অনেক অপরাধ করেও লঘু দণ্ড পেলেন এসিল্যান্ড সামিন
সহকারী সচিব মো. সামিন সারোয়ার নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) থাকার সময় নানা ধরনের অনিয়ম ও অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু তিনি শাস্তি হিসেবে পেয়েছেন ‘দুই বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত’ রাখার লঘু দণ্ড। বিভাগীয় তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি তাকে এ শাস্তি দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সামিন বর্তমানে সহকারী কমিশনার পদে পদায়নের জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত রয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ মে সামিন সারোয়ারকে এসিল্যান্ডের পদ থেকে প্রত্যাহার করে পরবর্তী পদায়নের জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অবমুক্ত হওয়ার আদেশ জারির পরও নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে আটদিনের ছুটির জন্য বিধি বহির্ভূতভাবে সরাসরি আবেদন করেন তিনি।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমা তার (সামিন) বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ন্যায়সঙ্গত আদেশ অমান্য করা, অসহযোগিতা ও অসদাচরণের অভিযোগ দেন।
একই সঙ্গে সামিন সারোয়ারের বিরুদ্ধে খালিয়াজুরী উপজেলাধীন উদ্বোধন করা হেমনগর কান্দা আশ্রয়ণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের ‘ক’ শ্রেণির ২৬৫টি ঘরের কবুলিয়ত সম্পাদন না করা, ১নং মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর ট্রলারঘাট থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে খাস আদায়ের আদেশ দেওয়া, উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন ছাড়াই সায়রাত বহির্ভূত ছোট ফেনি ও কুলির দাইর নামক জলমহালগুলো থেকে খাস আদায়ের আদেশ দেওয়া, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে কর্মস্থল ত্যাগ করা, বন্দোবস্তপ্রাপ্ত স্বত্ব-দখলীয় জমিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে নবদ্বীপ শুক্লদাস নামের একজনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ডিসিআর প্রদান না করে বরং তার দুটি দোকান সিলগালা করার অভিযোগ ওঠে।
কোনো মামলা না থাকা সত্ত্বেও বংশানুক্রমিক স্বত্ব-দখলীয় জমিতে থাকা রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার নামের একজনের দুটি দোকান সিলগালা করে তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা বাবদ আদায় করেন সামিন সারোয়ার। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দুজনকে মোট ৬০ হাজার টাকা জরিমানা ও তাদের চারটি দোকান সিলগালা করেন তিনি। কিন্তু ওই মোবাইল কোর্ট মামলার ডিসিআর কপিতে ও আদেশপত্রে অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য লিপিবদ্ধ করে মাত্র একজন অপরাধীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় দেখিয়ে অবশিষ্ট ১০ হাজার টাকা নিজের কাছে সংরক্ষিত রাখেন সামিন সারোয়ার। জরিমানার অর্থ নিজ হেফাজতে রেখে দীর্ঘ ২৩ দিন পর চালানমূলে জমা দেওয়া ও চালানের কপিতে জরিমানার তারিখ প্রতারণামূলকভাবে পরিবর্তন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সামিন সারোয়ারকে শাস্তি দেওয়ার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ ও ‘দুর্নীতি পরায়ণতা’র অভিযোগে গত বছরের ১৩ আগস্ট বিভাগীয় মামলা হয়। এ বিষয়ে শুনানি হয়, নিয়োগ দেওয়া হয় তদন্ত কর্মকর্তা। গত ২৯ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তে সবগুলো অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী, তাকে আগামী ‘২ বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত’ রাখার লঘু দণ্ড দেওয়া হলো এবং তিনি দুই বছরের বর্ধিত বেতন কখনো পাবেন না। দুই বছর পার হওয়ার পর তৃতীয় বছর থেকে তিনি বর্ধিত বেতন পাবেন বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
আরএমএম/এমকেআর/এমএমএআর/জিকেএস