হলি আর্টিসানে হামলার ৮ বছর

জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রয়েছে ঝুঁকির শঙ্কা

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:২৮ পিএম, ০১ জুলাই ২০২৪
২০১৬ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যার পরে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। তাদের উৎখাত করে জিম্মিদের উদ্ধারে পরদিন অভিযান চালায় যৌথ কমান্ডো দল। ছবি : সংগৃহীত

দেশি-বিদেশি নাগরিকদের পদচারণায় সব সময় মুখর থাকতো রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়াখ্যাত গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি। ২০১৬ সালের ১ জুলাই অন্যান্য দিনের মতোই ব্যস্ত হয়ে পড়ে লেকের পাড়ের মনোরম পরিবেশের রেস্তোরাঁটি। তবে সন্ধ্যা গড়াতেই হলি আর্টিসানের আড্ডাস্থল পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেখানে চালানো হয় ইতিহাসের ‘জঘন্যতম জঙ্গি হামলা’। ভয়াবহ এ হামলায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং প্রায় ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস জিম্মি সংকটের ঘটনায় স্তম্ভিত করেছিল পুরো জাতিকে।

হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার আট বছর হলো আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন। তাদের মধ্যে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হন পুলিশের অনেকে।

কয়েকবার প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও স্পর্শকাতর বিবেচনায় রাতে হলি আর্টিসানে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যদের পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ অবসান হয় জিম্মিদশার, নিহত হয় হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি। ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে জঙ্গিদের নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞের ব্লু-প্রিন্ট। বিভিন্ন সময় এ হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের যোগসাজসের বিষয়টি আলোচনায় আসে।

হলি আর্টিসানে হামলার পর ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি হামলা হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের পর বড় ধরনের কোনো জঙ্গি হামলা হয়নি। বিভিন্ন সময় জঙ্গিরা উত্থানের চেষ্টা চালালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাথা তুলে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয় জঙ্গিরা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর দিনেদুপুরে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। আড়াই বছরেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা পলাতক দুজনের একজনকেও শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাই বড় কোনো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে যতগুলো জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ও শক্তিশালী আনসার আল ইসলাম। সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল।

‘বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে নব্য জেএমবি। তারপরেও তারা থেমে নেই। যারা গ্রেফতার হয়নি বা বাইরে ছিল তারা সংগঠনটিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। তবে সংগঠিত হওয়ার আগেই আমরা তাদেরকে শনাক্ত করেছি। এই মুহূর্তে জঙ্গিবাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’- মো. আসাদুজ্জামান, সিটিটিসিপ্রধান

জঙ্গি দমনে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি ইউনিটের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনসার আল ইসলামকে ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার বাংলাদেশি শাখা (একিউআইএস) বলা হয়। সম্প্রতি আনসার আল ইসলামের কার্যক্রমের ধরন দেখে গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন আল-কায়েদা থেকে নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা পেয়ে মাঠে নেমেছে তারা। বড় কিছু করার উদ্দেশ্যে পুরোনো ও বিশ্বাসযোগ্য সদস্যদের যে কোনো মূল্যে কাছে পেতে চাচ্ছে সংগঠনটি। তবে ঠিক কী নির্দেশনা আনসার আল ইসলামের কাছে এসেছে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

গত বছরের ৩০ অক্টোবর হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাত জঙ্গির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন

আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া সাত জঙ্গি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। তারা এখন কারাগারে রয়েছেন।

হলি আর্টিসান হামলায় জড়িত যারা পরবর্তী অভিযানে নিহত হয়

হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলায় জড়িত অন্য আট জঙ্গি পরে পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়। তারা হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী (৩৩), নুরুল ইসলাম মারজান (২৩), সারোয়ার জাহান মানিক (৩৫), তানভীর কাদেরী (৪০), বাশারুজ্জামান চকলেট (৩২), মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম (৩৭), মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান (৩২) এবং রায়হানুল কবির রায়হান ওরফে তারেক (২০)।

‘জঙ্গিদের বিষয়ে র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি রয়েছে। র‍্যাব একের পর এক শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের গ্রেফতার করেছে। ধারাবাহিক অভিযানের ফলে জঙ্গিরা এখন মাথা চাড়া দিতে পারছে না। এরপরেও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না।’- আরাফাত ইসলাম, পরিচালক, লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং, র‌্যাব

হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার পর সিটিটিসির অভিযান

হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার ঘটনার পরে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) মোট ৮২৬ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে জেএমবির ২০০ জন, নব্য জেএমবির ১৮০ জন, আনসার আল ইসলামের ২৩০ জন, হরকাতুল জিহাদের ১৫ জন, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ১৮ জন, নতুন জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার ৪১ জন, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের ১২০ জন এবং সংগঠন উল্লেখ নেই এমন ২২ জন রয়েছে।

হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার পর র‍্যাবের অভিযান

হলি আর্টিসানে হামলার ঘটনার পরে র‌্যাব গ্রেফতার করে ১ হাজার ৮৭৫ জঙ্গি সদস্যকে। এর মধ্যে ৮৭৩ জন জেএমবি সদস্য, হরকাতুল জিহাদের (হুজিবি) ৩৭ জন, হিযবুত তাহরীরের ১০৪, আনসার আল ইসলামের ৪৭৩ সদস্য, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৮২ সদস্য এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের ৩০৬ জন।

এ ছাড়া ২০১৬ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ সারা দেশে এক হাজার নয়জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

জানতে চাইলে সিটিটিসিপ্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, নব্য জেএমবির সদস্যরা হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলা চালিয়েছিল। জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে নব্য জেএমবি। তারপরেও তারা থেমে নেই। যারা গ্রেফতার হয়নি বা বাইরে ছিল তারা সংগঠনটিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। তবে সংগঠিত হওয়ার আগেই আমরা তাদেরকে শনাক্ত করেছি। এই মুহূর্তে জঙ্গিবাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশকে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। যার অন্যতম উদ্দেশ্য দেশব্যাপী জনসচেতনতা কার্যক্রম তৈরি করা। আরেকটি হলো ডি-রেডিকালাইজেশন। ইতোমধ্যে আমরা এই দুটি কাজ শুরু করেছি। এরইমধ্যে ৫৪ জনকে ডি-রেডিকালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে। এটি একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যারা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে, প্রাথমিক তথ্য মিলছে তাদেরকে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আনা হচ্ছে। এছাড়া যারা আটক হয়েছে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় অতীতের আদর্শে অথবা সাজা খেটে বের হচ্ছে তাদেরকে ডি-রেডিকালাইজেশনের আওতায় আনা হয়। জেলখানায় দুটি ব্যাচকে ডি-রেডিকালাইজেশন করা হয়েছে। কাশিমপুর কারাগারে আটজন আটজন করে ১৬ জনকে এই প্রোগ্রামের আওতায় এনেছি। যারা জামিন পাবেন বা সাজার মেয়াদ শেষ হতে আরও দুই-একবছর লাগবে তাদেরকেও নিয়ে এই প্রোগ্রাম করেছি।’

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘জঙ্গিদের বিষয়ে র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি রয়েছে। র‍্যাব একের পর এক শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের গ্রেফতার করেছে। ধারাবাহিক অভিযানের ফলে জঙ্গিরা এখন মাথা চাড়া দিতে পারছে না। এরপরেও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না।’

আরও পড়ুন

জামিন নেওয়া জঙ্গিদের বিষয়ে কমান্ডার আরাফাত বলেন, ‘জামিন পাওয়া জঙ্গিদের ক্ষেত্রে নিয়মিত নজরদারি রয়েছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয় সে মামলাগুলো মনিটরিং করা হয়। এছাড়া সাইবার স্পেসে যাতে কেউ উগ্রবাদ ছড়াতে না পারে সেজন্য সাইবার ওয়ার্ল্ডেও নজরদারি করা হয়।’

পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এটিইউ, সিটিটিসি ও র‍্যাব যেভাবে কাজ করছে, তাতে মনে করি জঙ্গিদের হামলার কোনো সামর্থ্য নেই। তবে জঙ্গিবাদের বিষয়ে পরিতৃপ্তি থাকা যায় না। পরিতৃপ্তি থাকলেই জঙ্গিরা ভেতরে ভেতরে কাজ করে। আমরা অ্যালার্ট আছি। সামগ্রিকভাবে খারাপ কিছু আশা করছি না।’

সেদিন যা ঘটেছিল

২০১৬ সালের ১ জুলাই দিনটি ছিল শুক্রবার। সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে খবর আসে গুলশানে ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে’ পুলিশের গোলাগুলি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানা গেলো এক রেস্টুরেন্টে সশস্ত্র হামলাকারী ঢুকে বেশ কয়েক জনকে জিম্মিও করেছে।

‘বাংলাদেশে এটিইউ, সিটিটিসি ও র‍্যাব যেভাবে কাজ করছে, তাতে মনে করি জঙ্গিদের হামলার কোনো সামর্থ্য নেই। তবে জঙ্গিবাদের বিষয়ে পরিতৃপ্তি থাকা যায় না। পরিতৃপ্তি থাকলেই জঙ্গিরা ভেতরে ভেতরে কাজ করে। আমরা অ্যালার্ট আছি। সামগ্রিকভাবে খারাপ কিছু আশা করছি না।’- এস এম রুহুল আমিন, পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান

কিন্তু ঘটনাটা আসলে কী? গুজব নাকি সত্য-সেটি নিশ্চিত হতেও ঘণ্টা খানেক সময় চলে যায়। পরে জানা যায়, হামলাকারীরা ওই রেস্টুরেন্টে থাকা বিদেশি নাগরিকসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করেছে। এক পর্যায়ে জানা যায়, গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে।

জিম্মি সংকটের ঘটনায় ১ জুলাই সন্ধ্যারাত থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত সারা বিশ্বের গণমাধ্যমের নজর ছিল হলি আর্টিসান বেকারির দিকে।

গুলশানে পুলিশের সহকারী কমিশনার আশরাফুল করিম জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। রাত ৯টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান প্রত্যক্ষদর্শীরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোলাগুলিতে আহত হন বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

রাত ১০টার দিকে পুলিশ, র‍্যাব এবং আধা সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কয়েকশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থান নেন। গণমাধ্যম কর্মীরাও ৭৯ নম্বর রোডের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান নেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে হাসপাতালে মারা যান বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। এর কিছুক্ষণ পরই ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রবিউল করিম নিহত হন।

এর মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে তৎকালীন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, হলি আর্টিসানের ভেতরে অন্তত ২০ জন বিদেশিসহ কয়েকজন বাংলাদেশিও আটকা পড়েছেন। ভেতরে যারা আছেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য তারা বিপথগামীদের সঙ্গে কথা বলতে চান।

রাত ৪টা পর্যন্ত অস্ত্রধারীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আইএসের দায় স্বীকার

রাতেই ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের বার্তা সংস্থা বলে পরিচিত ‘আমাক’ এ গুলশান হামলার দায় স্বীকার করে ২০ জন নিহত হওয়ার কথা জানায়। আইএসের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের ‘সৈনিক’ বলে দাবি করে, হামলার দায় নেয় তারা।

২ জুলাই অভিযানের ঘটনাক্রম

সকাল ৭টা ৩০ মিনিট: রাতভর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র‍্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়।

৭টা ৪৫ মিনিট: কমান্ডো বাহিনী অভিযান শুরু করে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দলের সদস্যরা রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।

সকাল সোয়া ৮টা: রেস্টুরেন্ট থেকে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ছয়জনকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পাশের একটি ভবন থেকে একজন বিদেশি নাগরিক তার মোবাইলফোনে সেটি ধারণ করেন।

সকাল ৮টা ৫৫: ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা। গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে গোয়েন্দারা।

সকাল ৯টা ১৫: অভিযান শেষ হয়। কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে প্রায় ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়।

‘থান্ডারবোল্ট’ নামে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা যে অভিযান চালায় সেখানে জঙ্গি হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়েন। তারা হলেন-মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।

সকাল ১০টা: ৪ জন বিদেশিসহ ১৩ জন জীবিত উদ্ধারের খবর জানানো হয়। রেস্টুরেন্টের ভেতরে অজ্ঞাত পাঁচজনের মরদেহ পাওয়ার কথা পুলিশ জানায়।

বেলা ১১টা ৫০: অভিযানে জঙ্গিদের ৬ জন নিহত এবং একজন ধরা পড়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়।

টিটি/এমএমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।