বাংলাদেশের হাওর ও জলাভূমিগুলো অপার সম্ভাবনার আধার
হাওর ও জলাভূমিগুলোর সম্পদকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে। বাংলাদেশের হাওর ও জলাভূমিগুলো অপার সম্ভাবনার আধার। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিহার্য।
রোববার (৯জুন) সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর, ‘আমরা নারী’ ও সমুদ্র অর্থনীতি ও পরিবেশ বিষয়ক রিপোর্টারদের সংগঠন ‘মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের (এমজেএন)’ যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আখতারুজ্জামান বলেন, দেশের হাওর ও জলাভূমি সংরক্ষণে এই অধিদপ্তর আন্তরিকভাবে কাজ করছে। দেশের সব জলাভূমি সংরক্ষণে এবং এগুলোর উন্নয়নে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি এই ব্যাপারে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি বলেন, আমরা টুনা মাছ ধরতে পারি না। অথচ জাপান আমাদের এখান থেকে এই মাছ ধরে জাহাজেই প্রসেসিং করে বাজারজাত করছে।
মো. আখতারুজ্জামান আরও বলেন, আশির দশকে বাংলাদেশে বন ছিল ৭ শতাংশ, থাকতে হবে ২৫ শতাংশ। বর্তমানে ১৭ শতাংশ। দেশের ৮০ শতাংশ এলাকা বছরের ৮ মাস ধরে সবুজ থাকে। আমরা ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করছি। হাওরে ৭ মাস পানি থাকে। তখন মানুষের কাজ থাকে না। এই সময় তারা হাওর থেকে মাছ ধরে থাকে।
আরও পড়ুন>
তিনি মনে করেন, বর্তমান সময়ে হাওর ও জলাভূমিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পলি। শুধু পলি নয়, পাথর ও বালিকণাও রয়েছে। প্রতি বছর কমপক্ষে এক বিলিয়ন মেট্রিক টন পলি পড়ে। এতে করে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। দেশের ৭১ শতাংশ জিডিপি আসতে পারে মিঠা পানির মাছ রপ্তানি করে। ধানের চেয়ে মাছ চাষে তিনগুণ বেশি লাভ। মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিলে এক কোটি মাছ পালনে ১০ কোটি টাকা ব্যয় করলে তা ২ হাজার কোটি টাকায় বিক্রি করা সম্ভব।
এহসানুল হক জসীম তার প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, সরকারের অনেক প্রকল্পের কারণে হাওর নষ্ট হচ্ছে। হাওর অঞ্চলের মানুষজনের একটা বড় অংশ শিক্ষার সুযোগ সুবিধা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত। ইদানিং মারাত্মক আকারে বন্যা দেখা দিচ্ছে। বজ্রপাতে মারা যায় অনেক মানুষ। কিন্তু এসবের খবর মিডিয়ায় কম আসে।
তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের ওয়াল ওয়েদার রোডের কারণে হাওরের পানি যেতে পারে না। এতে ক্ষতি হচ্ছে। পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যা হওয়ার ক্ষেত্রে এটা অন্যতম কারণ। সেই বন্যায় ১০০ জনের মতো মানুষ মারা গেছে দাবি করে তিনি বলেন, এই তথ্য গণমাধ্যমে আসেনি। হাওরের সংবাদগুলো যথাযথভাবে গণমাধ্যমে তুলে আনার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
'আমরা নারী’ এর ফাউন্ডার এম এম জাহিদুর রহমান বিপ্লবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ’হাওর সংরক্ষণ ও উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকা’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি এহসানুল হক জসীম।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এর পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম তানভীর হাসান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমদ, সেভ আওয়ার সি এর মহাসচিব গাজী মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, বাংলাদেশ পোস্ট পত্রিকার সিটি এডিটর নাসিমা আক্তার সোমা, মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি রাশেদ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক কেফায়েত শাকিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমদ, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক গাজী মিজানুর রহমান প্রমুখ।
আরএএস/এসআইটি/এএসএম