বিটিভি পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী

৭১ এর বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ ফের দেখেছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩৫ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২৪

বিটিভিতে হামলা ও ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকারে এসে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে বিটিভিতে বিভিন্ন উন্নয়ন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করেছি। কিন্তু আজ এত বছর পর এসে দেখা গেলো সেই ১৯৭১ সালে হানাদারবাহিনীর যে নারকীয় তাণ্ডব তারই যেন একটা বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ দেখছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শন শেষে শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকালে এ কথা বলেন তিনি।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, হানাদার বাহিনী কিন্তু টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি। কিন্তু আজ এই টেলিভিশন সেন্টারকে এভাবে পোড়ালো, একটা কিছু নেই যে রক্ষা পেয়েছে। তাহলে তারা কারা? তারা কি এ দেশেরই মানুষ? তাদের কি এ দেশেই জন্ম? একটা দেশ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার চিন্তা নিয়েই যেন তাদের এই আক্রমণ।’

বিগত বছর গুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশটা আমরা অনেক কষ্ট করে স্বাধীন করেছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সেই মর্যাদাকে ধ্বংস করার জন্যই এই ধ্বংসযজ্ঞ।

বিভিন্ন সময় বিটিভিতে আসার কথা স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ অতীতের কথা মনে পড়ে। আমি কতবার এখানে এসেছি। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এখানে ভাষণ দিতে এসেছি। নানা অনুষ্ঠানে এসেছি। আজ যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম এরপর এটা আবার কবে পুণরায় প্রতিষ্ঠা করা যাবে, জানি না।

এসময় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো দেখে আমি আসলে আর কথা বলতে পারছি না। এক একটা জিনিস যখন গড়ে তুলে অনেক কষ্ট করেই করতে হয়।

তিনি বলেন, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি। সেটাতো আমার দেশের মানুষেরই জন্য। একটা জিনিস এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করি যাতে এগুলো শুধু দেশে নয় বিদেশিদের কাছেও দৃষ্টিনন্দন হয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দেশের যে উন্নতি করছি তার সিম্বল হিসেবে ব্যবহার হবে। সে জায়গাগুলো একে একে ধ্বংস করা হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে। এত দিনের এত কষ্টের ফসল সব শেষ করে দিতে চাচ্ছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কষ্টের। দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই, আমি তাদের সহযোগিতা চাই।

ধ্বংসে জড়িতদের বিচারের ভার দেশবাসীকে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

মেট্রোরেল, বিটিভিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তারা যেখানেই থাকুক তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে সেই আহ্বান জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীকে বলবো, ঢাকাবাসীকে বলবো, যাদের জন্য আজ আপনাদের এই দুর্ভোগ, যারা ধ্বংস করলো, যাদের জন্য আজ বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে আমি তাদের বিচারের ভার এ দেশের জনগণের ওপরই দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, যারা এ দেশের মানুষের রুটি-রুজির ওপর হাত দিয়েছে, রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দিয়েছে; তাদের বিচার জনগণকেই করতে হবে। কারণ এ দেশের জনগণই একমাত্র শক্তি।

কেউ মিথ্যাচার চালিয়ে যেন বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সে জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে কাউকে যেন বিভ্রান্ত করতে না পারে। (সবাই) আসল সত্যটা জানুক।

পরিদর্শনের সময় বিটিভির মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিটিভি ভবনে হামলার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। পাশাপাশি বিটিভি সদর দপ্তর ও বিটিভি ভবনে ভাঙচুরের একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এসময় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খন্দকার এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম. নজরুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৮ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় বিটিভির প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে তারা ভেতরে থাকা মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে আগুন দেন। ভবনের ভেতরেও ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারে জানানো হয়, হামলায় বিটিভির ৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়। মামলার পর বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে আমীর খসরুকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এসইউজে/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।