আশ্রমের ব্যক্তিদের হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন মিল্টন: হারুন
অডিও শুনুন
প্রতারণা ও নানা অনিয়মে গ্রেফতার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার তার আশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ংকর ও লোমহর্ষক কাহিনি উঠে এসেছে। রোববার (৫ মে) দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, মিল্টনের অপারেশন থিয়েটারে শুধু কয়েকটা ছুরি ও ব্লেড পাওয়া গেছে। এখানে তিনি নিজেই অপারেশন করতেন। বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে যাদের শরীরের কোনো অংশ পচে যেত মিল্টন অংশগুলো ছুরি ও ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলতেন। এমন বেশ কয়েকজন বৃদ্ধের তিনি হাত, পা ও আঙুল কেটে ফেলেছেন। সে সময় তাদের কান্না, যন্ত্রণা ও রক্ত দেখে মিল্টন পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতেন। তিনি কখনোই অসুস্থদের কোনো হাসপাতালে নিতেন না।
মিল্টনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো সোয়া ১ কোটি টাকা
হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা রয়েছে। তিনি মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আশ্রমের মানুষদের কবর এবং বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসহায় মানুষদের আশ্রয়ের কথা বলে টাকা সংগ্রহ করতেন। কবর দেওয়ার সংখ্যা যত বেশি টাকা সংগ্রহ তত বেশি হতো।
৯০০ প্রাণ নিভে যাওয়া প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মিল্টন জানান, মিথ্যা এসব বলে মানুষের সহানুভূতি নিয়ে টাকা সংগ্রহ করতেন। তিনি নাকি ১০০ জন মানুষকে কবর দিয়েছেন। তবে ১০০ কবরের তথ্য জানতে চাইলেও সেটা ডিবিকে সঠিকভাবে প্রমাণ করতে পারেননি মিল্টন।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, মিল্টন সমাদ্দার একজন মাদকাসক্ত ও সাইকোপ্যাথ মানুষ। মিল্টন টর্চারসেলে মানুষজনদের পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। তিনি কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। মিল্টনের বিরুদ্ধে আরও সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করবো। গত বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করা হয়।
আরও পড়ুন
- চিকিৎসক না হয়েও ৫০ জনের মৃত্যুসনদ ইস্যু করেন মিল্টন
- মিল্টনকে রিমান্ডে নিয়ে সব অপকর্ম বের করবো: হারুন
- ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ
এর আগে কয়েকদিন ধরে মানবতার ফেরিওয়ালার মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর সব প্রতারণার অভিযোগ ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিচিত মুখ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। এমনকি অসহায় মানুষের নামে সংগ্রহ করা অর্থ আত্মসাৎ এবং তাদের কিডনিসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরির মতো গা শিউরে ওঠা অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার।
এছাড়া জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি এবং জমি দখলের মতো গুরুতর সব অভিযোগ রয়েছে। অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবার কথা বলে গড়ে তোলা ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রম ঘিরে তার অপকর্মের ফিরিস্তি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল।
এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
টিটি/এমআইএইচএস/জিকেএস