চট্টগ্রামে পুলিশ ফাঁড়ি ও থানায় হামলার ক্ষত, ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি
চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময় দুষ্কৃতকারীদের দেওয়া আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে বহদ্দারহাট পুলিশ ফাঁড়ি। এছাড়া সংঘর্ষের সময় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চান্দগাঁও থানা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক অফিস। এসব পৃথক ঘটনায় প্রায় ২৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (২৪ জুলাই) পর্যন্ত এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ ৭০ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে নগরের বহদ্দারহাটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হন। আট পুলিশ, একজন সাংবাদিকসহ আহত হন অন্তত ৮০ জন। এ সময় অন্তত সাতজন অস্ত্রধারীকে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বহদ্দারহাট পুলিশ ফাঁড়ি। পুড়ে যাওয়া কক্ষের জানালা দিয়ে ভেতরের ভস্মীভূত টেবিল-চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র দেখা যাচ্ছে। ভস্মীভূত ফাঁড়িতে দেওয়া হয়েছে তালা। একটু দূরের সড়ক বিভাজকে দাঁড়িয়ে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন জনাদশেক পুলিশ সদস্য। একটু দূরে মেয়রের বাসভবনের কাছেও পুলিশের অবস্থান।
অন্যদিকে চান্দগাঁও থানার সদর দরজা বন্ধ রাখা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য। বাইরে বেশ কয়েকজনকে অভিভাবক ও স্বজনদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে দীর্ঘ সময়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কমপ্লিট শাটডাউনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় অবরোধ করে। পুলিশের ধাওয়ায় খেয়ে শিক্ষার্থীরা বহদ্দারহাট এলাকায় অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
পরে ওইদিন দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের শুরুতেই আন্দোলনকারীদের একটি সঙ্গে থাকা একটি পক্ষ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়।
সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা বহদ্দারহাট পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেয়। এতে ফাঁড়ির আসবাবপত্রসহ বেশকিছু মালামাল পুড়ে যায়। একই সময় ভাঙচুর চালানো হয় বহদ্দারহাট মোড়ে নবনির্মিত স্বাধীনতার ঘোষণা স্মারক ম্যুরালে। পরে সাড়ে ৫টার দিকে হামলার চেষ্টা হয় চান্দগাঁও থানায়। সে সময় পুলিশ গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার আন্দোলনকারী থানায় হামলা চালানোর চেষ্টা করে। হামলায় ছাত্রদের সঙ্গে অংশ নেয় বিএনপি-জামায়াতের লোকজন।’
‘ফাঁড়িতে হামলার সময় পুলিশ না থাকায় তারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। হামলায় থানার প্রধান ফটক ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। আমাদের কাছে চিহ্নিত দুষ্কৃতকারীদের ফুটেজ আছে। এখন পর্যন্ত ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’- যোগ করেন ওসি।
এদিকে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ২৫ মামলায় ৭০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও কারফিউ অমান্য করায় বিভিন্ন ধারায় দণ্ড পেয়েছেন অন্তত ৩০০ জন।
এএজেড/বিএ/জেআইএম