বাজেট ২০২৪-২৫
৪ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও গৃহায়ন থেকে ৪৫৩ কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজধানী, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ৪৫৩ কোটি দুই লাখ টাকা আয়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে আয় থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ১১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
জাতীয় সংসদে আজ বৃহস্পতিবার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ওই বাজেট প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের চিত্রও তুলে ধরা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় জমি হুকুম দখলের ব্যবস্থা করা ও দখল করা জমি সুষ্ঠুভাবে বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি দূর করা, পার্ক ও খেলার মাঠ নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের এলাকাগুলোর সামগ্রিকভাবে উন্নতি করাই রাজউকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজউকের ব্যয় উদ্বৃত্ত আয় ধরা হয়েছে ২৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যয় উদ্বৃত্ত আয় হয়েছিল ২৪৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনুমোদিত বাজেটে ব্যয় উদ্বৃত্ত আয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২৮২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেটে সংস্থার মোট বিক্রয় রাজস্বের বা পরিচালন আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৪৯৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ৪৫৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এবার বাজেটে পরিচালন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ২০২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে যা ছিল ২১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন
- বাজেট ২০২৪-২৫: দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের
- বাজেট ২০২৪-২৫: দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের
- প্রত্যাশা-প্রাপ্তির দোলাচলের বাজেট, চাপ বাড়বে না কমবে?
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনায় চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক, ভৌত উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন রূপরেখা রয়েছে। চট্টগ্রাম শহর ও এর আশপাশের এলাকার উন্নয়ন এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রাক্কলিত বাজেটে আয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে ২৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এ খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেট ছিল ২৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। যদিও এই অর্থবছরে অনুমোদিত বাজেট ধরা হয় ৩২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বিপরীতে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ৫৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। পরিকল্পিত নগরায়ণ ও আধুনিক খুলনা গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ১৯৬১ সালের ২১ জানুয়ারি এ প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি। আবাসন সমস্যার সমাধান, বাণিজ্যিক ও অর্থনেতিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি, যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করা ইত্যাদি নাগরিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে সংস্থাটি ৫০টির বেশি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে। ফলে খুলনা মাস্টারপ্ল্যান এলাকায় নগরায়ণের নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ব্যয় উদ্বৃত্ত আয়ের পরিকল্পনা করছে ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই খাতে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেটে সংস্থার পরিচালন আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৪৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সংস্থার পরিচালন আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ব্যয় হয়েছিল ৩৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ৬২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় উদ্বৃত্ত আয়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যয় উদ্বৃত্ত ঘাটতি দাঁড়ায় ৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেটে সরকারি অনুদানসহ সংস্থার মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৯৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এ খাতে আয় হয়েছিল ৭৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরের বাসস্থান সমস্যার সমাধান তথা শহরের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এ সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, কার্যক্রম ও লক্ষ্য হচ্ছে- সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধসহ উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাট তৈরি করা। কিস্তি সুবিধার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বরাদ্দ প্রদান করে জনগণের আবাসিক সমস্যা সমাধান করাই কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য। তা ছাড়া দেশের অব্যবহৃত জায়গায় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য পরিকল্পিতভাবে স্বল্পজমিতে বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণপূর্বক জনগণের বাসস্থানের সমস্যা সমাধান করাও প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।
আরও পড়ুন
- বাজেটে কী চান খেটে খাওয়া মানুষ?
- বিদ্যুতে বড় লোকসান, পানি বেচে আসবে লাভ
- এবার বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা
২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে ব্যয় উদ্বৃত্ত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে তা ছিল ৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আসন্ন বাজেটে সংস্থাটির মোট পরিচালন আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ১১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৬১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে আয় ছিল ১১২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আর পরিচালন ব্যয় ৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা।
পর্যটননগরী কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। সেখানে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম একক সমুদ্রসৈকত, বেশ কয়েকটি নৈসর্গিক ছোট ছোট দ্বীপ, পাহাড় ও বনাঞ্চল। শিল্পায়ন, কৃষি উন্নয়ন, মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াকরণের বিশাল সুযোগ রয়েছে এই জেলায়। এসব বিষয় বিবেচনায় ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ কক্সবাজার ও এর সন্নিহিত এলাকার সমন্বয়ে একটি আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটননগরী গড়তে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আয় থেকে ব্যয় বেশি হবে। এ জন্য আগামী অর্থবছরে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ১১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনুমোদিত বাজেটে দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা আয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে ব্যয় উদ্বৃত আয় ছিল ১৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মোট ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে মোট ব্যয় হয় ২১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ফলে ব্যয় উদ্বৃত্ত আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬ কোটি দুই লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেটে মোট আয় যথাক্রমে ৪৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং ৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে যথাক্রমে ৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং ১৪৯ কোটি ৮৩ লাখ। ফলে এই সময়ে ব্যয় উদ্বৃত্ত আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬ কোটি ৪৩ লাখ এবং ব্যয় উদ্বৃত্ত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
এমএমএ/বিএ/এএসএম