চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল নেই কেন?

আবু আজাদ
আবু আজাদ আবু আজাদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৪৭ এএম, ০২ জুন ২০২৪

রাতে বৃষ্টি হলে সকালে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। পানিতে থইথই করে নগরের অধিকাংশ এলাকা। এ সমস্যা নিরসন না হওয়ার জন্য একসময় অর্থ বরাদ্দকে অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই সমস্যা নেই। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

যাতে খরচ হচ্ছে ১৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। কিন্তু এত এত টাকা খরচ করেও জলাবদ্ধতার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। উল্টো অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা বড় রূপ নিয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এ অবস্থায় সংস্থাগুলো পরস্পরকে দায়ী করছে।

কী কারণে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা হচ্ছে? সেই কারণ বের করতে ২০২২ সালে চার সদস্য নিয়ে ‘জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে প্রধান করে এই কমিটি পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে কেন জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না তা জানতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জাগো নিউজ।

১৪২৬৩ কোটি টাকায়ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দূর হয় না কেন?

গোড়াতেই গলদ
গত এক দশকে চট্টগ্রাম নগরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা), পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ- এ ছয়টি রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রতিটির নিজস্ব মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। এসব সংস্থা নিজেদের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটাই চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়ার প্রধান কারণ।

আরও পড়ুন

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত ছিল, তা হয়নি। ফলে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে, যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্পগুলোর কাজে সমন্বয়হীনতাই এখন প্রধান সমস্যা।’ তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ দায়িত্ব নেওয়ার পর এ অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করছেন অনেকে। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে সিটি করপোরেশন ও সিডিএর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং পরস্পরকে দোষ চাপানো চলছে। খাল হয়তো আমরা করছি, কিন্তু ড্রেজিংয়ের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তাই এবার মেয়র মহোদয়কে নিয়ে মাঠে নামব। প্রয়োজনে দুই ভাই খালে নেমে দেখব ময়লা আছে কি না। তারপর খাল পরিষ্কার হলে উনাকে বুঝিয়ে দেব।’
ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান না মেনে প্রকল্প অনুমোদন

১৪২৬৩ কোটি টাকায়ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দূর হয় না কেন?

চট্টগ্রাম শহরের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক জলাবদ্ধতার ঝুঁকির তালিকা মানচিত্র: (ক) নিষ্কাশন অবস্থার মানচিত্র, (খ) জোয়ারের পানির প্রভাবের মানচিত্র এবং (গ) বৃষ্টিপাতের প্রভাবের মানচিত্র।

১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে শহরের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টার্শিয়ারি ড্রেনেজ ব্যবস্থা সুনির্দিষ্ট করেছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম শহরে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে আগ্রহ নেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর। বরং কিছু ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশের ঠিক উল্টো প্রকল্প গ্রহণ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো সরকারি সংস্থা মাস্টারপ্ল্যানের তোয়াক্কা না করে নিজের মতো প্রকল্প গ্রহণ করছে।

মাস্টারপ্ল্যান সবচেয়ে বেশি অমান্য করছে সরকারি সংস্থাগুলো। কোটি টাকা খরচ করে মাস্টারপ্ল্যান করে তা অনুসরণ না করার কারণে একদিকে অর্থের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে পরিকল্পিত নগরী গড়ার পরিবর্তে ‘কংক্রিটের জঙ্গলে’ পরিণত করা হচ্ছে চট্টগ্রামকে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে মাস্টারপ্ল্যানে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি খাল সিডিএ জলাবদ্ধতা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাকি ২১টি খাল খনন করা হচ্ছে না। ৫০০ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে মেগা প্রকল্পে আছে ৩০২ কিলোমিটার। বাকি ১৯৮ কিলোমিটার প্রকল্পে নেই। এছাড়া পরিকল্পনায় দ্রুত বাড়তে থাকা শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য চারটি নতুন খাল খননের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে একটি খালের নির্মাণকাজ ২০১৪ সালে শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি।

১৪২৬৩ কোটি টাকায়ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দূর হয় না কেন?

আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য এবং পরিকল্পনা অনুষদের ডিন মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘নতুন চারটির মধ্যে মাত্র একটি খাল খননের কাজ চলছে। এছাড়া বাকি ৫৭টি খালের ৩৬টি উদ্ধারে কাজ হচ্ছে। কিন্তু এ খালগুলো হলো প্রাইমারি ড্রেন। সেকেন্ডারি ও টার্শিয়ারি ড্রেনগুলো আগের মতোই পুরোনো এবং জরাজীর্ণ। ফলে বৃষ্টির পানি সরু ও জরাজীর্ণ অভ্যন্তরীণ ড্রেনের মাধ্যমে প্রাথমিক খালে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে।’

সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই প্রকল্প
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা দীর্ঘদিনের। বর্তমান সরকার প্রথম ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকল্প অনুমোদন করেছে। কিন্তু স্থানীয় সংস্থাগুলো সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই তড়িঘড়ি করে প্রকল্প হাতে নেয়। ফলে সমস্যা সমাধানে প্রকল্পগুলো কার্যকর হতে পারেনি।

সিডিএর ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছিল ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট। ওই সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালের জুনেই কাজ শেষ করার কথা ছিল।

কিন্তু প্রথম বছরে মূল কাজই শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে। বর্তমান মেয়াদ হচ্ছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এ সময়ও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবে না সিডিএ। সংশোধিত প্রকল্পে বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরেছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।

১৪২৬৩ কোটি টাকায়ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দূর হয় না কেন?

চট্টগ্রাম শহরের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক জলাবদ্ধতার তালিকা মানচিত্র: (ক) অবস্থান (খ) এলাকার ব্যাপ্তি

প্রকল্পটির বিপুল ব্যয় বৃদ্ধির জন্য অনুমানভিত্তিক ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্প নেওয়া ও সিডিএর পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০২১ সালের জুনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প তদারককারী প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সিডিএর প্রকল্পটি নিয়ে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এত বড় প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনটিও সঠিকভাবে করা হয়নি। যেটি করা হয়েছে, সেটিও অনেক ত্রুটিপূর্ণ। আবার প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে অর্থবছরভিত্তিক আর্থিক ও বাস্তব কর্মপরিকল্পনাও ছিল না সিডিএর। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হয়েছে। এখন ব্যয় ও সময় দুটি বাড়ছে।

আরও পড়ুন

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরে কী কারণে জলাবদ্ধতা হয় তা কারও অজানা নয়। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণকারীরা সে কারণ অনুসন্ধানে বেশি মনোযোগী নন। মূলত সেবা সংস্থাগুলোর এই দায়িত্ব অবহেলার কারণে প্রতি বর্ষা মৌসুমেই মানুষকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নগরবাসীর দুর্ভোগ নিরসনে সেবা সংস্থাগুলোকে আন্তরিক হতে হবে।’

জলবায়ু পরিবর্তন
উষ্ণায়নের কারণে আমাদের দেশের ষড়ঋতু চক্র অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। ফলে চট্টগ্রামে একইসঙ্গে অতিবর্ষণ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত কারণে কর্ণফুলী নদীতে পূর্ণিমার সময় অতিরিক্ত জোয়ার হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে মারাত্মক রূপ নিচ্ছে জলাবদ্ধতা।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের জরিপ অনুসারে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চট্টগ্রাম শহরের গড় উচ্চতা এক মিটারেরও কম। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় এ উচ্চতা দশমিক ২ মিটারেরও কম। বিপরীতে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় সমুদ্রের পানির উচ্চতা ০.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত বেড়েছে। এসব এলাকা জোয়ারের পানির গড় উচ্চতা ২.৫ থেকে ২.৭৬ মিটার। অতিবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের পানির স্তর ২.৫ থেকে ৪.৫ মিটার পর্যন্তও বাড়ে। এছাড়া জোয়ারের কারণে চট্টগ্রাম মহানগরের প্রায় ৬৯ শতাংশ এলাকা বছরের নানা সময়ে কম-বেশি প্লাবিত হচ্ছে।

১৪২৬৩ কোটি টাকায়ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দূর হয় না কেন?

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হাত থেকে শহরকে রক্ষার জন্য সিডিএর বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোতে ৪১টি স্লুইসগেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব স্লুইসগেট নির্মাণের কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় বৃষ্টির পানি সময় মতো পাম্প করে বের করা যাচ্ছে না। এটি জলাবদ্ধতা সংকটকের আরেকটি কারণ।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অনেক জেলাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সমুদ্র-তীরবর্তী অঞ্চল হলেও এখানে পাহাড়ের কারণে বর্ষা মৌসুমে বালি-মাটি নেমে আসে। এগুলো জমে কর্ণফুলীসহ বেশ কয়েকটি নদী, খাল কিংবা ড্রেনেজ সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ায় নগরীতে জোয়ারের পানি দীর্ঘসময় ধরে অবস্থান করার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।’

পাহাড়ি বালি মাটি
চট্টগ্রাম একটি পাহাড়ি শহর। প্রতিদিনই এই শহরের কোথাও না কোথাও অসাধু লোকজন পাহাড় কাটছে। বৃষ্টি হলে পাহাড়ের বালুকাময় মাটি ভেসে গিয়ে খালে পড়ে। এভাবে খালগুলো ভরাট হয়ে পানি প্রবাহে বাধা তৈরি করে, যা শহরে জলাবদ্ধতার আরেকটি কারণ। কিন্তু চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংস্থাগুলো জলাবদ্ধতা নিরসনে যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ণ করছে, সেগুলোর বড় দুর্বলতা হলো এখানে পাহাড়ের বালি মাটি আটকানোর কোনো ব্যবস্থা নেই।

অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমরা লাগামহীনভাবে পাহাড়ের মাটি ও এর গাছ কেটে তৈরি করছি বাড়ি ও আসবাবপত্র। ফলে পাহাড়ের মাটি পানি দ্বারা প্রবাহিত হয়ে ড্রেন, নদী, নালা, খাল ভরাট করে এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা দিচ্ছে। অপরদিকে খালের এ মাটি অপসারণ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে। অথচ খাল ভরাট বন্ধে পাহাড়ের বালি মাটি আটকানোর ব্যবস্থা করা জরুরি।’

দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
চট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন তিন হাজার টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, এটি দৈনিকভিত্তিতে মাত্র দুই হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করতে পারে। বাকি এক হাজার টন বর্জ্য ড্রেন ও খালে ফেলা হয়, যা জলাবদ্ধতার আরেকটি কারণ।

সমাজকর্মী শাহরিয়ার খালেদ বলেন, ‘চাক্তাই খালকে চট্টগ্রামের দুঃখ বলা হতো। আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সমীক্ষা রয়েছে। আমরা দেখেছি, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমাধানযোগ্য। নগরের গৃহস্থালির বর্জ্য, বাজারের বর্জ্য, কমিউনিটি সেন্টারের বর্জ্য খালগুলোতে পড়ছে। দীর্ঘদিন পর ঘরে ঘরে বিন দেওয়া হয়েছে কিছু এলাকায়। কিন্তু বিনের ব্যবহার হয় না। কারণ, বর্জ্যগুলো কারা সংগ্রহ করবেন, তার কোনো নির্দেশনা নেই।’

১৪২৬৩ কোটি টাকায়ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দূর হয় না কেন?

চট্টগ্রাম শহরের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক (ক) জলাবদ্ধতার বার্ষিক ফ্রিকোয়েন্সি, (খ) জলাবদ্ধতার গভীরতা এবং (গ) চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার কারণে জল স্থবির সময়কাল (গড়)

শাহরিয়ার খালেদ বলেন, ‘খালগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নাব্য হারিয়েছে। চাক্তাই খালের তলা যখন পাকা করা হয়, তখন আমরা বিরোধিতা করেছিলাম। তখনই খালটি নষ্ট হয়ে গেছে। একসময় চাক্তাই খাল দিয়ে বহদ্দারহাট ও চকবাজারে নৌকা চলত। স্পিডবোটে গ্রাম থেকে শহরে যাওয়া–আসা করতেন বিত্তবানরা। খালগুলো সচল হলে আবার যদি নৌচলাচল করে, তাহলে নগরের যানজটও কমবে।’

জলাশয় ভরাট
পরিবেশ অধিদপ্তরের ১৯৮১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রামে প্রায় ২৫ হাজার পুকুর ও জলাশয় ছিল। কিন্তু একটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে মাত্র ১ হাজার ২৪৯টি জলাশয় অবশিষ্ট ছিল। অর্থাৎ গত চার দশকে চট্টগ্রামের প্রায় ২৪ হাজার জলাশয় নাই হয়ে গেছে।

অথচ চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে এবং তারপর ভূগর্ভে পুনরায় পানির সংস্থান করতে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ খোলা জায়গা থাকা দরকার। কিন্তু শহরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য সিডিএ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে প্রায় সব খোলা জায়গা ব্যবহার করেছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, আগ্রাবাদ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২০১১ সালে ২৪১ ফুট থেকে ২০২১ সালে ৩১২ ফুটে নেমে আসে। শহরের পাহাড়তলী এলাকায় ২০১১ সালে ১৩৬ ফুট থেকে ২০২১ সালে ২৭৪.৬ ফুটে নেমে আসে। খুলশী এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২০১১ সালে ভূপৃষ্ঠের ২২০ ফুট নিচে ছিল, যা ২০২১ সালে ৩৪৫ ফুটে নেমে আসে। বায়েজিদ এলাকায় তা ২০১১ সালে ছিল ১৫৫ ফুট এবং ২০২১ সালে ১৯৮ ফুটে নেমে আসে।

এএজেড/এমএমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।