কোটা আন্দোলন

আজ থেকে সড়ক বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:২৮ পিএম, ১১ জুলাই ২০২৪
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে কথা বলছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন/ছবি জাগো নিউজ

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। অন্যদিকে, সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। তবে আদালতের আদেশের পরও যদি কেউ ব্লকেড কর্মসূচির নামে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে তবে পুলিশ প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।

আরও পড়ুন

 

এদিকে, সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর একমাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্রটি বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। গতকাল বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, হাইকোর্টের রায়ের ওপর সর্বোচ্চ আদালত চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। ফলে আজ থেকে শিক্ষার্থীদের আর জনদুর্ভোগ করার কোনো অবকাশ আছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ মনে করে না।

আজ থেকে সড়ক বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি

তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তাদের প্রতি পুলিশের অবশ্যই ভালোবাসা, সহমর্মিতা আছে। কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে দেশের প্রচলিত আইন ও সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে আমরা বাধ্য। সে জায়গা থেকে যেহেতু শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত, ফলে ডিএমপির পক্ষ থেকে আমি বিনীত অনুরোধ করছি তারা যেন জনদুর্ভোগ হয় এমন কোনো কর্মসূচি না দেয়৷

আরও পড়ুন

তিনি বলেন, গত ১০ দিন ধরে শাহবাগ, সায়েন্সল্যাবসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের গাড়ি, চলাফেরা ব্যাহত হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়েছে মানুষ যেন নিরাপদে চলাচল করতে পারে। পুলিশ সবার অধিকারের বিষয়ে যেমন শ্রদ্ধাশীল সেই সঙ্গে মহানগরবাসীর নিরাপত্তায় ও গমনাগমনের জন্য পুলিশ প্রাণান্ত চেষ্টা করে।

মহিদ উদ্দিন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যে আন্দোলন চলছিল সেটি ৬ জুলাই থেকে ১০ জুলাই সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। পুলিশ অত্যন্ত পেশাদারত্বের সঙ্গে এবং ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। আমরা আশা করি, আমাদের আবেদন এবং সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের পক্ষেই রয়েছে। তাই পরবর্তী কর্মসূচির কোনো যৌক্তিকতা নেই। শিক্ষার্থীদের প্রতি সহযোগিতা এবং ভালোবাসা অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা চলমান রয়েছে উল্লেখ করে ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, গত ৭ জুলাই রথযাত্রা হয়েছে। সামনে আশুরা ও উল্টো রথযাত্রা রয়েছে।

আজও শিক্ষার্থীরা ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছে। পুলিশ কী ব্যবস্থা নেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা শিক্ষার্থীদের পক্ষে রয়েছে। কাজেই আন্দোলন যদি যৌক্তিকতা না থাকে তবে আন্দোলনে আসা উচিত নয়। আন্দোলন না করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ রইলো।

আজ থেকে সড়ক বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি

এরপরও যদি নির্দেশনা না মেনে আন্দোলন করে তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের আইন ও দেশের প্রচলিত আইনে ৩৬ ধারা অনুযায়ী অপরাধ। গত ১০ দিনে পুলিশের কোনো সদস্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেননি যাতে করে পুলিশের পেশাদারত্ব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীরা সেই সম্মানটুকু রাখবেন।

এদিকে, কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঘোষিত এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আজও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে এ কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা আসে বুধবার রাতেই।

সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত শনিবার (৬ জুলাই) শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শেষে সারাদেশে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেন। এ কর্মসূচিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে সেই আন্দোলন রূপ নেয় এক দফায়।

আজ থেকে সড়ক বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি

এরই ধারাবাহিকতায় রোববার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে টানা চার ঘণ্টা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে প্রথম দিনের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ওইদিন রাতেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে পরদিন সোমবারও বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে একই কর্মসূচি পালন করেন তারা।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় দিনের অবরোধ প্রত্যাহারের আগে মঙ্গলবার গণসংযোগ কর্মসূচি এবং সেই কর্মসূচি শেষে বুধবার আবারও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবারও অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা আসে।

টিটি/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।