বনশ্রী পিবিআই অফিস
গেট ভেঙে হামলা-লুট, জীবন বাঁচাতে ছাদে ওঠেন পিবিআই সদস্যরা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে দক্ষিণ বনশ্রীর পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ অফিসে ১০০০/১২০০ জন দুষ্কৃতকারী ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
আগুনের লেলিহান শিখা এবং ধোঁয়ার কারণে পিবিআই অফিসে থাকা পুলিশ সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ভবনের ছাদে ওঠেন। এসময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা গিয়ে তাদের রক্ষা করেন। দুষ্কৃতকারীরা এসময় পিবিআই অফিসের ৭৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
গত ১৯ জুলাই এসব ঘটনা ঘটে বলে ২৩ জুলাই খিলগাঁও থানায় করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পিবিআইয়ের এসআই মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় আসামি করা হয় ১০০০/১২০০ জন অজ্ঞাতনামাকে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৭টি ধারাসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলী আইনের ৩/৪/৬ ধারা এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, খিলগাঁও থানার এসআই কাজী আশরাফুল হক জাগো নিউজকে বলেন, দক্ষিণ বনশ্রীর পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ ও এসআইঅ্যান্ডও দক্ষিণের অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা দিয়ে গেটের তালা-ছিটকিনি ভাঙা হয়
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯ জুলাই খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রীর পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ ও এসআইঅ্যান্ডও দক্ষিণের অফিসে ১০০০/১২০০ জন দুষ্কৃতকারী বেআইনি জনতাবন্ধে লাঠিসোঁটা, ককটেল ও মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে অত্র অফিসের সামনে রাস্তায় অবস্থান করে সরকারবিরোধী নানান রকম স্লোগান দিতে থাকে।
এসময় অফিসে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা একযোগে দুষ্কৃতকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে অফিসের মেইন গেট বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা দিয়ে গেটের তালা ও ছিটকিনি ভেঙে ফেলে এবং অনবরত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে। এসময় অফিসার ফোর্সরা সংখ্যায় কম ও নিরস্ত্র হওয়ার কারণে সশস্ত্র অপরাধীরা পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে।
জীবন রক্ষার্থে ছাদে ওঠেন পিবিআই সদস্যরা
মামলার এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, তখন আমি ও আমার সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স জীবন রক্ষার্থে ভবনের ছাদে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করি। সেই সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা ভবনের নিচতলায় গারেজে পার্কিংয়ে থাকা সরকারি ভারী যানবাহন ও মোটরসাইকেল এবং নিচতলার একটি কক্ষের দরজা ভেঙে সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত লুব্রিকেন্টসহ সরকারি জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন
ডিউটি অফিসারের এবং পাশের রুমের সোফা সেট এবং চেয়ারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ডিউটি অফিসারের এবং পাশের রুমের টেবিল, বুক শেলফ, টেলিভিশন, ফাইল কেবিনেট ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে। ডিউটি অফিসারের কেবিনেটে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্তকরণ মেশিন ভেঙে রাস্তায় জ্বালানো আগুনে পুড়িয়ে ডিউটি অফিসাবের পাশের রুমের দরজা ভেঙে রেশনের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
৭৫ লাখ টাকার মালামাল লুট
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, অফিসের বিভিন্ন তলার বিভিন্ন রুমের তালা ভেঙে টিভি, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, ইউপিএস, প্রিন্টার, সিপিইউ, সিসিটিভি মনিটরসহ সরকারি ও ব্যক্তিগত প্রায় পঁচাত্তর লাখ টাকার মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়। এছাড়া দুষ্কৃতকারীরা অফিসের বিভিন্ন জিনিসের ক্ষতিসাধন করে। এতে আনুমানিক দুই কোটি ষাট লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ার কারণে তাদের শ্বাস-কষ্টসহ প্রাণ সংশয়ের বিষয়টি পিবিআই কর্তৃপক্ষ অবস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট হয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত হয়। তারা দুষ্কৃতকারীদের উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করলে দুষ্কৃতকারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এসময় পুলিশ পরিদর্শক এম মনিরুজ্জামান, এসআই (নিরস্ত্র) মো. বসিউজ্জামানকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। আসামিরা ককটেল বিস্ফোরণের পর সরকারি মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।
জেএ/এমএইচআর/এমএস