ক্ষতি ২০৫ কোটি

ডিএনসিসির ১০ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ৬টিতেই ভাঙচুর-আগুন

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৯:২৮ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৪
ডিএনসিসির কার্যালয়ে কঙ্কালসার যানবাহন/সংগৃহীত

মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনের পূর্ব পাশে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৪ এর কার্যালয়। এ কার্যালয় চত্বরে বড় একটি জায়গাজুড়ে রাখা ছিল করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪৬টি ভারী গাড়িসহ অন্য যানবাহন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দুর্বৃত্তরা ২৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ভাঙচুর করেছে ১৭টি। একইভাবে ডিএনসিসির আরও পাঁচটি আঞ্চলিক কার্যালয়, কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত যানবাহনে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ডিএনসিসির ১০ কার্যালয়ের ছয়টির বিভিন্ন স্থাপনা, যানবাহন, সামগ্রী ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সংস্থাটির প্রায় ২০৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে যেসব যানবাহন ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়েছে তার অধিকাংশই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের। ফলে সংস্থাটির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ডিএনসিসির কয়েকটি আঞ্চলিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন যানবাহন পোড়ানো হয়েছে। মশার ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিন, মশার ওষুধ নষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া ফুটপাত থেকে সড়কবাতি ও গাছ তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে ডিএনসিসির ক্ষতি অন্তত ২০৫ কোটি টাকা। ডিএনসিসির যেসব যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বর্জ্যবাহী যান বেশি। গত কয়েক মাস আগে এগুলো জাপান থেকে আমদানি করা হয়েছিল।’

মশার ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিন, মশার ওষুধ নষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া ফুটপাত থেকে সড়কবাতি ও গাছ তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে ডিএনসিসির ক্ষতি অন্তত ২০৫ কোটি টাকা। ডিএনসিসির যেসব যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বর্জ্যবাহী যান বেশি।- ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম

বর্জ্যের গাড়ি পোড়ায় সংস্থাটির কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসিসি এলাকায় দিনে তিন হাজার টন গৃহস্থালির বর্জ্য উৎপাদন হয়। বর্জ্যের গাড়িগুলো পুড়ে যাওয়ায় এ কার্যক্রম পরিচালনায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। তবে ডিএনসিসির মেকানিক্যাল বিভাগের গাড়িগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করা হচ্ছে। গাড়ি যেহেতু কম, আমাদের শিফট বাড়িয়ে কাজ করছি। ফলে এখন বর্জ্য অপসারণে সমস্যা নেই।’

অঞ্চল-৪

ডিএনসিসির জনসংযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুর্বৃত্তদের নাশকতায় ডিএনসিসির অঞ্চল-৪ এর কম্প্যাক্টর চারটি, কনটেইনার ক্যারিয়ার ১০টি, ওপেন ট্রাক ১১টি, হাইড্রোলিক ল্যাডার তিনটি, একটি মাইক্রোবাস সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। একই স্থানে রাখা তিনটি কম্প্যাক্টর, পাঁচটি কনটেইনার ক্যারিয়ার, পাঁচটি খোলা ট্রাক, একটি মাইক্রোবাস, একটি পাজেরো জিপ, দুটি ডাবল কেবিন পিকআপ ভাঙচুর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

ডিএনসিসির অঞ্চল-৪ এর সামনের জায়গাটি টাউন হল চত্বর নামে পরিচিত। বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, টাউন হল চত্বরে ওই ৪৬টি ভাঙা ও পুড়ে যাওয়া গাড়ি পড়ে রয়েছে। পুড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে এখনো পোড়া গন্ধ বাতাসে ছড়াচ্ছে। আর যেসব যানবাহন ভাঙা হয়েছে, সেগুলোর কাচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে এই ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তারা দুর্বৃত্তদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ক্ষতি পোষাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চান মেয়র আতিকুল ইসলাম।

শুক্রবারের ওই হামলার সময় সেখানে ছিলেন ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কম্প্যাক্টর চালক ইলিয়াস খান। তিনি বলেন, ‘ডিএনসিসির অঞ্চল-৪ এর কার্যালয় এবং গাড়ি ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাত্র মনে হয়নি। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টায় একদল লোক মেইন গেট টপকে ভেতরে চলে আসে। এরা গেট খুলে দিলে আরও শত শত মানুষ ঢোকে। সবগুলো গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। প্রথমে তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে বাকিগুলোতে এমনিতেই আগুন ধরে যায়। আর ১৭টি গাড়ি ভাঙলেও সেগুলোতে আগুন দেয়নি। তাণ্ডব দেখে আমরা দৌড়ে চলে যাই।’

অঞ্চল-৩

শুক্রবার (১৯ জুলাই) মহাখালীতে ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর কার্যালয়ে হামলা করে আসবাবপত্র ও জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় চারটি হাইড্রোলিক গাড়ি, দুটি কাভার্ডভ্যান, একটি এক্সাভেটর। এ অঞ্চলের আওতাধীন রামপুরা স্ট্রম স্যুয়ারেজ পাম্পেরও ক্ষতি করা হয়। পাম্প অপারেটর (ঠিকাদার) ফার্ম সিগমা লিমিটেডের একটি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। বাড্ডায় ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ডিএনসিসির অঞ্চল-৪ এর কার্যালয় এবং গাড়ি ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাত্র মনে হয়নি। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টায় একদল লোক মেইন গেট টপকে ভেতরে চলে আসে। প্রথমে তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে বাকিগুলোতে এমনিতেই আগুন ধরে যায়।–ডিএনসিসির গাড়িচালক

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘রামপুরা স্ট্রম স্যুয়ারেজ পাম্পে ক্ষতি হওয়ায় হাতিরঝিলে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন বন্ধ। তবে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আপাতত জলাবদ্ধতার আশঙ্কা নেই। তবে দ্রুত সময়ে পাম্প সচলের চেষ্টা চলছে।’

অঞ্চল-১

রাজধানীর উত্তরায় ডিএনসিসির অঞ্চল-১ এর কার্যালয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভিড়ে দুর্বৃত্তরা এ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নিচতলায় ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। এই জায়গায় ডিএনসিসির এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের কার্যালয় ছিল। পাশের আরেকটি কক্ষে মশা নিধনের যন্ত্রপাতি ও ওষুধের ড্রাম ছিল। একই ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

কার্যালয়ের সামনে রাখা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যবহৃত একটি জিপগাড়ি, একটি হাইড্রোলিক ল্যাডার, একটি মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করা হয়েছে। চারটি হাউড্রোলিক গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন, একটি পিকআপ, একটি খোলা ট্রাক, একটি স্কট ট্রাকের কাচ ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া এ কার্যালয় সংলগ্ন ডিএনসিসির একটি কমিউনিটি সেন্টারের থাইগ্লাস ভাঙচুর করে হামলাকারীরা।

অঞ্চল-৫

মোহাম্মদপুরে ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর কার্যালয়। এ অঞ্চলের কার্যালয়েও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর একটি গাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। গুলিবিদ্ধ হন গাড়িচালক। অফিস সংলগ্ন একটি কমিউনিটি সেন্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

অঞ্চল-৬

উত্তরা-১২ নম্বর সেক্টরে অঞ্চল-৬ এর কার্যালয়। এ কার্যালয়ের নিচতলা এবং চারতলা ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ির কাচ ও একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ভাঙা হয়।

এমএমএ/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।