হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের ওপর হামলা
পুরান ঢাকার বংশালের মিরনজিল্লা সুইপার কলোনির হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে হরিজন সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আউয়াল হোসেনের কর্মীরা হামলা চালান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিরনজিল্লা এলাকায় নির্মিত নতুন ভবনে হরিজন সম্প্রদায়ের ৬৬ বাসিন্দাকে তুলে দিতে সেখানে গিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামান। তখন মিরনজিল্লা কলোনি থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদ হওয়া অন্যান্য হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন তাকে বাধা দেন।
এসময় স্থানীয় কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন তার কর্মীদের নিয়ে সেখানে যান। একপর্যায়ে দুই পক্ষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। তখন কাউন্সিলরের লোকজন হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনও ইটপাটকেল ছোড়েন। এ ঘটনায় হরিজন সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরনজিল্লা সুইপার কলোনির এক বাসিন্দা জানান, কাউন্সিলরের লোকজনের হামলায় ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
তবে ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ওই ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। আমার কর্মীরাও ছিল না।
তিনি বলেন, মিরনঝিল্লা কলোনি থেকে যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তারা হরিজন সম্প্রদায়ের লোক। আবার যারা নতুন ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন তারাও হরিজন সম্প্রদায়ের। কিন্তু উচ্ছেদের শিকার লোকজন বরাদ্দপ্রাপ্তদের বাসায় উঠতে দিচ্ছে না। আবার সিটি করপোরেশন কয়েক দিন আগে নোটিশ দিয়েছে বাসায় না উঠলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। এমন পরিস্থিতিতেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি তারা (বরাদ্দপ্রাপ্তরা) বাসায় ওঠার জন্য গিয়েছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপর হামলা করেছে হরিজনের আরেকটি পক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে করপোরেশনের প্রায় ৩ দশমিক ২৭ একর জমি আছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে আসছেন। কলোনির এক পাশে ২৭ শতাংশ জমিতে আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি। তাই সেখানকার কিছু বাসাবাড়ি ভেঙে দিতে হবে। আগের কাঁচাবাজারটি ১৭ শতাংশ জমিতে ছিল। বাকি জমি থেকে স্থাপনা সরাতে গত ১০ ও ১১ জুন অভিযান চালাতে গিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি। কিন্তু হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে সেদিন অভিযান চালানো যায়নি। পরে উচ্ছেদ ঠেকাতে আদালতে গেছেন হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। ১৩ জুন আদালত মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে থাকা হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছিলেন।
এমএমএ/জেডএইচ/