তাজুল ইসলাম

স্থানীয় নির্বাচনে আইন করে দলীয় প্রতীক পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫৪ পিএম, ০৮ জুন ২০২৪
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইন করে দলীয় প্রতীক পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আইনটা এমনভাবে করা আছে- ভোট দলীয় প্রতীকে হতে পারে, আবার নির্দলীয় প্রতীকে হতে পারে। এক্ষেত্রে আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই।’

শনিবার (৮ জুন) ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে চ্যালেঞ্জ ও নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সেমিনারের আয়োজন করে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)।

২০১৫ সালে স্থানীয় সরকারের আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন হয়। এখনো আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। যদিও এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়নি।

এ প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডেমোক্রেসির সুযোগ থাকার কারণে মানুষ এই বিতর্ক করতে পারছে। বিতর্ক থাকবে না এটা ঠিক না। দলীয় প্রতীক কিংবা দলীয় প্রতীকহীন- আমি দুইটির কোনোটার পক্ষে-বিপক্ষে নই।’

স্থানীয় নির্বাচনে আইন করে দলীয় প্রতীক পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই

জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে এমন কোনো লিগ্যাল ফ্রেম (আইনি কাঠামো) নেই বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘একীভূত আইন মাদার ল’ করে এক আইনের মধ্যে করতে পারি। আমাদের সময় এসেছে ভাবার এগুলো একীভূত করা যায় কি না। অর্ধেকের বেশি পৌরসভা তাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। গ্রাম ও শহরের বিভক্তি খুব ক্ষীণ হয়ে গেছে। যদি আমরা মাদার ল’ করি- অবশ্যই এখানে মার্কা (প্রতীক) থাকবে। একক তফসিলে একই দিনে ভোট করা সম্ভব, নির্বাচনের খরচ কমবে।’

তবে উপজেলা স্বতন্ত্র ইউনিট হবে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘(স্থানীয় সরকার নির্বাচনে) প্রতীক হওয়ার কথা ছিল না। প্রতীক দেওয়ার অর্থ হচ্ছে কেন্দ্রের হাতে থাকা। প্রতীক না দিলে যে সুবিধা হয় প্রচুর লোক এখানে অংশগ্রহণ করতে পারে। একটা দলের সুবিধা-অসুবিধার জন্য এই প্রতীক আনা হয়েছে। প্রতীকের কোনো প্রয়োজন নেই। আগে যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকুক।’

নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘কোথাও আদৌ কোনো নির্বাচন হয় না। প্রথমত, যে দল ক্ষমতায় আসে তারাই লোক বসিয়ে দেয়। যেমন মালয়েশিয়া, এখানে সরাসরি নির্বাচন হয় না। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়। স্থানীয় সরকারের কিছু পদে নির্বাচন হয়, কিছু পদ সংরক্ষিত থাকে।’

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণমূলক করতে হবে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। জনগণের সম্পৃক্ততা, জনগণের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। সংসদ সদস্যদের ২৫ কোটি টাকা দেওয়া সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, হুইপ তাদের সবাইকে স্থানীয় উন্নয়নে যুক্ত হওয়া সংবিধান পরিপন্থি। সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে করতে হবে।’

স্থানীয় নির্বাচনে আইন করে দলীয় প্রতীক পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই

স্থানীয় সরকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক স্তর বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তিনি বলেন, ‘উপজেলা স্তরটা শক্তিশালী করা উচিত। (উপজেলা পরিষদ) পরিচালনার আইন ও বিধি-বিধান অস্পষ্ট ও অসঙ্গতি রয়েছে। যার ফলে প্রশাসনকে অকার্যকর করতে এই আইন যথেষ্ট। একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি। প্রতীকবিহীন ভোট- এখানে ৭০ শতাংশ প্রার্থী ব্যবসায়ী। প্রতীক না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ আছে। ফলে প্রতীক কিংবা প্রতীকবিহীন এটা বড় কথা নয়, রাজনৈতিক শিষ্টাচার বড় কথা।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন বলেন, ‘দলীয় প্রতীক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।’

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আরএফইডি সভাপতি একরামুল হক সায়েম। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবীর।

আইএইচআর/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।