মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

টাকা গেছে বহু হাতে, ফেরত দিচ্ছে না কেউ

রায়হান আহমেদ
রায়হান আহমেদ রায়হান আহমেদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২২ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৪
মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা, ফাইল ছবি

নানান অনিয়মের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায় গত ৩১ মে। ভিসা, বিএমইটি কার্ড থাকার পরও ওই সময়ের মধ্যে দেশটিতে যেতে পারেননি বিপুল সংখ্যক কর্মী। চলমান সংকটের মধ্যে যেতে না পারা এসব কর্মীর টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। যদিও সরকার নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা দেওয়া এসব কর্মীকে কত টাকা ফেরত দেওয়া হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি।

টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীরা বলছেন, তারা কোনো টাকাই ফেরত পাননি। উল্টো অনেকের পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে, দেওয়া হচ্ছে হুমকি-ধমকি। অনেককে আবার অন্য দেশে নেওয়ার প্রলোভনও দিচ্ছেন দালালরা।

‘কারও কাছে প্রমাণ থাকলে অবশ্যই টাকা দিতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে এজেন্সিকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া আছে। পরে দেখা যাবে কী হয়। টাকা না পেলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানাবে।’ আলী হায়দার চৌধুরী, মহাসচিব, বায়রা

এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে টাকা ফেরত না পেলে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানানো যাবে। এছাড়া যারা ভিসা পাওয়ার পরও যেতে পারেননি, তাদের মালয়েশিয়া পাঠাতে এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে, ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার চার বছর পর ২০২২ সালের আগস্ট মাসে পুনরায় কর্মী পাঠানোর অনুমতি মেলে। এই প্রক্রিয়া শেষ হয় চলতি বছরের ৩১ মে।

এ সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের জন্য ৫ লাখ ৩২ হাজার ১৬২ জন কর্মীর জন্য কোটা বরাদ্দ দেয়। মন্ত্রণালয় থেকে কর্মানুমতি দেওয়া হয় ৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৯৯ জনের, মোট বরাদ্দকৃত কোটার ৯৯.২১ শতাংশ। বিএমইটি থেকে বহির্গমন ক্লিয়ারেন্স কার্ড গ্রহণ করেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৭২৯ জন বা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগানুমতির ৯৩.৫০ শতাংশ। ৩১ মে পর্যন্ত দেশটিতে গমনকারী কর্মীর সংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫২ জন, যা ক্লিয়ারেন্স কার্ড পাওয়া কর্মীর ৯৬.৪ শতাংশ। সব প্রক্রিয়া শেষ করার পরও মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৭৭ জন যা বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ড পাওয়া কর্মীর ৩.৬ শতাংশ।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, কর্মানুমতি যত জনের জন্য দেওয়া হয়েছিল, মালয়েশিয়া যাওয়া কর্মীর সংখ্যা তার চেয়ে ৫২ হাজার ৪৭ জন কম। অভিযোগ আছে, এর বাইরে বিরাট সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে দালালরা এবং কিছু অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি টাকা নিয়েছিল, যাদের কোনো প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করা হয়নি।

‘আমি মনে করি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হোক। এভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাজারটি নষ্ট হচ্ছে। মানুষের টাকা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, এরসঙ্গে যারা জড়িত তাদের দায়বদ্ধ হতে হবে। আর টাকা ফেরতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কাজ করতে হবে।’ তাসনিম সিদ্দিকী, চেয়ারম্যান, রামরু

অন্যদিকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নিবন্ধন ফি, কল্যাণ ফি, বিমা, স্মার্টকার্ড ফি, সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভিস চার্জসহ সব মিলিয়ে মালয়েশিয়া যেতে একজন ব্যক্তির মোট ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা খরচ হওয়ার কথা। তবে বাস্তবে দালালরা এবং এজেন্সি মিলে একেকজনের কাছ থেকে ৪-৫ লাখ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত হিসাবের পাঁচ-ছয় গুণ বেশি টাকা দিয়েও মালয়েশিয়া যেতে না পারা এসব প্রতারিত কর্মী এখন টাকার জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। তবে কোথাও কোনো ভরসা বা সমাধান পাচ্ছেন না তারা।

গত ৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, ভিসা থাকার পরও যেসব কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, প্রমাণ থাকা সাপেক্ষে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে নির্দেশ দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে এ টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়া যেতে না পারাদের প্রায় দুই হাজার দরখাস্ত এখন পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। তবে অনেক দরখাস্তে একসঙ্গে একের অধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন। কোনো কোনো দরখাস্তে ৩০ থেকে ৪০ জনও অভিযোগ করেছেন।

‘মালয়েশিয়া ইস্যুতে সরকারের উচিত কারা টাকা পেয়েছে, কারা পায়নি এটার খোঁজ নেওয়া। যেসব এজেন্সি কর্মীদের টাকা ফেরত দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে, সেটা মন্ত্রণালয়ের খোঁজ রাখা উচিত। অভিযুক্তরা সাজা পায় না বলে এসব ঘটনা বারবার ঘটে। মালয়েশিয়ার বাজার এত ঝুঁকিপূর্ণ, এটার স্থায়ী সমাধান জরুরি।’ শরিফুল হাসান, সহযোগী পরিচালক, ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম

প্রমাণ থাকার পরও টাকা ফেরত না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে। যাদের মাধ্যমে টাকা দিয়েছেন তারা ফোন ধরছেন না, রিক্রুটিং এজেন্সিতে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, দালালরা ফোন বন্ধ করে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মালয়েশিয়া যেতে টাকা দেওয়া এসব কর্মী।

মালয়েশিয়া যেতে না পারাদের একজন রাজু চন্দ্র দাস। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি হ্যাপি ট্রাভেল এজেন্সির চেয়ারম্যান শাহজাহান মোল্লার দালাল প্রতিনিধি ইমান আলীকে কয়েক মাসে একাধিক ধাপে নগদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা এবং পাসপোর্ট জমা দিই। পর্যায়ক্রমে বিএমইটির ফিঙ্গার ও পিডিও ট্রেনিং সম্পন্ন করি। আমার ম্যানপাওয়ার কে করাবে, জানতে চাইলে ইমান আলী জানান, এই তথ্য আমার জানার দরকার নেই, মালয়েশিয়া যেতে পারলেই হলো। পরে তিনি আমাকে ম্যানপাওয়ার/বিএমইটি স্মার্টকার্ড না দিয়ে আমার বিশ্বাস অর্জনের উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করে মালয়েশিয়ায় ফ্লাইট দেওয়ার নামে ১৯ মে, ২০২৪ তারিখের একটি ভুয়া টিকিট দেন। এত ছলচাতুরি করার পরও দালাল ইমান আলী ও তার রিক্রুটিং এজেন্সি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৩১ মে, ২০২৪ এর মধ্যে আমাকে মালয়েশিয়া পাঠাতে ব্যর্থ হন।’

রাজু চন্দ্র দাস আরও বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এসব টাকা যোগাড় করেছি। তাদের ফোন দেওয়া হলে তারা আমাকে টাকা আজ দেবে, কাল দেবে বলে ঘোরাচ্ছে। দালাল ইমান আলী বর্তমানে মালয়েশিয়ায়। তার অবর্তমানে ট্রাভেল এজেন্সির চেয়ারম্যান কিংবা রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকপক্ষের সঙ্গে আমি সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছি না।’

এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় থাকা দালাল ইমান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি হ্যাপি ট্রাভেলস অফিসে টাকা জমা দিয়েছি। ওরা অফিসের অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছে। আমি কি আমার পকেট থেকে টাকা দেবো? আমি অফিসে সবার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছি। এখন অফিস দেখবে বিষয়টা।’

পরবর্তী সময়ে হ্যাপি ট্রাভেলসের অংশীদার মফিজুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, “আমরা কাজ করিয়েছি ‘রুবেল বাংলাদেশ’ নামের এজেন্সির মাধ্যমে। এজেন্সি টাকা দিলে আমরা সবার টাকা দিয়ে দেবো। এখানে ‘রুবেল এজেন্সি’ও টাকা সরাসরি পায়নি। তারা মালয়েশিয়ায় তাদের কিছু এজেন্টের মাধ্যমে টাকা পেয়েছে।”

‘এই সংকট মোকাবিলায় মালয়েশিয়ার সঙ্গে তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা হয়েছে। সেখানে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত ভিসার বিপরীতে যেসব বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় ৩১ মে ২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেননি, তাদের বিশেষ বিবেচনায় দ্রুত মালয়েশিয়ায় প্রবেশ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে।’ সৈকত চন্দ হালদার, জনসংযোগ কর্মকর্তা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়

মালয়েশিয়া যেতে না পারা মো. মিটল নামের আরেক ভুক্তভোগী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে মানিক নামের দালালের মাধ্যমে পারিসা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজার পাভেলকে কয়েক মাসে একাধিক ধাপে ব্যাংকের মাধ্যমে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট জমা দিই। এর কিছুদিন পর ট্রাভেল এজেন্সি আমাকে শুধু একটি ই-ভিসা দেয়। আমার ম্যানপাওয়ার কার্যক্রমও তারা সম্পন্ন করেনি। ফলে ট্রাভেল ও রিক্রুটিং এজেন্সি উভয়ের কেউই সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাকে মালয়েশিয়া পাঠাতে পারেনি। দালাল মানিক বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করায় তার অবর্তমানে ম্যানেজার পাভেলের কাছে আমার টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত চাই। তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।’

মো. মিটল আরও বলেন, ‘আমি মানিক দালাল ও ট্রাভেল এজেন্সিকে কল দিলে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে।’

এ বিষয়ে পারিশা ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার পাভেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কিছু লোককে টাকা ফেরত দিয়েছি। মিটল নামে কাউকে চিনি না। আমি চিনি মানিককে। সেই মানিকের কাছে আমি ২ লাখ ৪০ হাজার পাই। আমাদের কাজ সব মানিকের সঙ্গে। এখন মানিকের লোক যারা যেতে পারেনি, তারা মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করুক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় বিদেশ যেতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছে টাকা দুই-তিন হাত ঘুরে আসে। মালয়েশিয়া ইস্যুতে অনেকেই মালয়েশিয়ায় থাকা দালালের কাছে টাকা দিয়েছে। ওই দালাল আবার কিছু টাকা দেশে তার এজেন্ট বা ট্রাভেল এজেন্সির কাছে পাঠায়। এরপর রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে পাঠায়। ফলে যারা যেতে পারে না, এই টাকা কয়েক হাতে চলে যাওয়ায় ফেরত নিয়ে সমস্যা দেখা যায়।

এসব বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সংগঠন বায়রা’র মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা নিয়ে কথা বলার সময় হয়নি। ১৮ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। কারও কাছে প্রমাণ থাকলে অবশ্যই টাকা দিতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে এজেন্সিকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া আছে। পরে দেখা যাবে কী হয়। টাকা না পেলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানাবে।’

টাকা গেছে বহু হাতে, ফেরত দিচ্ছে না কেউ

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালয়েশিয়ার এই সংকট অনেক পুরোনো। বিভিন্ন সময়ে প্রতারণার কারণে এই শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে। এসব প্রতারণায় জড়িতদের শাস্তি না হওয়ায় এমন সংকট বারবার তৈরি হচ্ছে আর শ্রমবাজার বন্ধ হচ্ছে।

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠন রামরুর চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘মালয়েশিয়া সরকারের লোকজন আসলে নীতির ভেতরে থাকে না। আর এরসঙ্গে আমাদের দেশের কিছু লোক জড়িত। এই দুই মিলে বাজারটিতে অব্যবস্থাপনা তৈরি করে রেখেছে। আমি মনে করি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হোক। এভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাজারটি নষ্ট হচ্ছে। মানুষের টাকা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, এরসঙ্গে যারা জড়িত তাদের দায়বদ্ধ হতে হবে। আর টাকা ফেরতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কাজ করতে হবে।’

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মালয়েশিয়া ইস্যুতে সরকারের উচিত কারা টাকা পেয়েছে, কারা পায়নি এটার খোঁজ নেওয়া। যেসব এজেন্সি কর্মীদের টাকা ফেরত দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে, সেটা মন্ত্রণালয়ের খোঁজ রাখা উচিত। আরেকটি বিষয় হলো, সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যেতে যে খরচ, বাস্তবে পাঁচ থেকে ছয় গুণ টাকা বেশি নেওয়া হয়। এই টাকাগুলো অনেক জায়গায় পেমেন্ট হয়। তাই আমার মনে হয় একজন মানুষ পাওয়া যাবে না যে পুরো টাকা পাবে। ফলে প্রায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। ১৯৭৮ সালে এই শ্রমবাজার চালু হওয়ার পর থেকেই সংকট লেগেই থাকে। প্রতিবার কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। আর অভিযুক্তরা সাজা পায় না বলে এসব ঘটনা বারবার ঘটে। মালয়েশিয়ার বাজার এত ঝুঁকিপূর্ণ, এটার স্থায়ী সমাধান জরুরি।’

এ বিষয়ে জানতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিনের মুঠোফোনে কল করে ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ হালদার জানিয়েছেন, এই সংকট মোকাবিলায় মালয়েশিয়ার সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা হয়েছে। সেখানে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত ভিসার বিপরীতে যেসব বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় ৩১ মে ২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেননি, তাদের বিশেষ বিবেচনায় দ্রুত মালয়েশিয়ায় প্রবেশ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে। যেতে না পারা কর্মীদের বিশেষ বিবেচনায় নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারকেও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আরএএস/এমএইচআর/এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।