মতিউরের বিরুদ্ধে পঞ্চম দফা অনুসন্ধানে দুদক
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত ইফাতের কথিত বাবা জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের সদস্য মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চারবার অনুসন্ধান করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবারই অনুসন্ধান পর্যায় থেকে শেষ হয়েছে কার্যক্রম। এক ধরনের অলিখিত ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া হয়েছে মতিউরকে। মতিউরের বিরুদ্ধে ফের অনুসন্ধান শুরু করতে চলেছে দুদক।
ছাগলকাণ্ডের পর মতিউরের নামে-বেনামে শতশত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য সামনে এসেছে। এছাড়া মতিউরের সন্তানদের বিলাসবহুল গাড়িও, পাখি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এবার পঞ্চম বারের মতো তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হচ্ছে।
এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ১৮ বছরের ব্যবধানে ২০০৪,২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে মোট চারবার অনুসন্ধান করে দুদক। তবে নথিভুক্তির মাধ্যমে এসব অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে দুদক। অর্থাৎ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে মতিউর রহমানকে নিয়ে কমিশনের অনুসন্ধান ও পরবর্তী কার্যক্রম থেমে যায়।
সূত্র জানায়, দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মইনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে ৪ জুনের কমিশন সভায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে পঞ্চম বারের মতো অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একজন উপপরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধানী টিম গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে সদস্যরা কাজও শুরু করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, অনুসন্ধান টিমের পাশাপাশি পরিসমাপ্তি হওয়া চারটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও তৎসংশ্লিষ্ট নথি খুঁজে বের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নথি খুঁজে না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও জানানো হয়েছে।
এদিকে, রোববার (২৩ মে) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মো. মতিউর রহমানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
১৯৯৬ ও ১৯৯৭ এই দুই বছর বেনাপোল বন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার ছিলেন মতিউর রহমান। সে সময়ই তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া ঘুস নেওয়া ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
অভিযোগ আছে, দুই বছর দায়িত্ব পালনকালে বেনাপোল বন্দর থেকেই তিনি অঢেল টাকা কামিয়েছিলেন। দেশে-বিদেশে অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ করেছেন এই কর্মকর্তা। এসব সম্পদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক তার বিরুদ্ধে প্রথম অনুসন্ধান টিম গঠন করে ২০০০ সালের দিকে। তখন দীর্ঘ সময় অনুসন্ধান ঝুলিয়ে রেখে ২০০৪ সালে অভিযোগ পরিসমাপ্তি করা হয়।
মতিউরের কত সম্পদ রয়েছে, সেটি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরে তার বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। এছাড়া মতিউরের শেয়ারবাজারে তার বিপুল বিনিয়োগের খবরও বের হয়েছে। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হলেও শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ারের বড় ব্যবসায়ী। তিনি নিজেও বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ওই কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে কম দামে কিনে নিয়ে পরে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে অনেক মুনাফা করেছেন।
নিজের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ধারণা মানুষ হিংসা থেকে এই ধরনের কাজ (অভিযোগ দিচ্ছে দুদকে) করছে। সহকারী কমিশনার থেকে যখন ডেপুটি কমিশনার হচ্ছি তখন আমার বিরুদ্ধে বেনামে চিঠি লেখা হয়েছে। দুদকে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দুদকের শক্তিশালী কর্মকর্তা আক্তার হামিদ এর তদন্ত করেছেন। ডেপুটি কমিশনার থেকে জয়েন্ট কমিশনার হওয়ার সময় ও একই ধরনের বেনামী চিঠি দেওয়া হয়। আবার তদন্ত হয়। জয়েন্ট কমিশনার থেকে এডিশনাল কমিশনার হওয়ার সময়ও একই কাজ হয়। এখন আবার আমি এনবিআরের সদস্য হচ্ছি, নানাভাবে আমাকে এখন হয়রানি করা হচ্ছে।
একাধিক সূত্র ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে নিজ নামে অর্ধশত কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে মতিউরের। ছাগলকাণ্ডে আলোচিত ইফাতকে কিনে দিয়েছিলেন প্রাডো, প্রিমিও ও ক্রাউনের মতো ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি। কিনে দিয়েছেন দামি দামি পাখিও। এসব ছবি ফেসবুকে হয়েছে ভাইরাল।
এছাড়া নামে-বেনামে মতিউর রহমানের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের খবর বেরিয়েছে। ঢাকাতেই একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে মতিউর রহমানের স্ত্রী-সন্তান ও ঘনিষ্ঠদের নামে। ঢাকার বাইরে সাভার, গাজীপুর, নরসিংদী, বরিশালে জমি, কারখানা, রিসোর্ট রয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি মুঠোফোনে কল ও খুদে বার্তার কোনোটিতেই সাড়া দেননি।
গত ২০ জুন ঢাকার এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে মতিউর রহমানের বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকেরা। তখন এনবিআরের চেয়ারম্যান প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘এটা কোনো প্রশ্ন নয়। এ নিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেবো না।’
এসএম/এসএনআর/জিকেএস