ঢামেকে ৯৩ ময়নাতদন্ত

কোটা আন্দোলনে নিহত বেশি যাত্রাবাড়ীতে, ১৩ জনের বয়স ১০-১৮

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০৮:৪৫ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২৪

কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গুলিবিদ্ধ ও আহত হন অনেকে। এদের অধিকাংশ চিকিৎসা নেন রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। এখন পর্যন্ত নিহতদের ৯৩ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জনের বয়স ১৮ বছরের মধ্যে। বেশি নিহত হয়েছেন যাত্রাবাড়ীর সংঘর্ষে।

ঢামেক মর্গের তথ্য বই অনুযায়ী, বিক্ষোভ-সংঘর্ষে হাসপাতালটিতে বেশি মৃত্যু হয়েছে শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষের। হাসপাতালের মর্গে থাকা সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢামেকের মর্গে এ পর্যন্ত ৯৩টি মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৮৮টি মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এদের মধ্যে ২৮ জন যাত্রাবাড়ী এলাকায়, সাতজন বাড্ডা, পাঁচজন রামপুরা, চারজন লালবাগ, তিনজন মহাখালী, তিনজন নিউমার্কেট ও ৩৮ জন বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষে নিহত হন।

নিহতদের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী তিনজন, ১১-১৮ বছর বয়সী ১১ জন, ১৯-৩০ বছর বয়সী সংখ্যা ৪৬ জন এবং ৩১ এর বেশি বয়সীর সংখ্যা ২৮ জন।

আরও পড়ুন

পেশা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নিহতদের ১৬ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন ব্যবসায়ী, ১৪ জন কর্মচারী, ৯ জন চাকরিজীবী, সাতজন অজ্ঞাতপরিচয়, সাতজন রিকশা ও ভ্যানচালক, পাঁচজন শ্রমিক, দুজন পুলিশ, দুজন সাংবাদিক, একজন আনসার, একজন ড্রাইভার ও অন্য পেশার ১০ জন আছেন।

নিহতদের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী ৩ জন, ১১-১৮ বয়সী ১১ জন, ১৯-৩০ বয়সী সংখ্যা ৪৬ এবং ৩১ এর বেশি বয়সীর সংখ্যা ২৮ জন

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহতদের কারও মাথায় গুলি, কারও হাতে-পায়ে, কারও বুকে-পেটে। আহতদের বেশিরভাগই ছিল গুলিবিদ্ধ। হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকরা কাউকে মৃত ঘোষণা করেছেন কাউকে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। কেউ কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে।

গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১৩ নম্বর বিআরটিএর সামনে গুলিবিদ্ধ হন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মামুন সর্দার। তার ভাই মুরাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বুলেট বুকের ভেতরে ঢুকে পিঠ ছিদ্র করে বের হয়ে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। ভাইকে মিরপুর-১০ নম্বরের আল হেলাল হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু কোথাও ভর্তি করতে পারিনি। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। রক্তক্ষরণ কোনোভাবে কমানো গেলে বাঁচানো যেত।’

ঢামেক মর্গের ইনচার্জ রামু সাহা জানান, গত ২২ জুলাই ৬৮টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, পরের দিন ৮টি অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২৪ জুলাই তিনজন, ২৫ জুলাই দুজন, ২৬ জুলাই দুজন, ২৭ জুলাই একজন ও ২৮ জুলাই একজনসহ হাসপাতালটিতে মোট ৯৩ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৫ জুলাই থেকে উত্তাল সারাদেশের শিক্ষাঙ্গন। ১৭ জুলাই থেকে আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়, যা ২০ জুলাই পর্যন্ত থেমে থেমে চলে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শেষ দিকে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর চালায়। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জারি করা হয় কারফিউ। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত এ আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে সারাদেশে ১৫০ জন নিহত হয়েছেন।

এসএম/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।