‘ইন্টারনেট বন্ধ করা ঠিক হয়নি, নেতিবাচক তথ্য বিদেশে গেছে’

ইসমাইল হোসাইন রাসেল
ইসমাইল হোসাইন রাসেল ইসমাইল হোসাইন রাসেল
প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ০৩ আগস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিদেশে খুব নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে। অনেকেই বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন। ইন্টারনেট বন্ধের ‘ভুল’ সিদ্ধান্তের ফলে নেতিবাচক জিনিসগুলো বিদেশে গেছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তার মতে, ইন্টারনেট বন্ধ করা ঠিক হয়নি। ইদানীং লুকালেই মানুষের সন্দেহ বাড়ে, গুজব সত্যি বলে মনে হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হতাহত ও গ্রেফতারের ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের উদ্বেগসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন মোমেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক ইসমাইল হোসাইন রাসেল

জাগো নিউজ: ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক বিবৃতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হতাহত ও গ্রেফতারের ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইইউর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। একই সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। লাওসে আপনার সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে কথা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কী আলাপ হয়েছে তার সঙ্গে?

এ কে আব্দুল মোমেন: জোসেফ বোরেল আমার পুরোনো বন্ধু। তার সঙ্গে আলাপ হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) সম্মেলনে। আমি লাওসে ছিলাম, সেখানে এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তিনি আমাকে দুইটি উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সামান্য একটা কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এত লোক কেন মারা গেলো?’ আমি তাকে বললাম, ছেলেরা যারা কোটা সংস্কার চাচ্ছে সরকারও তা চাচ্ছে। কিন্তু এটি নিয়ে আমাদের কোর্টের একটা শুনানির সময় ছিল, সেই সময়ের মাঝেই অনেক লোক মারা গেছে। কে মেরেছে আমি জানি না। পুলিশ মেরেছে বা অন্য কেউ মারতেও পারে। তিনি এটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে এত লোক মারা গেছেন। আমি বলেছি, আমরা একটি তদন্ত করবো। দেখবো আসলে কয়জন মারা গেছে এবং কীভাবে মারা গেলো।

বিদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়টির খুব নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে। অনেকেই বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন। ইন্টারনেট বন্ধের ‘ভুল’ সিদ্ধান্তে নেতিবাচক জিনিসগুলো বিদেশে গেছে। ইদানীং লুকালেই মানুষের সন্দেহ বাড়ে, গুজব সত্যি বলে মনে হয়।- ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দ্বিতীয়ত যে বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেটা হলো তিনি বলেছেন, তোমাদের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে ‘শুট অ্যাট সাইট’ তো বড় কঠিন। গণতান্ত্রিক দেশে তো এইগুলো...। জবাবে আমি বলেছি, এটা কেউ বলেছে হয়তো, কিন্তু আমাদের দেশে এভাবে কোনোদিন মারেনি। পাকিস্তানিরাই মেরেছিল আর কেউ মারেনি। তিনি বলেন, দেখেন এভিডেন্স (প্রমাণ) ছাড়া অন্য লোককে গ্রেফতার করে হয়রানি করার বিষয়ে আমরা সতর্ক। সব মিলিয়ে আমার সঙ্গে তার খুব ভালো আলাপ হয়েছে।

 

জাগো নিউজ: এই বিবৃতির একদিন পরই বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি আলোচনা স্থগিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এটি কীভাবে দেখছেন?

এ কে আব্দুল মোমেন: গণমাধ্যমে দেখলাম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আলোচনাটা আপাতত স্থগিত রেখেছে। এখন পশ্চিমা দেশগুলো এশিয়া প্যাসিফিকে যথেষ্ট জোর দিচ্ছেন। এখানে তারা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক, বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার জন্য তারাই কিন্তু এগিয়ে আসছে। তারা চায় এখানে তারা আমাদের তাদের গুডবুকে রাখবে। আমি ছিলাম যখন ব্রাসেলসে এই চুক্তিটি সই করি যে তারা আমাদের কয়েক মিলিয়ন ডলার দেবে। আর তারা আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করবে।

বিদেশে আমাদের যে কোটা সংস্কারের আন্দোলন, এটির খুব নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে, অসম্ভব নেতিবাচক। বানোয়াট তথ্য দিয়েছে অনেকেই। যেহেতু আমাদের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, এরকম ভুল সিদ্ধান্তের ফলে নেতিবাচক জিনিসগুলো বিদেশে গেছে। আর অনেকে দেখতেও পারে নাই, ফলে সত্যটাও জানে না। কারণ নেতিবাচকভাবে ‘নেত্রী পালিয়ে গেছেন’, ‘দিল্লিতে মিটিং করছেন’, কতো রকমের হইচই। এই সবই হয়েছে ইন্টারনেট বন্ধের কারণে। কারণ দুষ্টু লোক ঠিকই বিভিন্ন মাধ্যমে সব নেতিবাচক জিনিসগুলো যার মধ্যে কিছু বানোয়াট এমনকি ঘরে ঘরে গিয়ে লোক বের করে নিয়ে এসেছে।

আমার তো ধারণা তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিয়েছে। সে জন্য আমার মনে হয় এত লোক যে মারা গেছে, কিন্তু পুলিশ মেরেছে কি না সেটি নিয়ে আমার সন্দেহ হয়। -ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জাগো নিউজ: সেক্ষেত্রে ইন্টারনেট থাকলে এ ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা ঠেকানো যেত বলে মনে করেন কি?

এ কে এ মোমেন: অবশ্যই সুবিধা হতো। আমার ব্যক্তিগত ধারণা সুবিধা হতো। এটা বন্ধ করা ঠিক হয়নি। তবে এটি নিয়ে ডিবেট হতে পারে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা এটা, ইদানিং লুকালেই বরং মানুষের সন্দেহ বাড়ে, রিউমার (গুজব) সত্যি বলে মনে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে আলোচনাটা স্থগিত করেছে সেটি হয়তো আপাতত পরিস্থিতির জন্য, এটি নিয়ে আমাদের খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নাই। যে জিনিসটা সবচেয়ে দরকার সেটি হচ্ছে আসলেই যে এতগুলো ছেলেমেয়ে মারা গেলো, এর একটা ভালো ইনভেস্টিগেশন (তদন্ত) হওয়া উচিত। এতগুলো মরবে কেন? আমার মনে হয় সিকিউরিটি প্রসেসগুলোর রুলস অব অ্যানগেইজমেন্ট সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি।

আরেকটি জিনিস আমাদের খুব দরকার। স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে এগুলো ঢোকানো দরকার যে দেশের সম্পদ অকারণে নষ্ট করার মন মানসিকতা থেকে বের হতে হবে। আমেরিকার কলম্বিয়া, অক্সফোর্ডসহ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে আন্দোলন হয়। সেখানে পুলিশ খুব অত্যাচার ও অসম্ভব শক্তি প্রয়োগ করে লোকগুলোকে গ্রেফতার করেছে। নাকের মধ্যে মরিচের গুড়া দিয়েছে কিন্তু গুলি করে না। কিন্তু আমাদের দেশে হয় দূর থেকে তাকিয়ে দেখে, না হয় গুলি করে। এই অবস্থানের পরিবর্তন করা দরকার।

জাগো নিউজ: আপনি একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, সেখানে আপনি ক্যাপশনে উল্লেখ করেছেন পুলিশ না থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ আসা গুলিতে একজন মারা গেছেন। গুলিটি কে করেছে সেটি নিয়ে আপনি প্রশ্নও তুলেছেন।

এ কে আব্দুল মোমেন: ভিডিওটি আমার কাছে পাঠিয়েছেন আমার একজন ভক্ত। সেটা দেখে আমি তাজ্জব। সেখানে তিনি যেটা বলেছেন এবং আমি নিজেও দেখলাম পুলিশ দূরে চলে গেছে। তখনও আন্দোলনকারীরা ইট-পাটকেল মারছে। পুলিশ কিন্তু তখন সরে যাচ্ছে। তখন হঠাৎ একটি গুলির শব্দ হলো, সঙ্গে সঙ্গে একজন পড়ে গেলো। আমার তো ধারণা তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিয়েছে। সে জন্য আমার মনে হয় এত লোক যে মারা গেছে, কিন্তু পুলিশ মেরেছে কি না সেটি নিয়ে আমার সন্দেহ হয়।

আইএইচআর/এসএনআর/এমএমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।