জলবায়ু তহবিল আশীর্বাদ নাকি বোঝা?
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যে কয়টি দেশ, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ক্ষতির পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অসুখে পড়ছে মানুষ। দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঝড়-বন্যা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে অপূরণীয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের তাপমাত্রা যত বাড়বে, এ ক্ষতিও তত বাড়বে। এ ক্ষতি কমাতে জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিলসহ নানান খাত থেকে বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য যে তহবিল ছাড় করা হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। অন্যদিকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে এ তহবিল একদিকে যেমন ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না, আবার তা সঠিকভাবে ব্যবহারও করা যাচ্ছে না। ফলে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশ।
উন্নয়নশীল দেশগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সহায়তা দিতে ২০১০ সালে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) গঠন করে জাতিসংঘ। কার্বন নিঃসরণে শীর্ষ দেশগুলো এ ফান্ডের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। জিসিএফ ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সংস্থাটি বাংলাদেশে ৯টি প্রকল্পে এ পর্যন্ত ৪৪১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করেছে।
এ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা বলছে, সুশাসনের মৌলিক মানদণ্ডে জিসিএফের ঘাটতি রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক ও প্রক্রিয়াগত জটিলতা, বৈষম্যমূলক চর্চা ও প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংস্থার একচেটিয়া আধিপত্যে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাড়ছে খরা, বাড়ছে দুর্ভোগ
‘সবুজ জলবায়ু তহবিলে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অভিগম্যতা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবির গবেষণায় বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশে অভিযোজনের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত বছরে ২১৫-৩৮৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হলেও, জিসিএফ মাত্র ৫.৯ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে নগণ্য। তহবিল স্বল্পতা ছাড়াও উন্নত দেশের প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থ সংগ্রহ করে তা ঝুঁকিপূর্ণ দেশে সরবরাহসহ কাঙ্ক্ষিত দায়িত্ব পালন ও সমন্বয়েও জিসিএফের ঘাটতি রয়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ‘কান্ট্রি প্রোগ্রামে’ সরকারি চারটি প্রতিষ্ঠানকে জিসিএফ থেকে স্বীকৃতির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে পাঁচ বছরেও প্রতিষ্ঠানগুলো স্বীকৃতি পায়নি। জিসিএফ সচিবালয় থেকে যথাযথ সহযোগিতার অভাবে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় দুই বছর ব্যয় হয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মধ্য মেয়াদে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কমপক্ষে ১২ হাজার মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এর বিপরীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে অনুমোদন হয়েছে মোট ১ হাজার ১৮৯.৫ মিলিয়ন ডলার। এটি প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র ৯.৯ শতাংশ।
- আরও পড়ুন
জিসিএফ বাংলাদেশের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে: টিআইবি
জলবায়ু পরিবর্তনে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা ডোনাল্ড লুর
এরমধ্যে জিসিএফ বাংলাদেশের জন্য মোট তহবিল অনুমোদন করেছে ৪৪৮.৮ মিলিয়ন ডলার, যা প্রয়োজনীয় অর্থের ৩.৭ শতাংশ। আবার জিসিএফ বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পগুলোতে ঋণ দিয়েছে ৭৫ শতাংশ এবং অনুদান দিয়েছে ২৫ শতাংশ।
‘বাংলাদেশের মতো দেশে অর্থায়নের ক্ষেত্রে জিসিএফ দুর্নীতি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সক্ষমতার ঘাটতির কথা বললেও, ক্ষেত্র বিশেষে নিজেরাই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।’ ড. ইফতেখারুজ্জামান
গবেষণায় আরও দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রকল্পগুলোর জন্য জিসিএফের অর্থছাড়েও বিলম্ব হয়। একটি প্রকল্প অনুমোদনের দীর্ঘ তিন বছর পর প্রথম কিস্তির অর্থছাড় করা হয়েছে। ৯টি প্রকল্পে মোট অনুমোদিত অর্থের মাত্র ১৩.৩ শতাংশ ছাড় করা হয়েছে।
জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, অভিগম্যতার ক্ষেত্রে জিসিএফ শুরু থেকেই এমন শর্ত আরোপ করে রেখেছে, যা উন্নয়নশীল দেশকে প্রায় নিষিদ্ধ করার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই তহবিলের সুফল যাদের পাওয়ার কথা, সেসব ক্ষতিগ্রস্ত দেশের কাছে পর্যাপ্ত এবং প্রত্যাশিত মাত্রায় সহায়তা পৌঁছায়নি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে জিসিএফ বৈষম্যমূলকভাবে বেশি সহায়তা দিচ্ছে। এ সংস্থাগুলোকে অর্থছাড়ের সিংহভাগ দিচ্ছে অনুদান হিসেবে। অথচ উন্নয়নশীল দেশের জাতীয় সংস্থাগুলোকে বেশি দেওয়া হচ্ছে ঋণ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রত্যক্ষভাবে সংকটাপন্ন দেশের ওপর জিসিএফ আরও ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মতো দেশে অর্থায়নের ক্ষেত্রে জিসিএফ দুর্নীতি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সক্ষমতার ঘাটতির কথা বললেও ক্ষেত্রবিশেষে নিজেরাই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ইউএনডিপির জিসিএফ সম্পর্কিত কাজে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এবং চলমান ছয়টি প্রকল্পে মনিটরিং চলমান থাকা অবস্থায় তাদের অ্যাক্রিডিটেশন নবায়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করছে জিসিএফ।
‘টাকা-পয়সা যা আসছে সেগুলো বিভিন্ন নামে বেনামে প্রজেক্ট হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে অনুদানের অর্থ ব্যবহার করে কী ফলাফল পাচ্ছি আমরা নিজেরাও জানি না। যার ক্ষতি হওয়ার তার প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে।’ মোস্তফা কামাল আকন্দ
সংশ্লিষ্টরা জানান, জলবায়ুসহিষ্ণু অবস্থার দিকে উত্তরণের জন্য ২০০৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। নিজস্ব সম্পদ থেকে এই তহবিলে এ পর্যন্ত ৪৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া সরকার এডিপির আওতায় প্রতি বছর ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করছে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলা ও অভিযোজন প্রস্তুতিতে। জলবায়ুর এ অর্থায়নেও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে।
- আরও পড়ুন
অসহনীয় তাপ-শৈত্যপ্রবাহ দিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি
সুন্দরবনে ২২ বছরে ৩২ বার আগুন, পুড়েছে শতাধিক একর বনভূমি: বাপা
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন সংস্থাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় অর্থ দিয়ে আসছে। কিন্তু কোনো শৃঙ্খলা না থাকায় সে অর্থের সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে সরকার বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারত্ব (বিসিডিপি) গঠন করতে যাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে এই প্ল্যাটফর্ম ভূমিকা রাখবে। ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে, ন্যাশনাল অ্যাডাপশন প্ল্যান বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এর আওতায় ২০২৩ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ১১৩টি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই বিনিয়োগের মধ্যে ১৮৪ বিলিয়ন বা ৫২ শতাংশ ব্যয় হবে নতুন পানির উৎস খুঁজে বের করতে। বিনিয়োগের ১৬ শতাংশ খরচ হবে শহরে বনায়ন ও পয়ঃনিষ্কাশনে, বিপর্যয় ও সামাজিক নিরাপত্তায় ১২ শতাংশ, গবেষণা, ইকো সিস্টেম ও জীববৈচিত্র্য উন্নয়নে খরচ হবে বিনিয়োগের বাকি ১২ শতাংশ।
জলবায়ুর অর্থে অনিয়ম প্রসঙ্গে কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, টাকা-পয়সা যেগুলো আসছে সেগুলো বিভিন্ন নামে বেনামে প্রজেক্ট হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে অনুদানের অর্থ ব্যবহার করে কী ফলাফল পাচ্ছি আমরা নিজেরাও জানি না। যার ক্ষতি হওয়ার তার প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে। প্রজেক্ট করে অনেকেই লাভবান হচ্ছে। প্রকল্প হয় জনস্বার্থে। কিন্তু এগুলো যখন বাস্তবায়ন করতে যায়, তখন তা ব্যক্তি স্বার্থে পরিণত হয়। এই মুহূর্তে সবুজ জলবায়ু তহবিল ছাড়া অন্য কোথাও থেকে কোনো অনুদান আমরা পাই না। এই ফান্ডটাও অনেকদিন আটকানো ছিল। নতুন মন্ত্রী আসার পরে আবার নতুন করে ফান্ডটা চালু হয়েছে।
মোস্তফা কামাল আকন্দ আরও বলেন, আগের অনুদানের অর্থের ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের টাকা নিয়ে সেতু, বাসস্ট্যান্ড করার নজির আছে। দাতারা এসব অনিয়ম দেখে টাকার পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছে। ফলে কমিটমেন্টগুলো আসছে না। যেসব ফান্ড আসছে, সেসব খরচে কোনো মনিটরিং নেই, জবাবদিহি নেই। এসব কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফান্ড আসার পর ব্যবহারে অনিয়ম থাকায় দাতারা সরকার কিংবা এনজিওকে বিশ্বাস করে না। এনজিওগুলো টাকা কম পায়।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোথাও অনিয়ম কিংবা সুশাসনের অভাব হলে সেটা নিয়েও কাজ করার সুযোগ আছে।
- আরও পড়ুন
জলবায়ুর বিরূপ আচরণে মৃত্যু বাড়ছে বজ্রপাতে
উচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান ও পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব ফান্ড ব্যবহারে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। অনুদানের অর্থ কীভাবে কাজে লাগাবো, এ প্রশ্নটা বারবার সামনে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। চাহিদার ১০ শতাংশ অর্থও আমরা পাচ্ছি না। যারা ফান্ড দেবে তারা নানা রকম ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। আবার যারা নেবে তাদের অনেকেরই অবকাঠামো তৈরি হয়নি। টাকা আনার পর কোন খাতে কীভাবে ব্যবহার করবে, এমন দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে। তবে আমরা এগিয়েছি, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমরা যে দুর্বল অবস্থানে ছিলাম, সেখানে আর আমরা নেই। কীভাবে টাকা কাজে লাগাতে পারবো সেই পরিকল্পনা আমাদের আছে।’
জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি সবার
একসময় বলা হতো, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীতীর ও উপকূলবর্তী মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সারাদেশের মানুষ। গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে চলতি বছরই প্রথম বাংলাদেশে দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ চলেছে। যশোর, চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। সরকারি হিসাবেই হিটস্ট্রোকে ১৭ জন মানুষ মারা গেছে। তীব্র তাপপ্রবাহে বেশ কয়েকবার হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর, বেশ কয়েকদিন বন্ধ রাখা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শ্রমজীবীদের আয় কমে গেছে। ডায়রিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শিশুসহ নানান বয়সী মানুষ। আবার গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচতে সঞ্চয় ভেঙে বা ঋণ করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র কিনেছেন অনেকে।
‘এসব ফান্ড ব্যবহারে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। অনুদানের অর্থ কীভাবে কাজে লাগাবো, এ প্রশ্নটা বারবার সামনে আসছে।’ ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যার হার, তীব্রতা এবং স্থায়িত্বও বেড়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামোর ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিবছর সংঘটিত হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা বেড়েছে। এতে সীমান্তবর্তী প্রায় ২ কোটি মানুষ সুপেয় পানির সমস্যায় রয়েছে এবং কৃষিকাজেরও ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ শহরমুখী হয়ে পড়ছে।
নদীর বুকে জেগেছে বালুর বিশাল চর
২০২২ সালে প্রকাশিত স্টকহোম এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সংঘটিত ক্ষতি মোকাবিলায় ও মেরামতে বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারগুলো বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) গবেষণা বলছে, গত চার দশকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে দেশের মোট ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা।
জানতে চাইলে কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগে উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এখন ঢাকাসহ সব জেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তীব্র তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি বহুমুখী। প্রভাবটা আগে দেখা যায় উপকূলে। এসব অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ে অবকাঠামোর ক্ষতি হয়। কৃষির জন্য হুমকি তৈরি করে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানির লবণাক্ততা বাড়ে। নারী ও শিশুস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উপকূলীয় এলাকার মতো অন্য এলাকায়ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কম-বেশি দেখা যায়, জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা দেখছি ২২ জেলার পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। সুপেয় পানির সংকট নতুন এক ধরনের সমস্যা তৈরি করছে। যার প্রভাব পড়ছে কৃষি ও স্বাস্থ্যে। এসব অঞ্চল থেকে মানুষ শহরে চলে আসছে। শহরে নানান সংকট ও দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
এসএম/এমএইচআর/এমএমএআর/জেআইএম