মহাখালীতে নেই চিরচেনা যানজট, ‘বাস বে’ ছাড়া দাঁড়ালেই মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৪ পিএম, ০৮ মে ২০২৪
ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ তৎপরতায় শৃঙ্খলা ফিরেছে মহাখালীর সড়কে/ ছবি- জাগো নিউজ

রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল পার হওয়া ছিল নগরবাসীর কাছে এক ভোগান্তির নাম। ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের শক্ত অবস্থানে সেই চিরচেনা যানজটের এখন রূপ পাল্টেছে। সড়কে ফিরেছে শৃঙ্খলা, স্বস্তিতে যাতায়াত করছেন নগরবাসী।

কীভাবে হলো এ পরিবর্তন? জানতে চাইলে ট্রাফিক গুলশান দক্ষিণের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এএসএম হাফিজুর রহমান জানান, মহাখালীকেন্দ্রিক যানজট নিরসনে গত ৬ মে মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে ট্রাফিক গুলশান বিভাগ বৈঠক করে। সেখানে টার্মিনালে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বাস, রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং, টার্মিনালের ইনগেট ও আউটগেটে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, টার্মিনালের সামনে অপ্রয়োজনীয় ইউটার্ন, সীমিত এলাকায় অতিরিক্ত তেল ও গ্যাসের পাম্প, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মহাখালীতে নামার র‌্যাম্প স্থাপন, এলাকাগত সীমা নির্ধারণ ও সমন্বয়ের অভাবসহ বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। এসব সমস্যা সমাধানে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭ মে থেকে শক্ত অবস্থানে নামে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগ। সঙ্গে রয়েছেন পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের স্বেচ্ছাসেবকরাও। তারা টার্মিনালের সামনে এসে থামানো বাসগুলো অনত্র সরে যেতে সহায়তা করছেন।

মহাখালীতে নেই চিরচেনা যানজট, ‘বাস বে’ ছাড়া দাঁড়ালেই মামলা

‘বাস বে’চালু ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধ
ব্যস্ত সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপর মহাখালী ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার আরিফুর রহমান রনি। তিনি বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী ওঠানো-নামানো পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। ‘বাস বে’ গুলো সক্রিয় করা হয়েছে। ‘বাস বে’ ছাড়া লোকাল যাত্রীবাহী বাস যেমন দাঁড়াবে না, তেমনি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া দাঁড়াবে না। যত্রতত্র বাস দাঁড়ানো ও যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধে চালকদের এখন সতর্ক করা হচ্ছে। না মানলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলা দেওয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে কোনো সতর্কতা থাকবে না। নির্দিষ্ট স্টপেজে বাসের যাত্রী গণনা করা হবে। পরের স্টপেজে যাত্রী ওঠানোর আগে ওই সংখ্যা বেশি হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্রাফিক গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মোমেন জানান, বর্তমান ডিএমপি কমিশনারের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ হলো সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিরসন করা। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। মহাখালী এলাকার সমস্যা ও সমাধানের বিষয়গুলো শনাক্ত করে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের অনুরোধে মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকপক্ষ স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করেছেন। চালকদের সঙ্গে আমাদের মাঠপর্যায়ের ট্রাফিক সদস্যরা কথা বলছেন। অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসছে। বাসচালক ও যাত্রীরাও এই ব্যবস্থাপনায় অনেক খুশি। আমরা মনে করি, সবার সমন্বিত উদ্যোগে সম্পূর্ণ বদলে যাবে মহাখালী।

স্বস্তির যাত্রা
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাখালীতে এখন যেখানে সেখানে বাস দাঁড়ানো ও যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ হয়েছে। যানচলাচল শৃঙ্খলার স্বার্থে মহাখালীর সামনের সড়ক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাসগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে গুলশান ট্রাফিক বিভাগের ডিসির নির্দেশে মহাখালীতে নতুন করে ইনকামিং সড়কে একটি ‘বাস বে’ চালু করা হয়েছে। ‘বাস বে’ ছাড়া দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না কোনো যাত্রীবাহী বাস।

বিশৃঙ্খলা করলেই বাস থামিয়ে সাবধান করছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। নিয়ম না মানলে দেওয়া হচ্ছে মামলা। সঙ্গত কারণেই এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। এই এলাকার মূল সড়কে কমেছে যানজট, উধাও হয়েছে যত্রতত্র পার্কিং। শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী রেলগেট, আমতলী ও কাকলী এলাকা পর্যন্ত। ফলে দৃশ্যত ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যান চলাচলে গতি বেড়েছে।

মহাখালীতে নেই চিরচেনা যানজট, ‘বাস বে’ ছাড়া দাঁড়ালেই মামলা

মহাখালী বাস টার্মিনালের ধারণক্ষমতা আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান।

তিনি জানান, রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালের পেছনে অনেকখানি জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। সেটি যদি মহাখালী টার্মিনালের সঙ্গে একীভূত করা যায় তাহলে অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে। এটা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ, পরিবহন মালিক-শ্রমিকপক্ষ এবং সিটি করপোরেশনের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। আশা করছি সহসা এর সমাধান হবে। আর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার একটা র‌্যাম্প মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে চালু করা হয়েছে। ওঠার জন্য আরেকটি র‌্যাম্প চালু হলে সড়কের চাপটা আর থাকবে না।

টিটি/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।