অধিগ্রহণের জমির দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া সহজ হচ্ছে

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা মাসুদ রানা , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৮ পিএম, ১৮ জুন ২০২৪

অধিগ্রহণের জন্য নির্বাচিত জমির দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে যাচ্ছে সরকার। এর ফলে নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে অধিগ্রহণের জমির উচ্চমূল্য নির্ধারণের সুযোগ কমবে। একই সঙ্গে অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ফসল ও বৃক্ষের পাশাপাশি যে কোনো অবকাঠামো ও স্থাপনার জন্যও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা ভূমির বিক্রয়কারী বা মালিকের জন্য হতে পারে স্বস্তির খবর।

সরকার অধিগ্রহণ করা জমিতে থাকা ফসল ও বৃক্ষের পাশাপাশি যে কোনো অবকাঠামো ও স্থাপনার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের পথ করে দিতে ২০১৭ সালের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে। এজন্য ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন (সংশোধন), ২০২৪’ এর খসড়া করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

অধিগ্রহণ করা ভূমির ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের সময় কোন কোন বিষয়গুলোকে বিবেচনায় আনতে হবে তা আরও স্পেসিফিক করে দেওয়া হবে। এর ফলে যৌক্তিকভাবে ভূমির ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ হবে।- যুগ্ম সচিব মাহমুদ হাসান

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিগ্রহণ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মো. মাহমুদ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনটি ২০১৭ সালে প্রণয়ন করা হয়। এর মধ্যে বেশ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞতাও হয়েছে আমাদের। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, অধিগ্রহণ করা ভূমির ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের সময় কোন কোন বিষয়গুলোকে বিবেচনায় আনতে হবে তা আরও স্পেসিফিক করে দেওয়া হবে। এর ফলে যৌক্তিকভাবে ভূমির ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ হবে।

আরও পড়ুন

আইনটির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়াসহ আরও কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর সংশোধিত খসড়াটি মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে বলেও জানান যুগ্ম সচিব।

এতদিন স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে নোটিশ জারির ১২ মাস আগে ওই সম্পত্তির পারিপার্শ্বিক এলাকার সমশ্রেণির এবং সমান সুবিধাযুক্ত সম্পত্তি যে দামে কেনাবেচা হয়েছে সেই দাম গড় করে ওই সম্পত্তির দাম নির্ধারণ করা হতো।

সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদনপত্র জারি এবং ক্ষেত্রমতে সরকারের পূর্বানুমোদনের আগের ১২ মাসের সংশ্লিষ্ট মৌজার সমশ্রেণির জমির ক্রয়-বিক্রির গড় মূল্যের আলোকে জমির দাম নির্ধারণ করতে হবে।

অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে এতদিন স্থাবর সম্পত্তিতে থাকা ফসল বা বৃক্ষের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতো। এ বিধান বদলে সংশোধিত খসড়ায় ফসল ও বৃক্ষের পাশাপাশি যে কোনো অবকাঠামো ও স্থাপনার জন্যও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে

এতে আরও বলা হয়, কোনো কারণে ওই সময়ে সংশ্লিষ্ট মৌজায় কোনো জমি কেনাবেচা না হলে নিকটতম মৌজার সমশ্রেণি ও সমান সুবিধাযুক্ত জমির বিক্রয় দলিলকে মূল্য নির্ধারণের জন্য বিবেচনা করতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের হার আগের মতোই রাখা হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদনপত্র জারির এক বছরের মধ্যে জেলা প্রশাসনকে অধিগ্রহণ প্রস্তাব দাখিল করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রস্তাব দাখিল না করলে প্রশাসনিক অনুমোদন বাতিল বলে গণ্য হবে এবং নতুন করে এই অনুমোদনপত্র জারি করতে হবে।

অধিগ্রহণের জন্য নির্বাচিত জমিতে কী কী জিনিস রয়েছে তা জমির মালিককে সঙ্গে নিয়ে যৌথ তালিকা করতে হয়। এতদিন যৌথ তালিকা প্রস্তুতের সময় স্থাবর সম্পত্তিতে থাকা ফসল বা বৃক্ষের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতো। এ বিধান বদলে সংশোধিত খসড়ায় ফসল ও বৃক্ষের সঙ্গে যে কোনো অবকাঠামো ও স্থাপনার জন্যও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

ভূমির ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে এতদিন ছয়টি বিষয়কে বিবেচনা করা যেতো না। এসবের সঙ্গে আইনে নতুন করে আরও একটি বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া ভূমির ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অনুমোদনপত্র জারির ১২ মাসের মধ্যে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রিয় দলিলকে আমলে নেওয়া হবে না বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ক্ষতিপূরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কীভাবে দেওয়া যাবে সে বিষয়ে বর্তমান আইনে কিছু বলা নেই। সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে ইলেক্ট্রনিক বা অন্য কোনো আধুনিক বা সুবিধাজনক পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে হবে।

সংশোধিত খসড়ায় একটি উপধারা যোগ করে বলা হয়েছে, অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল কার্যক্রমে ডিজিটাল, কারিগরি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করা যাবে। অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করতে দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থাকে নিয়োগ, সেবা বা পরামর্শ কেনা যাবে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আনুষঙ্গিক খাত থেকে নির্বাহ করা যাবে।

আরবিট্রেটর কর্তৃক ধার্য করা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ জেলা প্রশাসকের ধার্যকৃত ক্ষতিপূরণের চেয়ে বেশি হলে আরবিট্রেশন আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে, যতদিন পর্যন্ত ওই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান বা প্রদানের প্রস্তাব করা না হবে ততদিন পর্যন্ত প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধানটি বর্তমান আইন থেকে বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরএমএম/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।