জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন
মেয়াদ বাড়বে না, দরকার হলে নতুন প্রকল্প নেওয়া হবে
শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন এবং কারও মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে দেশে। এ লক্ষ্যে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। চলতি বছরের (২০২৪ সালের) ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ।
অথচ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে নিবন্ধনের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বলা যায়, মাঝপথেই শেষ হচ্ছে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্প। যদিও নতুন আঙ্গিকে সরকারি অর্থে অথবা ইউনিসেফের সহায়তায় নতুন করে প্রকল্প নেওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ এর আওতায়, কোনো শিশু জন্মের পর তার নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, বাবা-মায়ের নাম, তাদের জাতীয়তা এবং স্থায়ী ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য সরকার নির্ধারিত নিবন্ধক নির্দিষ্ট ডেটাবেজে সংরক্ষণ করেন এবং নিবন্ধন সনদ দেন। একইভাবে কোনো মৃত ব্যক্তির নাম, মৃত্যুর তারিখ, মৃত্যুর স্থান, লিঙ্গ, পিতা/মাতা বা স্বামী/স্ত্রীর নাম নির্ধারিত নিবন্ধক কম্পিউটারে এন্ট্রি করেন ও ডেটাবেজে সংরক্ষণ করে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়।
প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়, শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এখন ব্যয় বেড়ে ১৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়, শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এখন ব্যয় বেড়ে ১৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৯০ শতাংশ।
আরও পড়ুন
- শিশুর জন্ম নিবন্ধন কেন বাধ্যতামূলক
- এনআইডি-সনদ-পাসপোর্ট অনুযায়ী জন্মনিবন্ধনের তারিখ পরিবর্তন নয়
- জন্মনিবন্ধন কেন করবেন, কী কী কাজে লাগে?
প্রকল্পের আওতায় সর্বশেষ চার বছরে (২০২০ থেকে ২০২৩ সালে) জন্ম নিবন্ধন হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৫ জনের। একই সময়ে ২১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জনের মৃত্যু নিবন্ধন হয়। গত চার বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি জন্ম নিবন্ধন হয়েছে ২০২২ সালে। ২০২২ সালে জন্ম নিবন্ধন হয় ২ কোটি ৩৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৬ জনের। একই বছরে মৃত্যু নিবন্ধন হয়েছে ৬ লাখ ৪৫ হাজার জনের। নবজাতক থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষকে জন্ম নিবন্ধনের আওতায় আনতে চায় সরকার।
এ বিষয়ে কথা হয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার জেনারেল (যুগ্ম সচিব) ও প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। তবে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, এটা রাজস্ব খাতের আওতায় চলছে। নতুন করে সরকারি অর্থায়নে আবারও এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হবে। তবে তার আগে চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ করবো।’
প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়বে না জানিয়ে ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দরকার হলে সরকারি অর্থায়নে নতুন করে প্রকল্প নেওয়া হবে।’
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (১ম পর্যায়) শীর্ষক পাইলট প্রকল্প শুরু হয় ২০০১ সালে। ২০০৬ সালে শেষ হওয়া এ পাইলট প্রকল্পে সহায়তা করে ইউনিসেফ। এ সময় মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত আগের আইন রহিত করে ১৮৭৩ সালের জন্ম আইন ও ২০০৪ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করে সরকার। এরপর ২০০৬ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়, যা কর্যকর হয় ২০০৬ সালের ৩ জুলাই।
সর্বশেষ চার বছরে জন্ম নিবন্ধন হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৫ জনের। একই সময়ে ২১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জনের মৃত্যু নিবন্ধন হয়। গত চার বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি জন্ম নিবন্ধন হয়েছে ২০২২ সালে, ২ কোটি ৩৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৬ জনের।
পরবর্তীতে ইউনিসেফের সহায়তায় ২০০৭ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (২য় পর্যায়) প্রকল্প নেয় সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১২ সালে শেষ হওয়া এ প্রকল্পে ২০১০ সাল থেকে শুরু হয় অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রম। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পন্ন করতে তৈরি করা হয় সফটওয়্যার, যা চালু হয় ২০১০ সালের অক্টোবরে। প্রথম পর্যায়ে ২৯ জেলায় অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। এর আওতায় ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩ কোটি ৭৬ লাখ জন্মনিবন্ধন করা হয় অনলাইনে।
একই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (৩য় পর্যায়) প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ২০১৬ সালে শেষ হওয়া এ ধাপের প্রকল্পেও সহায়তা করে ইউনিসেফ। এ পর্যায়ে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন ও দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশি সব নাগরিকের অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করা হয়।
আরও পড়ুন
- মৃত্যু নিবন্ধন করতেও ২০০ টাকা নেন ইউপি সচিব!
- প্রতিটি মানুষের তথ্য সংরক্ষণ করতে চায় বিবিএস
- জন্ম নিবন্ধন করা জরুরি কেন?
তবে জন্ম ও মৃত্যু যেহেতু চলমান প্রক্রিয়া। ফলে ২০১৬ সালের জুনে ৩য় পর্যায়ের প্রকল্প শেষ হতেই জুলাই মাসে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় কার্যক্রম শুরু করে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্প এখন এ কার্যালয়ের আওতাধীন।
প্রকল্পে নতুন একটি খাত অন্তর্ভুক্তিসহ ৮ খাতে ব্যয় বেড়েছে। উল্টোদিকে ব্যয় কমেছে ২১ খাতে। এ সব খাতের ব্যয় সমন্বয় করে আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য
বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পদ্ধতি শক্তিশালী করা, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সেবা দ্রুত সময়ে দেওয়া প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। এছাড়া বিদ্যমান আইন ও বিধিমালার আলোকে বার্থ অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন ইনফরমেশন সিস্টেমের কার্যক্রম পরিচালনা ও আন্তঃতথ্য প্রবাহ এবং সময়মতো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের হার বাড়ানো। পাশাপাশি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানো।
যেসব কারণে প্রকল্প সংশোধন
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পন্ন করতে বার্থ অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন ইনফরমেশন সিস্টেম থেকে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ওটিপি পাঠাতে টেলিটক থেকে কেনা হয় খুদেবার্তা (এসএমএস)। কিন্তু এই এসএমএস চার্জ বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ রাজস্ব বাজেটে ছিল না। অথচ এসএমএস কেনা বাবদ টেলিটককে পরিশোধ করা হয় এক কোটি ৩২ লাখ টাকা।
এছাড়া প্রকল্পে নতুন একটি খাত অন্তর্ভুক্তিসহ ৮ খাতে ব্যয় বেড়েছে। উল্টোদিকে ব্যয় কমেছে ২১ খাতে। এ সব খাতের ব্যয় সমন্বয় করে আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) জাতীয় ডেটা সেন্টারে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সার্ভারে র্যাক স্পেস রয়েছে। এ র্যাক ভাড়া বাবদ বিসিসিকে পরিশোধ করতে হয়েছে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এতে অতিরিক্ত এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়া হার্ডওয়্যার বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। এসব ব্যয় সমন্বয়ে প্রকল্পটি সংশোধন হচ্ছে।
কী বলছে পরিকল্পনা কমিশন
সার্ভার র্যাক স্পেস চার্জ বাবদ আগেই এক কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা বিধি-বহির্ভূত বলছে পরিকল্পনা কমিশন।
এমওএস/কেএসআর/এমএস