ঢাকার হাটগুলোতে আসছে পশু, এখনো জমেনি কেনাবেচা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১৩ পিএম, ০৯ জুন ২০২৪

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পশু নিয়ে এসব হাটে আসতে শুরু করেছেন খামারি ও কারবারিরা। তবে এখনো হাটগুলোতে বেচাকেনা জমে ওঠেনি। অনেকে এখন হাটে গিয়ে ঘুরে পশু দেখছেন ও দরদাম করছেন।

চূড়ান্ত হওয়া ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ছয়টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) বসবে ১০টি হাট। এর বাইরে ডিএনসিসির গাবতলী ও ডিএসসিসির সারুলিয়ায় আরও দুটি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এ দুটি হাটে নিয়মিত গরু, মহিষ ও ছাগল বিক্রি হচ্ছে। তবে কোরবানি উপলক্ষে সেসব হাটেও পশু বেচাকেনা শুরু হয়নি।

আগামী ১৭ জুন দেশে ঈদুল আজহা উদযাপন হবে। এ হিসেবে ঈদের বাকি আর মাত্র সাতদিন। রোববার (৯ জুন) ঢাকার স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সাধারণত ঈদের দু-তিনদিন আগে থেকে ঢাকায় পশু বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হয়। এখন যারা হাটে আসছেন তাদের বেশিরভাগই ঘুরে পশু দেখছেন। কেউ কেউ দরদামও করছেন। এ বছরও ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু।

আরও পড়ুন

এবারের ঈদে মোট ২০টি হাট ইজারায় দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি। এর মধ্যে ডিএনসিসির গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটসহ ৯টি এবং ডিএসসিসি সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটসহ ১১টি পশুর হাট বসাতে চেয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনাসহ নানা কারণে অস্থায়ী হাটের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে আফতাবনগরে হাট বসানো নিয়ে দুই সিটি করপোরেশন দরপত্র আহ্বান করলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় তা বন্ধ আছে।

ঢাকার হাটগুলোতে আসছে পশু, এখনো জমেনি কেনাবেচা

ডিএনসিসির ৬ অস্থায়ী পশুর হাট বসবে যেখানে
উত্তরা দিয়াবাড়ীর ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন খালি জায়গা, তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত মস্তুল চেকপোস্ট ও তার পাশের পশ্চিমপাড়ার খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) সংলগ্ন খালি জায়গা, ভাটারা সুতিভোলা খাল সংলগ্ন খালি জায়গা এবং মোহাম্মদপুর বছিলা পশুর হাট। এসব হাটের ইজারাও চূড়ান্ত করেছে ডিএনসিসি। হাট সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের কার্যাদেশও দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে গাবতলী গবাদি পশুর হাটের (স্থায়ী) ইজারাও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কাছের খালি জায়গায় আরও এক সপ্তাহ আগ থেকেই পশু আসা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার মো. হোসেন খান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক, পিকআপভ্যানে হাটে গরু নিয়ে আসছেন কারবারিরা। তাদের গরু রাখার জন্য সব ব্যবস্থা হাটে রয়েছে। তবে এখনো বেচাকেনা শুরু হয়নি। অনেকেই হাটে ঘুরে গরু দেখছেন। দরদাম করছেন। আশা করি, ঈদের দু-তিন দিন আগে থেকে হাটে বেচাকেনা শুরু হবে।

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটসহ এখন পর্যন্ত ডিএনসিসির সম্পতি বিভাগ সাতটি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছে। উত্তরার ভাটুলিয়া সাহেব আরী মাদরাসা সংলগ্ন খালি জায়গায় পশুর হাট ইজারা প্রক্রিয়া চলমান। আশাকরি দ্রুত সময়ে এ হাটের ইজারাও চূড়ান্ত হবে।

ডিএসসিসির ১০ অস্থায়ী পশুর হাট বসবে যেখানে
হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ ক্লাবের কাছের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দনিয়া কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ডের কাছের খালি জায়গার এবং কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন খালি জায়গা। এসব হাটের ইজারাও চূড়ান্ত করেছে ডিএসসিসি। হাট সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের কার্যাদেশও দিয়েছে সংস্থাটি।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, এরই মধ্যে ডিএসসিসির ১০টি পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব হাটের কার্যাদেশও সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের দেওয়া হয়েছে। এখন তারা হাট বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি হাটগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ডিএসসিসিও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হাটে বাড়ছে গরু, জমেনি কেনাবেচা
সরেজমিনে রোববার (৯ জুন) দেখা যায়, দনিয়া কলেজের সামনে তথা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে ফাঁকা জায়গায় বাঁশ পুতে, ছামিয়ানা টানিয়ে শত শত গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। হাটের সীমানা যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার থেকে প্রায় শনিরআখড়া পর্যন্ত চলে গেছে। হাটে ট্রাক ও পিকআপে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। তবে হাট এখনো জমে উঠেনি। অনেককে দরদাম করতে দেখা গেছে। ধোলাইখাল, রহমতগঞ্জে পশুর হাটেও দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র।

ঢাকার হাটগুলোতে আসছে পশু, এখনো জমেনি কেনাবেচা

দনিয়া কলেজ হাটে গত শুক্রবার (৭ জুন) আটটি গরু নিয়ে আসেন আলমগীর হোসেন। আলাপকালে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, হাটে বেচাকেনা শুরু না হলেও অনেকেই দরদাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে পশুর ছবি তুলছেন। ঈদের দু-একদিন আগে মূলত বেচাকেনা হয়।

আরও পড়ুন

ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খোকা মাঠের সামনে বাঁশের খুঁটিতে চারটি গরু বেঁধে রেখেছেন ফরিদপুরের আজগর আলী। তিনি জানান, প্রতি বছরই এই হাটে তিনি গরু নিয়ে আসেন। এবারও এসেছেন। গরু বিক্রির বাজার ভালো যাবে বলে আশা তার।

নারিন্দার বাসা থেকে ধোলাইখাল হাটে গরু দেখতে যান মঞ্জুরুল হক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বছরই ঈদের আগের দিন রাতে কোরবানির পশু কিনি। এবারও ঈদের আগের দিনই কিনবো। তবে এখন গরুর বাজারদর কেমন তা জানতেই হাটে আসছি।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই গরুর দাম বাড়ছে। বাধ্য হয়ে বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কোরবানির পশুর দাম নাগালের বাইরে যাবে।

আফতাবনগরে হাট বসছে না
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর ধারা ৩(২) ও ১ম তফসিল অনুযায়ী, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) বাড্ডা থানার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। যা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এবার আফতাবনগরে পশুর হাট বসানোর জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটিই পৃথকভাবে ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেয়।

ঢাকার হাটগুলোতে আসছে পশু, এখনো জমেনি কেনাবেচা

পরে ওই দুই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে এবং হাটের কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়টি সামনে এনে উচ্চ আদালতে রিট করেন জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির (আফতাবনগর সোসাইটি) সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম কামাল। এ রিটে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

পরে রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৮ মে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ আফতাবনগরে গরুর হাট বসানোর ইজারার বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে। একইভাবে গত ৩ জুন আফতাবনগরে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ফলে আসন্ন ঈদে আফতাবনগরে গরুর হাট বসাবে না বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন ও ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান।

এমএমএ/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।