গভীর রাতে স্বস্তির বৃষ্টি, ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় অনেকে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:২৪ এএম, ০৩ মে ২০২৪

অবশেষে বহুল আকাঙ্ক্ষিত, প্রার্থিত বৃষ্টির দেখা পেয়েছে নগরবাসী। গভীর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলেছে স্বস্তির বৃষ্টির। সেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে শরীর-মন শীতল করতে অনেকেই ঘর ছেড়ে নেমেছেন রাস্তায়।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি নামে। মিরপুর অঞ্চলে ১২টার দিকে শুরু হওয়া বৃষ্টি প্রায় ৪০ মিনিট স্থায়ী হয়। এরমধ্যে প্রায় আধাঘণ্টা জুড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। একইভাবে বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর অন্যান্য অংশ থেকেও বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে।

প্রার্থিত এই বৃষ্টির দেখা পেয়ে গভীর রাতেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন আশিকুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েকদিনের তীব্র গরমে জীবন যায় যায়। গরমে সবার জীবন অতিষ্ঠ। তাই বৃষ্টির দেখা পেয়ে আর ঘরে থাকতে পারলাম না। বৃষ্টির পানিতে ভিজে মনকে শীতল করে নিলাম।

তিনি বলেন, বৃষ্টির পানিতে ভিজে খুব ভালো লাগছে। যে গরম পড়ছিল, তাতে কিছুতেই স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ বৃষ্টি আসায় পরিবেশ কিছুটা হলেও শীতল হয়েছে।

আশিকুরের মতোই বৃষ্টির পানিতে ভিজতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন জাবের নামে একজন। তিনি বলেন, পৌনে ১২টার দিকে আকাশে বেশ বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে। বিকট শব্দে কয়েকবার আকাশ ডেকে ওঠে। এরপর আসে বৃষ্টি। এমন বৃষ্টি দেখে নিজেকে আর ঘরে আটকে রাখতে পারলাম না।

তিনি বলেন, এর আগেও বৃষ্টিতে ভিজেছি। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে এত স্বস্তি আগে কখনো পাইনি। বৃষ্টির পানি গায়ে লাগতেই অন্যরকম ভালো লাগলো। আধাঘণ্টাজুড়ে বৃষ্টির পানিতে ভিজলাম। মন বলছিল আরও ভিজি।

প্রার্থিত বৃষ্টির পানিতে ভিজতে ছাতা মাথায় দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন মিরপুর ১৪ নম্বরের বাসিন্দা মিথিলা। তিনি বলেন, অনেক রাত হয়ে গেছে, তাই বৃষ্টির পানি মাথায় লাগাবো না। কিন্তু এমন সময় বৃষ্টির দেখা মিললো, এই বৃষ্টিতে ভেজার লোভ সামলাতে পারলাম না। এ কারণে মাথায় যাতে বৃষ্টির পানি না লাগে, ছাতা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। বৃষ্টির পানি গায়ে লাগাতে খুব ভালো লাগছে।

পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে ছিল তাপপ্রবাহ।‌ ঢাকায় তাপপ্রবাহ শুরু হয় ১১ এপ্রিল। এরপর টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে কেটেছে নগরবাসীর জীবন। এরমধ্যে কয়েকদফা দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে। তীব্র গরমে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের মতো বিপর্যস্ত ছিল রাজধানীবাসীও।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।‌ বৃষ্টি হচ্ছে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটেও। তবে বৃষ্টির প্রবণতা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুতুবদিয়ায় সবচেয়ে বেশি ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

রাজশাহী, পাবনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা দেশের কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।

এসময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।

বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমেছে। গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অতি তীব্র তাপপ্রবাহ দূর হয়েছে। অর্থাৎ দেশের কোথাও আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি নেই।

বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গায়। এছাড়া রাজশাহী ও ঈশ্বরদীতে ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তিন জেলায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি।

ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে হয়েছে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগামী কয়েকদিন ঝড়-বৃষ্টি বেড়ে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

এমএএস/এমএইচআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।