আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধু সন্ত্রাসীদের ওপরে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৫৭ পিএম, ০১ আগস্ট ২০২৪

আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধু সন্ত্রাসীদের ওপরে, নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের ওপর নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।

মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধু সন্ত্রাসীদের ওপরে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণসাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের ওপরে আইনের প্রয়োগ ঘটবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে। কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী যেন হয়রানির শিকার না হয়, এটি আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি।

পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে ছিল, স্লোগান দিয়েছে, পানি বিতরণ করেছে তাদেরও যেন হয়রানি করা না হয়। তাদের পরিবারের কোনো সদস্য যাতে কোনোভাবে নাজেহাল না হয়। কারণ সব শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। এর সঙ্গে আমাদের পুরো সমবেদনা ও সমর্থন আছে। কিন্তু তাদের আবেগকে পুঁজি করে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী নয়। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, শিক্ষার্থী যারা তাদের আবেগ নিয়ে আন্দোলনে ছিলেন, কোনোভাবে যাতে একটি শিক্ষার্থীও নাজেহাল না হয় আর সন্ত্রাসীদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়গুলো সরকারের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং আমি বহুবার গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং প্রতিটি হতাহতের ঘটনার জন্য নিন্দা জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ১৬ জুলাই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ ঘোষণা দিয়েছিলেন একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করবেন এবং এটি গঠিত হয়েছে। স্বাধীন বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে প্রতিটি হতাহতের ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আমরা বিদেশি এক্সপার্টেরও সহায়তা নেবো। এখানে আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতায় থাকতে চাই।

তিনি আর বলেন, হতাহতের ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যারা পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তাদের অনেকের সঙ্গে গণভবনে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন। সে সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। তাদের সঙ্গে আমারও আলাদাভাবে কথা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আমরা কোনো কিছু চাই না, বিচার চাই।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি মৃত্যুর জন্য আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি দেশ ও দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। হয়তো কোনো একটি তৃতীয়পক্ষ এটার সুবিধা নিচ্ছে। আর এ মৃত্যু নিয়ে প্রথম থেকেই অপপ্রচার করা হচ্ছে। এ ক্ষতির যেমন আপনারা একটা অংশ আমরাও একটা অংশ। আপনারা যেমন এটার বিচার চান আমরাও এটার বিচার চাই। একই সঙ্গে প্রতিটি দায়ী ব্যক্তিকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করবো। একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য ছিল না। প্রতিটি মৃত্যু আমাদের বুকের ওপরে ভারি হয়ে আটকে আছে। এ মৃত্যু এবং হতাহতের ঘটনার জন্য সরকার দুঃখিত।

তিনি বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন ছিল। সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছে। তাদের মধ্যে ঢুকে তৃতীয়পক্ষ যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে তাদের ওপরে আইনের প্রয়োগ করতে গিয়ে জটিল অবস্থায় পড়তে হয়েছে।

এখনো যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করছে তাদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা আবেগ রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের খেয়াল করতে হবে, এরই মধ্যে আমরা অপব্যবহার দেখেছি সন্ত্রাসী ও তৃতীয়পক্ষ দ্বারা। আবার সন্ত্রাসীরা যদি এটাকে সুযোগ হিসেবে নেয়, আবার তারা যদি হতাহতের, সংঘাতের অবস্থা তৈরি করে, তার দায় কে নেবে? এখানে শিক্ষার্থীদের একটা দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কারণ তৃতীয়পক্ষ বসে আছে দেশকে অরাজক পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকেই গুলি করার কোনো অনুমতি ছিল না। সংবিধান এবং আইনের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়েছে। তাই বলে আমি এটাও অস্বীকার করছি না, ক্ষেত্রবিশেষে কেউ কেউ, মাঠে আইন ভাঙেনি। আমরা এটা তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনবো। পুরো পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। সরকারের দায়িত্ব হলো যারা আইন ভেঙেছে, অন্যায় করেছে, সে যেই হোক তাদের তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করবো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সবার প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন ছয়টি জীবন চলে গেলো। উনি নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় দাবি পূরণে শিক্ষার্থীরা হতাশ হবেন না। আইনি প্রক্রিয়ায় যে রায় এসেছে, তারা হতাশ হয়নি। জুডিসিয়াল কমিশন ঘোষণা দিয়েছিলেন, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী রেখেছেন, সেটি তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৃতীয়পক্ষ অনুপ্রবেশ করে যে তারা পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে, সে জন্য তিনি তার উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে এবং সবার প্রতি আহ্বান জানালেন আপনারা সাবধানে থাকবেন। ১৬ জুলাই এর পর আমরা যদি একটু ধৈর্য ধরতাম, একটু সাবধানে থাকতাম তাহলে তৃতীয়পক্ষ সুযোগ পেতো না। ছয়জনের মৃত্যুর পর যে বাকি মৃত্যুগুলো হল এর দায় কে নেবে? কেন উসকানি দিয়ে এ পরিবেশ তৈরি করা হলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করে, গুজব ছড়িয়ে? সামনের দিনে যে কোনো ধরনের অশান্তি তৈরির জন্য যারা সুযোগ নিয়ে বসে আছে, আরও হতাহতের ঘটনা ঘটাতে চায় সেই জায়গায় আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে হবে। এ আহ্বান আমি জানাতে চাই।

তিনি আরও যোগ করেন, যারা সহিংসতা মারা গেছেন সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সব মৃত্যুর বিচার এ দেশ করবে, এ দেশের সরকার করবে এবং স্বাধীন বিচারবিভাগীয় কমিশনের মাধ্যমে করবে। প্রয়োজনে স্বচ্ছতার স্বার্থে বিদেশি অভিজ্ঞ ও পেশাদারদের সম্পৃক্ত করা হবে।

আইএইচআর/এমএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।