পটিয়া-আনোয়ারায় ভোট

কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত, প্রার্থীরা এমপিদের ‘আশীর্বাদপুষ্ট’

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:৩৪ এএম, ২৮ মে ২০২৪

• ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ভোটের প্রচারণার অভিযোগ
• পেছন থেকে প্রার্থীদের খুঁটি হচ্ছেন স্থানীয় এমপিরা
• সমর্থন দিতে গিয়ে দোটানায় নেতাকর্মীরা
• পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে ওসির প্রত্যাহার চেয়ে চিঠি
• প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত

সারাদেশ উপজেলা নির্বাচনে দুই ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ ২৯ মে। এ ধাপের নির্বাচনে চট্টগ্রামের চারটি উপজেলা পরিষদ পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালীতেও ভোটগ্রহণ হবে। তবে ভোট ঘিরে তৈরি হয়েছে শঙ্কা ও সংশয়। আর সেই শঙ্কা-সংশয় প্রার্থীদের মধ্যে যেমন, একই ভাবে বিরাজ করছে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও। এমনকি উৎকণ্ঠায় সাধারণ ভোটাররাও।

বিশেষত, পটিয়া ও আনোয়ারায় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা যেসব প্রার্থীর পক্ষে পরোক্ষ সমর্থন জোগাচ্ছেন বলে আলোচনা রয়েছে, তাদের বিরোধী শিবিরগুলোতে দুশ্চিন্তা বেশি দানা বাঁধছে। আর সেটি ভোটে যে কোনো ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কায়। এ অবস্থায় ভোট আদৌ অবাধ-সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন প্রার্থীদের কেউ কেউ। অন্যদিকে, উভয় উপজেলাতেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের সমর্থন দিতে গিয়ে পড়েছেন দ্বিধাবিভক্তিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পটিয়া ও আনোয়ারায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগে নতুন করে মেরুকরণ শুরু হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে নেতাকর্মীদের একটি অংশ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেও অধিকাংশই এখনো আছেন দোটানায়। শেষ পর্যন্ত তারা কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন এ নিয়েই মূলত দ্বিধাবিভক্তি।

স্থানীয় সংসদ সদস্যরা যেসব প্রার্থীর পক্ষে পরোক্ষ সমর্থন জোগাচ্ছেন বলে আলোচনা রয়েছে, তাদের বিরোধী শিবিরগুলোতে দুশ্চিন্তা বেশি দানা বাঁধছে। আর সেটি ভোটে যে কোনো ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কায়

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় গত কয়েকদিন এক প্রার্থী অন্য প্রার্থীকে ঘায়েল করতে পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য দিয়ে গরম করেছেন ভোটের মাঠ। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

এরই মধ্যে পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অধ্যাপক হারুনুর রশিদ ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে ডিআইজি বরাবর চিঠি দিয়েছেন। একই ভাবে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে সেখানকার থানার ওসিকে প্রত্যাহারে নির্বাচন কমিশন সচিব ও ডিআইজি বরাবর চিঠি দেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী কাজী মোজাম্মেল হক।

কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত, শঙ্কায় এমপি-বিরোধী প্রার্থীরা

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনার কাছে দুই উপজেলার নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রার্থী যে-ই হোক, ভোটকেন্দ্রে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

প্রার্থী যে-ই হোক, ভোটকেন্দ্রে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।- এসপি এস এম শফিউল্লাহ

চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বর্তমানে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। অন্যদিকে কাজী মোজাম্মেল হক আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। দুই উপজেলাতেই স্থানীয় সংসদ সদস্যরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই দুই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী যারা

পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে দোয়াত-কলম প্রতীকে লড়ছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার।

অন্যদিকে, আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বৈধ প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। তাদের মধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোটে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দোয়াত-কলম প্রতীকে আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল আলম দিদারকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী অলিখিতভাবে সমর্থন দিয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধিতে সংসদ সদস্যরা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও দিদারকে জয়ী করতে এমপি পেছন থেকে অনেকটা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছেন বলে দাবি প্রতিপক্ষের প্রার্থীর নেতাকর্মীদের।

এ-ও বলা হচ্ছে, এমপি মোহাহেরুল এরই মধ্যে নাকি পটিয়ার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দিদারের পক্ষে কাজ করতে ও তাকে জয়ী করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। অন্যদিকে, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে জয়ী এমপির লোকদের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়া সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীও এবার উপজেলা নির্বাচনে অধ্যাপক হারুনকে সমর্থন দিয়ে মাঠে নেমেছেন।

আরও পড়ুন

তবে এলাকার ভোটার ও বিভিন্ন প্রার্থীর নেতাকর্মীরা বলছেন, পটিয়ায় ভোটের শেষ হিসাব নির্ভর করবে এস আলম পরিবারের ইচ্ছের ওপর। কারণ, পটিয়ার আনাচে-কানাচে কর্মসংস্থানে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার এস আলম গ্রুপের। এরই মধ্যে উভয় প্রার্থী গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সঙ্গে দেখাও করেছেন। প্রার্থীরা তাদের এই সাক্ষাৎ মুহূর্তের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে ভোটারদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন বলেও জানা গেছে।

এমপি-বিরোধী শিবিরে শঙ্কা বেশি

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পটিয়ার এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি পটিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। একই ওয়ার্ডে কাছাকাছি অবস্থান চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুনুর রশিদের। এস আলম পরিবারের বাসও একই ওয়ার্ডে। তাদের সবার ভোটকেন্দ্রও একই। উপজেলা নির্বাচনে এমপি মোতাহেরুলের সমর্থন দিদারের পক্ষে থাকলেও স্থানীয় বিবেচনায় এস আলম পরিবারের সমর্থন পরোক্ষভাবে হলেও হারুনুর রশিদের পক্ষে যাবে বলে ধারণা সেখানকার ভোটারদের।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে হারুনুর রশিদ পটিয়া পৌরসভার দুবারের মেয়র থাকার সুবাধে সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর পক্ষের লোক ছিলেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী কেন্দ্র থেকে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে তার পক্ষেই সরাসরি অবস্থান নেন হারুন। নৌকা প্রতীককে জিতিয়ে আনার ক্ষেত্রে তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণও ছিল।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ভাড়া এনে এলাকায় বিশৃঙ্খলা শুরু করেছেন এবং ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। জোরপূর্বক ভোট নিতে গেলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মারামারিসহ অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।- পটিয়ার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হারুনুর রশিদ

তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থন থাকায় সরকারি দলের হয়েও বিগত সময়ে নানা কারণে কোণঠাসা থাকা নেতাকর্মীরা দিদারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত আসামিও রয়েছেন বলে জানা গেছে। যারা একাধিক মামলায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন।

এদিকে, আনোয়ারা উপজেলায় যে তিনজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা। তার মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী (মোটরসাইকেল), সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী (দোয়াত-কলম) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক (আনারস) ভোটে লড়ছেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদে আনোয়ারার এমপি ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী মন্ত্রীত্ব না পেলেও সংরক্ষিত নারী আসন-৩১ থেকে বাজিমাত করেন আনোয়ারার প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ওয়াসিকা আয়শা খান। তিনি পান সরকারের অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। নতুন অর্থ প্রতিমন্ত্রী পাওয়ায় আনোয়ারার রাজনীতিতেও ঘটে হাওয়া বদল।

আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরীকে সমর্থন দিচ্ছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। গত ১ মে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের সার্সন রোডের বাসায় আয়োজিত উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি এ নাম ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, ভোটের মাঠে মান্নান চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া কাজী মোজাম্মেল হক প্রতিমন্ত্রীর পরোক্ষ সমর্থনপুষ্ট বলে জানা গেছে। ফলে এ দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ছাপিয়ে ভোটারদের চোখ থাকবে স্থানীয় দুই এমপির দিকে।

কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত, শঙ্কায় এমপি-বিরোধী প্রার্থীরা

এদিকে, শুরুতে সমর্থন দিলেও কাজী মোজাম্মেলকে টপকে যাওয়া কঠিন হতে পারে ভেবে পরবর্তীসময়ে মান্নান চৌধুরীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী। শোনা যাচ্ছে এমন কথাও। ফলে আনোয়ারার উপজেলা নির্বাচন নিয়ে শুরু হয় ত্রিমুখী নাটকীয়তা। ভোটের প্রচারণার শেষ পর্যায়ে মান্নানকে বসিয়ে একসময়ের কাছের মানুষ তৌহিদুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দেন সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান। মান্নানও তা মেনে নিয়ে তৌহিদের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন। যে কারণে আনোয়ারার ভোটের মাঠের হিসাব এখন ‘ওয়ান টু ওয়ান’। তৌহিদের দোয়াত-কলম বনাম মোজাম্মেলের আনারস।

কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা প্রার্থী হারুনের

পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের দিন কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুনুর রশিদ। পটিয়া পৌর সদরসহ ১০টি ইউনিয়নের বেশ কিছু ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা জানিয়ে তিনি এরই মধ্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজিকে পদক্ষেপ নিতে চিঠিও দিয়েছেন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মহানগর থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ভাড়া এনে এলাকায় বিশৃঙ্খলা শুরু করেছেন এবং ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। জোরপূর্বক ভোট নিতে গেলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মারামারিসহ অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

পটিয়ার ১২৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে শোভনদণ্ডী, ছনহরা, ভাটিখাইন, আশিয়া, কাশিয়াইশ, জিরি, কোলাগাঁও, কুসুমপুরা, হাইদগাঁও ও পটিয়া পৌর সদরের বেশ কিছু ভোটকেন্দ্র দখল করে জোরপূর্বক ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদার বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে কয়েক দফা নির্বাচনী এলাকায় শোডাউন করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে আনারস প্রতীকের প্রার্থী হারুনুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করতে প্রধানমন্ত্রী এবার দলীয় প্রতীক দেননি। এতে ভোটের আমেজ বেড়েছে। সাধারণ ভোটারদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে পটিয়ায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের এনে শোডাউন করা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য সন্ত্রাসীরা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তারা কেন্দ্রদখল করে ব্যালটে সিল মারার পরিকল্পনা করছেন। যে কারণে সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।’

কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত, শঙ্কায় এমপি-বিরোধী প্রার্থীরা

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীরা যেন ভোটকেন্দ্র দখল করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। আশা করি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’

পটিয়ার এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আচরণবিধি মোতাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে কারও পক্ষে কথা বলার সুযোগ নেই। আমি কাউকে সমর্থনও দিইনি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও ভোটারদের অংশগ্রহণমূলক করতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন।’

ভাড়াটে লোকদের এনে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে কী বলেছেন, সেটি আমার জানার বিষয় নয়। নির্বাচনে বিধি মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।’

তবে প্রতিপক্ষের প্রার্থী হারুনুর রশিদের অভিযোগ ‘সত্য নয়’ দাবি করে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল আলম দিদার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার পক্ষে কোনো বহিরাগত নামেনি। হারুন সাহেব নিজেই বরং বহিরাগত নিয়ে প্রচারে নেমেছেন।

আরও পড়ুন

‘তিন বছর আগে হাটহাজারীতে ইউপি নির্বাচনের দিন পিস্তলসহ বিজিবির হাতে আটক হন তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল আজিম রনি। তখন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক রনিকে দুই বছর সাজা দেন। সে তো চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত। রনির নেতৃত্বে দুই-আড়াইশ মোটরসাইকলে নিয়ে পটিয়ায় হারুনের পক্ষে শোডাউন করা হচ্ছে’- পাল্টা এ অভিযোগ তোলেন প্রার্থী দিদারুল।

আনোয়ারার ওসি প্রত্যাহার চান মোজাম্মেল

আনোয়ারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী কাজী মোজাম্মেল হক। তিনি স্থানীয় থানার ওসি সোহেল মাহমুদকে প্রত্যাহারের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিব ও ডিআইজি বরাবর চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, আনোয়ারা থানার ওসির সঙ্গে স্থানীয় এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী সায়েমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ওসি স্থানীয় এমপির আশির্বাদপুষ্ট হওয়ায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এবং আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর তার ব্যক্তিগত বিদ্বেষ রয়েছে। ভোটের প্রচারণা শুরুর পর থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে আমার কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি ও বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত, শঙ্কায় এমপি-বিরোধী প্রার্থীরা

‘ওসি সোহেল মাহমুদ থানার দায়িত্ব পালন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে তা অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে। এ কারণে ওসির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে আনোয়ারা থানা থেকে প্রত্যাহার জরুরি’- বলা হয় চিঠিতে।

জানতে চাইলে কাজী মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আনোয়ারা উপজেলায় গত ১০ বছরে কোনো নির্বাচন হয়নি। ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। একনায়কতন্ত্র ছিল এখানে। আনোয়ারাবাসী এখন সে অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান।

‘কিন্তু আনোয়ারার ওসি আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আমার কর্মী-সমর্থকদের মামলা-হামলার হুমকি দিচ্ছেন। ভোটাররা যেন কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত হন, তিনি সে ধরনের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন। তাই একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ওসিকে প্রত্যাহারের জন্য কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি’- যোগ করেন মোজাম্মেল হক।

তবে এসব অভিযোগের কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি ওসি সোহেল মাহমুদ। জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন যেহেতু নির্বাচনকালীন সময়, ফলে এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।’

এমডিআইএইচ/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।