মিথ্যাচার করে রাষ্ট্র পরিচালনা জনগণ বুঝে গেছে: ড. ইফতেখারুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৯ এএম, ০২ আগস্ট ২০২৪

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব প্রতিষ্ঠান মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিটি ফোর্সই প্রতিটি বিষয়ে জনগণকে মূর্খ মনে করেছে। প্রতিটি কথায় তারা নিজেরাই মূর্খের পরিচয় দিয়েছে, সেটা তারা ভুলে গেছে। মিথ্যাচার করে সরকার পরিচালনা, রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সরে আসতে হবে। মিথ্যাচার দেশের জনগণ বুঝে গেছে।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেল ৩টায় ডিএমপির গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক মানবন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জবাবদিহিবিহীন ক্ষমতার ঊর্ধ্বে অবস্থান করে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নামে যে সংস্থাগুলো কাজ করছে, এমনই একটি প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা আজ কথা বলছি। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে, প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। মূর্খতা ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে যে কাজগুলো তারা করেছে তাতে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আইনের লঙ্ঘন করেছে।

তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পেশাগত উৎকর্ষতার কথা তারা বলে থাকেন। পেশাগত প্রশিক্ষণের বাইরে গিয়ে তারা আমাদের প্রতারিত করার চেষ্টা করেছেন। তাদের মানদণ্ডে দেশবাসীকে বিচার করার কোনো সুযোগ নেই। আমি বলবো, তারা এটা করতে পেরেছে এই কারণে তাদের মধ্যে একটি ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, শুধু এই ছয়জনকে আটকের বিষয়টি না। সার্বিকভাবে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, এর মূল বিষয়টা হলো দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা নিজেরা ধারণা সৃষ্টি করেছে, তারা বিচারহীনতা চিরদিন উপভোগ করতে পারবে।

jagonews24

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ছাত্রদের সম্পূর্ণ যৌক্তিক ও নৈতিকতায় বলীয়ান যে দাবি যেটি সরকারও ঘোষণা করেছে। সেই আন্দোলনে নির্বিচারে অত্যাচার করেছে। সেটার জন্য তারা লেলিয়ে দিয়েছে তাদের মদতপুষ্ট সংস্থাগুলো ও ছাত্র সংগঠনকে।

অর্থনীতিবিদ ও জননীতি বিশ্লেষক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিনা বিচারে ছেড়ে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছিল। শুনেছি কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের ছেড়ে দিয়েছে। তাদের মুক্তি হয়েছে এতে আমরা খুশি। কিন্তু এখনো অনেক ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ জনগণ বিনা বিচারে আটকে আছে, সেজন্য আমরা সন্তুষ্ট নই।

তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যে যেখানে আটক আছে বিনা বিচারে কোনো ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা ছাড়া তাদের সবাইকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এটা আমাদের প্রধান দাবি। দ্বিতীয় দাবি, এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত যেভাবে দেশের নিরপরাধ মানুষ মারা গেছেন, তাদের সবার বিচার করতে হবে। এই বিচারের জন্য জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে। স্কুল-কলেজ খুলে দিতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে। দেশে ইন্টারনেটের অবাধ সুস্থ ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে আইন সুরক্ষার পরিবেশ দ্রুত সৃষ্টি না করা হলে, এটা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আপনারা বলেছেন এই ঘটনার ফলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি। ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে সরকারের। আমার ট্যাক্সের টাকায় বন্দুক কেনা হয়েছে। আমার ট্যাক্সের টাকায় গুলি কেনা হয়েছে। আমার ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি ও বন্দুক দিয়ে মানুষ মারার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। এটা কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ডিবির কাছে থাকলে নাকি নিরাপত্তাবোধ করে। আসলে আমাদের নিরাপত্তার সংজ্ঞাটা দেবেন? আমরা সংবিধানে তুলে দেবো! শিক্ষার্থীদের হেফাজতে রাখার আইনি সংজ্ঞাটা কী? শিক্ষার্থীদের আটকে রাখার ক্ষমতা কোথায় দেওয়া হয়েছে? সংবিধানের কোনো আইনে আটকে রাখার কথা বলা হয়েছে?

jagonews24

তিনি বলেন, আমরা এখানে আসার আগে ছয়জন সমন্বয়ককে ছেড়ে দিয়েছেন বলে শুনেছি। আমরা এখনো জানি না তারা পরিবারের কাছে গিয়েছেন কি না। যে ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তারা যেন মুক্ত পরিবেশে কাজ করতে পারেন। তাদের বাসায় প্রহরায় কাউকে রাখবেন না।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরীন হক, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের্ অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী, সরকারি সংস্থা উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ নূর ও সদস্য রুমি প্রভা প্রমুখ।

টিটি/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।