বেনজীরের আলিশান চার ফ্ল্যাট ক্রোক করলো দুদক
পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিশান মীর্জা ও তার ছোট মেয়ের নামে থাকা গুলশানের ১২৬ নং সড়কের র্যাংকন আইকন টাওয়ারের চারটি ফ্ল্যাট ক্রোক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট।
সোমবার (৮ জুলাই) দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদের নেতৃত্বে একটি দল চারটি ফ্ল্যাটের সব জিনিসপত্র তালিকা তৈরি করে, ফ্ল্যাটগুলো ক্রোক করেন। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জাগো নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত রোববার (৭ জুলাই) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তার বাংলো বাড়ি ক্রোক করা হয়।
দুদক সচিব বলেন, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের গুলশানের চারটি ফ্ল্যটের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের একজন পরিচালককে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ও দুদকের একজন পরিচালকসহ একটি টিম বাড়িটির সব কিছু ইনভেনটরি (তালিকা) করে, ডুপ্লেক্সটি তাদের দায়িত্বে বুঝে নেয়।
জানা গেছে, ১৯ দশমিক ৭৫ কাঠা জমির উপর তৈরি গুলশানের ১২৬ নম্বর সড়কের এক নম্বর বাড়ি র্যাংকন আইকন টাওয়ার। ১৫তলা এই ভবনটিতে রয়েছে ২৫টি অ্যাপার্টমেন্ট, দুটি বেজমেন্ট, ৩৭টি কার পার্কিং।
২০২৩ সালের ৫ মার্চ একসঙ্গে ৪টি ফ্ল্যাট কেনেন বেনজীর। অবসরে যাওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই ২ হাজার ২৪২ বর্গফুটের দুটি ও ২ হাজার ৩৫৩ বর্গফুট আয়তনের দুটিসহ মোট চারটি ফ্ল্যাট কেনেন তিনি।
আরও জানা যায়, চারটি ফ্ল্যাটের তিনটি সাভান্না ইকো রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে কেনা। অপর ফ্ল্যাটটি বেনজীর আহমেদের ছোট মেয়ের হয়ে তিনি নিজের নামে কেনেন।
দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক ও গুলশানে বেনজীরের ফ্ল্যাটের রিসিভার মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, আদালত আমাদের রিসিভার নিয়োগ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী ফ্ল্যাটের সব মালামাল বুঝে নিয়েছি। ফ্ল্যাটে যা যা পাওয়া গেছে সব জিনিসপত্রের ইভেনটরি করেছি, সেই তালিকা কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। ক্রোক করা এসব সম্পত্তির সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদি ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া যায় তাহলে অর্জিত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।
এর আগে গত ৩০ জুন বেনজীর আহমেদের স্ত্রী-কন্যাদের নামে থাকা গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাটের তালা খুলতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আবেদন করে দুদক। সংস্থাটির আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। এর আগে ৬ জুন ফ্ল্যাট চারটি ক্রোক করার আদেশ দেন মহানগর বিশেষ জজ আদালত।
সম্পদ ক্রোক হলেও দুদকের দুই দফা তলবে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যরা সাড়া দেয়নি। তৃতীবার তলবের আইনি সুযোগ না থাকায় গত ২ জুলাই বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মীর্জা, বড় কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও মেজো কন্যা তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেয় সংস্থাটি।
গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। একই সঙ্গে তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে। যার নেতৃত্ব দেওয়া হয় দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাকে।
এরই মধ্যে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জিশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে থাকা গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট, বান্দরবন ও সেন্টমার্টিনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সম্পদ ক্রোক ও জব্দ করেছে দুদক।
এসএম/এমএইচআর