ফসল রক্ষায় জমি থেকে দ্রুত নোনাজল বের করতে হবে: গওহর নাঈম
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৮ পিএম, ০১ জুন ২০২৪
সম্প্রতি দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এবার দীর্ঘমেয়াদি বেড়িবাঁধের ক্ষতি হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা।
তিনি বলেন, এবারের ঝড়ে খুলনা অঞ্চলের তিন জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু এলাকায় পুরোপুরি এবং কিছু এলাকায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ। এতে বাঁধসংলগ্ন নিচু এলাকায় প্রবেশ করেছে নোনা পানি। ফলে শত শত চিংড়ির ঘেরসহ ফসলি জমি নোনা পানিতে ভেসে গেছে। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে নোনাজল ঢুকে মিষ্টিজলের আধার নষ্ট করে দিয়েছে।
শনিবার (১ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন গওহর নঈম ওয়ারা। এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
বাপার ঘূর্ণিঝড় তথ্য বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালের ২৫ মে উড়ির চর ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল, যাতে মৃত্যু হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জনের। এরপর ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলে চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড়ে নিহত হয়েছিলেন ১ লাখ ১০ হাজার ৬৯ জন। ১৯৯৭ সালের ১৯ মে আকাশ ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু হয় ১৫৫ জনের, আর ক্ষতি হয় আনুমানিক ৯৮২ মিলিয়ন ডলারের।
এরপর ২০০৯ সালের ১৯ এপ্রিল দুর্বলভাবে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বিজলী। এতে বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষতি হয়। আর সাইক্লোন আইলা আঘাত হানে ২০০৯ সালের ২৫ মে। এতে ২৫ জন নিহত, আর ক্ষতি হয় ২২০০ কোটি টাকা।
২০১৩ সালের ১৬ মে দেশে আঘাত হানে মহাসেন। এতে মারা যান ১৭ জন। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আঘাত হানে ২০১৬ সালের ২১ মে। এই ঘূর্ণিঝড়ে ১৬ জন মারা যান। ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানে ৩০ মে ২০১৭ সালে। ২০১৯ সালের ৪ মে ফনির আঘাতে ৮.১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। আর মারা যান ১৮ জন।
২০২০ সালে ২০ মে সাইক্লোন আফানে ক্ষতি হয় ১১০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে মৃত্যু হয় ৯ জনের। ২০২৩ সালের ১৪ মে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় মোখা। সবশেষ ২০২৪ সালের ২৬ মে আঘাত হানে রিমাল।
মূল প্রবন্ধে গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, অনেক জায়গায় ভাটার টানে পানি বেরিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। জলখালাসির পদ বিলুপ্তির পর থেকেই দেশের বেশিরভাগ জলকপাট রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোথাও ভেঙে গেছে কোথাও দেবে গেছে। আমন মওসুম ধরতে হলে মাঠ থেকে জলাশয় থেকে দ্রুত নোনাজল বের করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ভিআইপিদের চলাচল সীমিত করতে হবে। প্রশাসন ত্রাণ কাজে মনোনিবেশ না করে প্রটোকলে তাদের সময় দিতে হয়, ফলে ত্রাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ফটোসেশন মানবাধিকারের সঙ্গে যায় না। এ ধরনের প্রবণতা পরিহার বাঞ্ছনীয়।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রসুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ও বাপার জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটির সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম, বাপার সহ-সভাপতি মুহদুল হক খান।
বাপার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ রফিকুল আলম বলেন, দেশে সাইক্লোন নিয়ে এত বেশি সংকেত থাকায় মানুষের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সংকেত সহজ করা হলে এ ধরনের দুর্যোগের ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। অন্য কোনো দেশেই এত বেশি সিগনাল ব্যবস্থা চালু নাই।
তিনি ৩ ধরনের সংকেত রাখার দাবি করেন। একটি হুশিয়ারি সংকেত, বিপদ সংকেত ও মহাবিপদ সংকেত।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সাইক্লোন চলে যাওয়ার পর সরকার সেই ক্ষয়-ক্ষতির ঠিকমতো কোনো হিসাবও রাখে না।
উপকূলীয় জেলাগুলোতে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার চালু করার দাবি জানান তিনি।
আরএএস/জেডএইচ/জেআইএম