কোটা নিয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী
সরকার শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সব করতে প্রস্তুত
সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়ার পর সরকার শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সবকিছু করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
শিক্ষার্থীরা একটি কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। সেটি করা গঠন করা হবে কি না- এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছুই সম্ভব যদি এখানে আদালতের বিষয় না থাকতো। আদালতের বিষয় আদালতে সমাধান হোক। এই সমাধানের পর যদি আরও কিছু আলোচনা করতে হয় সেটি আলোচনার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন
- হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা, কোটা বাতিলের পরিপত্র বহাল
- যারা রাস্তায় আছে আমাদেরই ছেলেমেয়ে, ভুল বুঝে আন্দোলন করছে
- কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সবসময় খোলা: প্রধান বিচারপতি
তিনি বলেন, ‘দেশের কল্যাণে, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে, আমাদের সন্তানদের কল্যাণে যা করা লাগে আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত।’
বেতন কাঠামোর ৯তম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে পরিপত্র জারি করে সরকার। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি হাইকোর্ট সেই পরিপত্র বাতিল করে। এতে ফের কোটা বাতিলে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে রাখছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। এরমধ্যে কোটা বাতিলের রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে আপিল বিভাগ। কিন্তু আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা সরে আসেনি।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, ‘কোটার বিষয়টি আদালতে রয়েছে। আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাহী বিভাগের অংশ। বিচার বিভাগে কোনো বিষয় থাকলে সেটি বিচার বিভাগেই নিষ্পত্তি করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবো, রাস্তায় না থেকে আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা। যেটি যেখানে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন সেটি সেখানে নিষ্পত্তি করতে হবে। আমরাও চাই বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি হয়ে যাক। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কথা শুনে আদালত যে রায় দিয়েছেন, এখানে কিন্তু সুযোগ রয়ে গেছে, প্রধান বিচারপতি সেই আহ্বান জানিয়েছেন। আদালত হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে আপনার কথা শুনে আসলে কী করতে হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।’
‘আপনি যদি বাইরে থেকে অর্থাৎ রাস্তায় থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেন, কোর্টে গেলেন না, যে সমস্যাটা কোর্টে সেখানে না গিয়ে যদি আমরা রাস্তায় ব্যারিকেড করি, ভোগান্তির সৃষ্টি করি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করি- এটি করা অনুচিত ও অযৌক্তিক একটি কাজ।’
ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের বলবো তারা আদালতে যাবেন। এটাই হচ্ছে যৌক্তিক জায়গা। যেখান থেকে বিষয়টি হয়েছে, সেখানেই যেতে হবে। সেখানে গিয়ে যৌক্তিক বিষয়গুলো তুলে ধরলে আমার মনে হয় সমস্যা সমাধান খুব সহজেই হয়ে যাবে। পানির মতো একটি সহজ জিনিসকে জটিল করছে কারা?’
‘জটিল করা হচ্ছে কিছু কুচক্রী, কোনো পরামর্শদাতা বা কারও ইন্ধনের কারণে’ মন্তব্য করেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী।
একটি গোষ্ঠী দেশের উন্নয়নের সমালোচনা করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা কেন একটি সহজ সমাধান রেখে জটিল জায়গা বেছে নিচ্ছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলবো আপনারা কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে যথাযথ জায়গায় যাবেন। আপনাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। আমি মনে করি সুন্দরভাবে সেটি সমাধান হওয়া সম্ভব।’
‘আমি শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাবো কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আমরা যাতে ভিন্ন জায়গায় না যাই।’
আরও পড়ুন
- কোটাবিরোধী আন্দোলনে স্থবির ঢাকা, ভোগান্তি চরমে
- কোটাবিরোধী আন্দোলন: ‘রাজপথই আমাদের পড়ার টেবিল’
- কোটা বণ্টনে সংস্কার জরুরি, সমাধানের সূত্র সরকারের হাতেই
কারা শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা দেশের উন্নয়ন চায় না, যারা সেই সময়ে দেশের লুটপাট করেছে, যারা দেশটাকে জঙ্গিবাদ করেছে, তারা চাচ্ছে না। তারা বসে আছে তারা ব্যর্থ তারা যেকোনো বিষয়কে পুঁজি করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চায়।’
কোটা বাতিলের পর সরকারি চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ অনেক কমে গেছে। ৪৩তম বিসিএসে মাত্র ১৭ শতাংশ নারীরা সুযোগ পেয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ৫৯ জেলা থেকে পুলিশে একজন নারীও চাকরির সুযোগ পাননি। ১৭টি জেলায় নারী-পুরুষ কেউই সুযোগ পায়নি। এরকম একটি ইয়ে যদি সৃষ্টি হয়, তাহলে একটা অসমতা তৈরি হয়। কোটার সংস্কার দরকার। কোটা কতটুকু থাকবে সেটা আলোচনা হতে পারে বলেও জানান ফরহাদ হোসেন।
এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঘোষিত এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আজও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে এ কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা আসে বুধবার রাতেই।
সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত শনিবার (৬ জুলাই) শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শেষে সারাদেশে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেন। এ কর্মসূচিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে সেই আন্দোলন রূপ নেয় এক দফায়।
আরএমএম/বিএ/জিকেএস