আন্দোলনকারীরা এত টাকা কোথায় পেলো, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ঘটিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সম্মান ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আন্দোলনকারীদের কারা অর্থ দিয়েছে সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এরা এত টাকা কোথা থেকে পায়? কোথা থেকে পেলো? প্রতিদিন তাদের আন্দোলনের খরচ, কে দিয়েছে সে টাকা?’
সোমবার (২৯ জুলাই) গণভবনে ছাত্রলীগের নেত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরে গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক হয়। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জোট নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মতবিনিময় সভা ও বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দিনরাত পরিশ্রম করে যে বাংলাদেশটাকে সম্মানের স্থানে নিয়ে এসেছিলাম, সেটাকে ধূলিসাৎ করে দিলো। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুঃখের।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করে এবং আমাকে খাটো করতে গিয়ে বাংলাদেশকে কোথায় টেনে নামালো সেটা একবার চিন্তা করে না। এদের মধ্যে যদি এতটুকু দেশপ্রেম থাকতো, দায়িত্ববোধ থাকতো- তাহলে এটা করতো না।’
আন্দোলনের ফসল হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেওয়া, এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের যেসব মৌলিক চাহিদা পূরণ করি সেগুলো নষ্ট করে দেওয়া, সেটাই করা হলো। এ আন্দোলনের ঘাড়ে চেপে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সুযোগ পেয়ে গেলো। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে অপরাধটা কী করলাম? মানুষের জীবনমান উন্নত করা? মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করা? চিকিৎসার ব্যবস্থা করা? বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিচ্ছি।’
আরও পড়ুন
- বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গিরা আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
- সমন্বয়কদের দেখতে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে যা বললেন সোহেল তাজ
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-মা সবাইকে হত্যা করেছে। তারপরেও সেই কষ্ট বুকে নিয়ে এসে (চেষ্টা করেছি) শুধুমাত্র এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, মানুষ একটু ভালো থাকবে। মানুষ উন্নত জীবন পাবে। মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয়ী জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি, সম্মানের সঙ্গে চলতে পারি। সে সম্মানটাতো আমি এনে দিয়েছি বাংলাদেশকে। এটাতো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আজ যেখানে যাবে বাংলাদেশ শুনলে সমীহ করে এবং মর্যাদার চোখে দেখে।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সৃষ্টি জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ দেশের ডিজিটাল সিস্টেম আমারই করে দেওয়া। হাতে হাতে মোবাইল ফোনের ব্যবস্থা তো আওয়ামী লীগ সরকারই করে দিয়েছে।
যেসব প্রতিষ্ঠান মানুষ ব্যবহার করে সুবিধা ভোগ করে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যে কাজগুলো করেছি সেগুলো একে একে তারা ধ্বংস করে দিলো। কার স্বার্থে তারা এটা করেছে সেটাই প্রশ্ন।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশন জটের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত, এমনকি আমরা সরকারে আসার পর পর্যন্ত প্রতিদিন বোমা, গুলি, মারপিট, লাশ, সেশনজট এই অবস্থা ছিলো। ১৯৯৬ সালের পরে আমরা শিক্ষা কার্যক্রমে যে রিফর্ম (সংস্কার) নিয়ে আসি তাতে আমাদের ডিগ্রিগুলো আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে।’
সাম্প্রতিক আন্দোলন রাজনৈতিক ইস্যুতে হয়নি বলে ১৪ দলের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সহিংসতার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ জঙ্গিবাদী কাজ। একেবারে জঙ্গিবাদী কাজ।’
আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে আনা সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা কোনো ইস্যু না। বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান মানুষকে সেবা দেয়, মানুষের জীবনমান উন্নতি করে- সেটাই ধ্বংস করা (নাশকতাকারীদের লক্ষ্য)। অর্থাৎ বাংলাদেশটাকে যেন ধ্বংস করে ফেলা।’
এসইউজে/কেএসআর/এএসএম