আনারকে হত্যার পর চেয়ারে বেঁধে রাখার ছবি প্রকাশ্যে
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে হত্যার পর বেঁধে রাখার একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।
ওই ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যার পর একটি চেয়ারে তার দুই হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। গামছা দিয়ে বাঁধা হয় গলা। সাদা কাপড় দিয়ে বাঁধা হয় মুখ এবং কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা হয় মাথা।
কসাই জিহাদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে, আনারকে হত্যা করার পর ওই ফ্ল্যাটে একটি চেয়ারের সঙ্গে এভাবে বেঁধে রাখা হয়। এরপর সিদ্ধান্ত হয় টুকরো টুকরো করে মরদেহ কাটার। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক মরদেহ থেকে মাংস আলাদা করে বাথরুমে ফেলে ফ্ল্যাশ করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, অজ্ঞান করার রাসায়নিক ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে আনারকে বালিশ চাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি খুনিরা। আনারকে চেয়ারে বসিয়ে তার হাত ও পা শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়।
জিহাদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ফ্ল্যাটের বাথরুমে টুকরো টুকরো করে আনারের দেহাংশ ফ্ল্যাশ করা হয়।
আরও পড়ুন
- আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু সদুত্তর দিতে না পারলে গ্রেফতার: হারুন
- অপরাধীদের ছাড়িয়ে নিতে তদবির হচ্ছে, বড় বড় জায়গার ফোন আসছে
- আনারকে হত্যার পর ছবি দেখিয়ে কেউ লাভবান হয়েছে কি না তদন্ত চলছে
এর আগে ওই ফ্ল্যাটের একটি রুমে আনারকে প্রথমে স্বাগত জানান সিলিস্তি রহমান। পরে সেখানে যান জিহাদ। তখন সিলিস্তিকে অন্য রুমে যেতে বলা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, আনারের মরদেহের কোনো টুকরো যেন কোনদিন না খুঁজে পাওয়া যায় সেজন্য সিয়াম এবং জিহাদকে ব্যাবহার করা হয়। তারা এমন পদ্ধতি ব্যবহার করেন যেন একজনের তথ্য অন্যের কাছে না যায়। কাটআউট পদ্ধতিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
এদিকে আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি।
বুধবার (১২ জুন) হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। সে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মিন্টু যদি কোনো সদুত্তর দিতে না পারেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা (গ্রেফতার) নেবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে আসি। আমরা যখন কাউকে নিয়ে আসি অবশ্যই কিছু তথ্য-উপাত্ত থাকে। প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদে গ্যাস বাবু অকপটে স্বীকার করেন যে, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া ঘাতক শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছিলেন। শিমুল ভূঁইয়া গ্যাস বাবুকে এমপি আনার হত্যার পর ছবি দেখিয়েছেন।
আরও পড়ুন
- ভবিষ্যতে রাজনীতি করবো: ডরিন
- আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড শাহীনের বাসা থেকে দুটি গাড়ি জব্দ
- এমপি আনার হত্যা: ফেঁসে যাচ্ছেন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় এমপি আনারের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের।
গত ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামের একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। এর পর থেকেই তার মরদেহের সন্ধানে নামে কলকাতা পুলিশ। সরেজমিন পর্যবেক্ষণে ঢাকা থেকে গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদও যান কলকাতায়।
টিটি/এমকেআর/জিকেএস