষার্থীরা একটা জায়গায় থামিয়ে ছেড়ে দিলে দুই মিনিট না চলতেই অন্যরা এসে গাড়ি থামায়। শান্তিনগর থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত আসতে পাঁচবার তল্লাশি করা হয়েছে।
সেই অটোরিকশায় থাকা যাত্রী অপু জানান, দেশের এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে কিছুক্ষণ পর পর যেভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে সেটা ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। এতে ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে ৪০ মিনিট লাগছে।
- আরও পড়ুন
- বৃহস্পতিবারের মধ্যে যোগ না দিলে পুলিশ সদস্যদের চাকরি থাকবে না
- ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে তাক লাগিয়ে দিলেন ছাত্ররা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন সার্জেন্ট জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের থানাগুলোতে এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম শুরু হয়নি। থানায় পর্যাপ্ত গাড়িও নেই। এ অবস্থায় আমরা ডিউটি করতে পারি না। সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমরা রাস্তায় ফিরবো।
তিনি বলেন, আমরা শুনছি রাস্তায় শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পালন করছেন। এটি ভালো কাজ। তবে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় কিছু কিছু জায়গায় ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, রোভার স্কাউট এবং রেড ক্রিসেন্টের দায়িত্ব পালন করা উচিত। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় দক্ষভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ফলে বিশৃঙ্খলা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
কর্মবিরতিতে থাকায় পুলিশ সদস্যরা আগামী বৃহস্পতিবারের (১৫ আগস্ট) মধ্যে কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। প্রথম কর্মদিবসে রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
আরএএস/এমকেআর/জিকেএস