গতির মামলা শুরুর আগেই স্পিডগান সংকটে পুলিশ

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ১৮ মে ২০২৪
মহাসড়কে স্পিডগান দিয়ে গাড়ির গতি নির্ণয় করছে পুলিশ

দেশে দুর্ঘটনা কমাতে সব ধরনের সড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। যদিও সেই গতিসীমা নির্ধারণ নিয়ে রয়েছে নানামুখী মত। এর মধ্যেই নতুন গতিসীমা নীতিমালা কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এখনো মেট্রোপলিটন এলাকায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। হাইওয়েতে আগেই চালু ছিল, সেখানে এখন নতুন আইন প্রয়োগ হচ্ছে।

গতি পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হয় স্পিডগান। হাইওয়ে পুলিশ ছাড়া বাকি ইউনিটের রয়েছে স্পিডগানস্বল্পতা। যে কারণে মেট্রোপলিটন এলাকায় এখনো আইন প্রয়োগ শুরু হয়নি। আর হাইওয়েতে আগে থেকেই এ কার্যক্রম চলমান। দেশের অনেক নিয়ম-কানুনের মতো এক্ষেত্রেও গোড়া গুছিয়ে কাজ করা হয়নি। যে কারণে ঘোষণা দিয়েও প্রয়োগ নেই। আইন প্রয়োগের আগে স্পিডগানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন সড়ক সংশ্লিষ্টরা।

নতুন আইন বাস্তবায়নের আগে গতি নির্ণয় করার যন্ত্র (স্পিডগান) আমাদের লাগবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগর এ আইন বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু হবে। যে কোনো আইন জনগণের জন্য।- এসএমপি ট্রাফিকের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান

সড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ২০১০ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি দেশকে অর্থ দিয়েছিল। এসব দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেশি। তালিকায় ছিল তুরস্ক। সড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে সে সময় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি। এছাড়া সিটবেল্টের ব্যবহার বাড়ায়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে গাড়ির গতি কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি। তবে চালক ও গাড়ির প্রথম সিটে বসা যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার বাড়ে।

বাংলাদেশেও সরকার নির্ধারিত গতিসীমা দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কতটা কমবে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এই ভিন্ন ভিন্ন গতিসীমায় ওভারটেকিং ও দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কাও করছেন কোনো কোনো যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ। মূলত জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যেই নতুন এ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।

অতিরিক্ত গতি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। আগে গতি সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনার আইন ছিল না। বর্তমানে আইনের ফলে প্রয়োগ করা পুলিশের জন্য সহজ হবে।- হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান

বিশ্বব্যাংকের ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় জানানো হয়, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি এক দশকে ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে কমে ৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে এ শহরে যানবাহনের গতি ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটারে নেমে আসতে পারে, যা হাঁটার গতির চেয়ে ধীর।

কোন সড়কে কোন গাড়ির জন্য কত গতিসীমা

দেশের এক্সপ্রেসওয়ে, মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার আর নগর-মহানগরে সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ৪০ কিলোমিটার। জাতীয় মহাসড়কে (ক্যাটাগরি ‘এ’) প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, বাস, মিনিবাসসহ অন্য হালকা যানবাহনগুলো সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে। সেসব সড়কে ট্রাক, মোটরসাইকেল ও আর্টিকুলেটেড লরির গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার।

গতির মামলা শুরুর আগেই স্পিডগান সংকটে পুলিশ

একই সঙ্গে জাতীয় সড়কে (ক্যাটাগরি ‘বি’) প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, বাস ও মিনিবাসের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার। আর মোটরসাইকেলের জন্য ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং ট্রাক ও আর্টিকুলেটেড লরি চলবে ৪৫ কিলোমিটার গতিতে। পাশাপাশি আন্তঃজেলা সড়কে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, বাস ও মিনিবাসের ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার, মোটরসাইকেল ৫০ কিলোমিটার এবং ট্রাক ও আর্টিকুলেটেড লরি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫ কিলোমিটার গতিবেগে চলতে পারবে।

যানবাহনের যে গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আমাদের দেশের সড়ক ব্যবস্থার বাস্তবতায় সেটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। যারা এ আইনটি করেছেন তারা হয়তো বাইরের দেশের বাস্তবতা দেখেছেন।- পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান

এছাড়া সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও জেলা শহরের ভেতরের রাস্তায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার এবং ট্রাক, মোটরসাইকেল ও আর্টিকুলেটেড লরির গতিসীমা হবে ৩০ কিলোমিটার।

ওই নির্দেশনায় উপজেলা ও গ্রামের রাস্তার গতিসীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাজার ও আবাসিক এলাকার কাছাকাছি সড়কে যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করবে স্থানীয় প্রশাসন। তা কোনোভাবেই জাতীয় মহাসড়কের ক্ষেত্রে ৪০ কিলোমিটার এবং আঞ্চলিক মহাসড়কের ক্ষেত্রে ৩০ কিলোমিটারের বেশি হবে না। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত যানবাহনের গতিসীমা এক্ষেত্রে শিথিল থাকবে।

গতির বিষয়ে জানতে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে।

নতুন গতিসীমা নির্ধারণের পর থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা এবং জনসচেতনতা প্রয়োজন। তার আগে আইন প্রয়োগ করলে ব্যত্যয় হতে পারে। প্রথমে জনসচেতনতা তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে নতুন গতিসীমা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

গতির মামলা শুরুর আগেই স্পিডগান সংকটে পুলিশ

অন্যদিকে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির গতি পরিমাপক যন্ত্র ‘স্পিডগান’ পর্যাপ্ত নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। আইন প্রয়োগের আগে স্পিডগানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অন্যথায় খালি চোখে গাড়ির গতি নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।

বিআরটি এ বলেছে, কেউ গতিসীমা লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন অমান্যকারীকে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।

ট্রাফিক-গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন জাগো নিউজকে বলেন, ৩০০ ফিট এলাকায় বিভিন্ন যানবাহন অতিরিক্ত গতিতে চলে। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। সেখানে স্পিডগান দিয়ে দিনে ও বিশেষ করে রাতের বেলায় যখন গাড়ি রেস করে তখন মামলা দেওয়া হয়।

সিলেট মহানগর (এসএমপি) ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নতুন আইন বাস্তবায়নের আগে গতি নির্ণয় করার যন্ত্র (স্পিডগান) আমাদের লাগবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগর এ আইন বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু হবে। যে কোনো আইন জনগণের জন্য।

রংপুর মহানগর (আরপিএমপি) ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মেনহাজুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, যানবাহনের গতি নিয়ে নতুন নিয়মটি এখন পর্যন্ত আলোচনার মধ্যে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে নতুন আইনে মামলা শুরু করা হবে।

গাজীপুর মহানগর (জিএমপি) ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রজ্ঞাপনটা মাত্র হাতে পেয়েছি। বাস্তবায়ন করতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। মহাসড়কগুলো ভালো হয়ে যাওয়ায় এবং কয়েকটি এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নের ফলে গতি নিয়ে কথাবার্তা চলছে।

‘আমাদের টার্গেট ছিল ২০৩০ সাল নাগাদ সড়কে মৃত্যুর হার অর্ধেকে নামিয়ে আনবো। কিন্তু বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে প্রচুর মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। বলা হয়েছিল- রিকশার বিকল্প কিংবা কর্মসংস্থানের বিকল্প হবে। তবে বাস্তবতায় দেখা গেলো সড়ক দুর্ঘটনার অর্ধেক হচ্ছে মোটরসাইকেলের কারণে।’

তিনি বলেন, স্পিডগান এখনো পর্যাপ্ত নেই। তবে আমাদের এরিয়াতে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ওই ক্যামেরাগুলো দিয়ে নম্বর প্লেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চললে অটোমেটিক মামলা হয়ে যাবে।

গতির মামলা শুরুর আগেই স্পিডগান সংকটে পুলিশ

মাদারীপুর হাইওয়ে পুলিশের এসপি মো. শাহীনুর আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা সেতুর দক্ষিণে জাজিরা প্রান্ত থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য হাইওয়ে পুলিশের অভিযান চলমান। যেসব গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে চলছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। গতিসীমা লঙ্ঘনে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে ১ মে থেকে ১৪ মে পর্যন্ত ৫১৩টি মামলা হয়েছে।

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার পদে মো. খাইরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সবাইকে সচেতন করছি। এর ব্যত্যয় কেউ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে।

হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (পূর্ব বিভাগ) মাহবুবুর রহমান টুটুল জাগো নিউজকে বলেন, মহাসড়কে কোনো যানবাহন যদি অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালায় তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়। এটি চলমান একটি প্রক্রিয়া। এছাড়া মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের আগের যে গতিসীমা, আর বর্তমান নির্ধারিত গতিসীমা একই। তাই আগের নিয়ম ও বর্তমান নিয়ম এক থাকায় নতুন নিয়ম অনুসারেই মামলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সরকার গতি নিয়ে যে নতুন সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটি নিয়ে কোনো অসুবিধা নেই। বেশিরভাগ মানুষ এই আইন মেনে চলবে। আইন প্রয়োগের প্রসঙ্গ আসে যখন আইনটি ভঙ্গ করে। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার কারণ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো। আশা করি সবাই গতি মেনে চলবে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও অনেকাংশে কমে আসবে।

স্পিডগানের বিষয়ে তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশের কাছে যথেষ্ট স্পিডগান রয়েছে। যেসব ইউনিটে স্পিডগান নেই তাদেরও স্পিডগান সংগ্রহের পর সরবরাহ করা হবে।

হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, অতিরিক্ত গতি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। আগে গতি সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনার আইন ছিল না। বর্তমানে আইনের ফলে প্রয়োগ করা পুলিশের জন্য সহজ হবে। তবে কোন সড়কে কত গতি তার জন্য সাইনবোর্ড প্রয়োজন। গতিসীমার আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রচারণা এবং জনসচেতনতা প্রয়োজন।

গতির বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, একজন চালক রাস্তার অবস্থা বুঝে গাড়ি চালান। ঢাকা মহানগরীতে বড় গাড়ির জন্য ৪০ ও মোটরসাইকেলের জন্য ৩০ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে বৈধ ওভারটেকিংয়ের কোথাও ব্যবস্থা নেই। যেসব যাত্রীবাহী গাড়ি রয়েছে, সেসব গাড়িকে কোনো সার্জেন্ট আটকাবে না। তবে, সেই গাড়ি যদি গতিসীমা ভঙ্গ করে ও দুর্ঘটনা ঘটায় সেক্ষেত্রে আটকানো হবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক বলেন, নতুন এ নীতিমালা কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মনে হয়নি। মহাসড়কে বাসের গতির চেয়েও মোটরসাইকেলের গতি কমিয়ে আনা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। দেশের সব শহরকে একই গতিসীমার মধ্যে আনা হয়েছে। ঢাকা শহরে যানবাহনের গতি আর রংপুর শহরের যানবাহনের গতি এক নয়। এটি একটি আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত, কারিগরি সিদ্ধান্ত নয়।

জানতে চাইলে বিআরটিএ রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, নতুন নির্দেশিকা সম্পর্কে জনগণকে জানানোর জন্য প্রচারণা কর্মসূচি চালানো হবে। বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে। এই অন্তর্বর্তী সময়কালে গতিসীমা লঙ্ঘন প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবহার করা হবে। এর উদ্দেশ্য চালকদের নতুন গতিসীমা সম্পর্কে জানানো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে কঠোরভাবে নতুন গতিসীমা প্রয়োগ করা হবে। যানবাহনের গতি মনিটর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্পিডগান ব্যবহার করবে।

গতির মামলা শুরুর আগেই স্পিডগান সংকটে পুলিশ

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, যানবাহনের যে গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আমাদের দেশের সড়ক ব্যবস্থার বাস্তবতায় সেটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। যারা এ আইনটি করেছেন তারা হয়তো বাইরের দেশের বাস্তবতা দেখেছেন।

‘বাইরের দেশে গতিসীমা নির্ধারিত থাকলেও সেখানে লেনভিত্তিক গাড়ি চলে৷ কোন লেনে কোন গাড়ি চলবে সেটাও নির্ধারণ করা থাকে৷ ঢাকা শহরের কথাই যদি ভাবি, সেখানে তো লেনভিত্তিক গাড়ি চলে না৷ এখানে মিশ্র ট্রাফিক, সব গাড়ি একসঙ্গে এলোমেলোভাবে চলাচল করে।’

২০২৩ সালে সাড়ে ৫ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ হাজার, আহত সাড়ে ৭ হাজার

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে সড়কে ৫ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ২৪ জন নিহত ও ৭ হাজার ৪৯৫ জন আহত হয়েছে। ২০২২ সালে সড়কে ৫ হাজার ২০০ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৬৩৮ জন নিহত হয়। ২০২১ সালে সড়কে ৫ হাজার ৪৭২ সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৮৪ জন নিহত হয় এবং ২০২০ সালে সড়কে ৪ হাজার ১৪৭ দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ১৩৮ জন নিহত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত সবশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় সারা বিশ্বে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ মারা যান। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের কম। বিশ্বে তরুণরা যেসব কারণে বেশি হতাহত হন, এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা শীর্ষে।

টিটি/এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।