আলোচনায় বক্তারা
এলপিজি ব্যবহারে সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি
বাংলাদেশে বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। ফলে এলপিজি ব্যবহারে সতর্কতা এবং এ সংক্রান্ত সচেতনতা আগের তুলনায় অনেক বেশি জরুরি। পাশাপাশি সরকারকেও এ খাতের নীতিসহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) ‘স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর ক্লিন ফুয়েল হিসেবে এলপিজির প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব বিষয় তুলে ধরেন। গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে এলপি গ্যাস অপারেটর ওমেরা।
‘পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা’ প্রতিপাদ্যে গোলটেবিল আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের এলপিজি খাতের বর্তমান প্রবৃদ্ধি ও এ খাতের বিভিন্ন বিধিমালা। পাশাপাশি এলপিজির স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিভিন্ন প্রভাবও অন্বেষণ করা হয়।
বৈঠকে বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর এলপিজির প্রভাব গভীর এবং ইতিবাচক। অন্য জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা এবং তেলের তুলনায় এলপিজি উল্লেখযোগ্যভাবে কম দূষণ করে। কয়লা থেকে ৩৩ শতাংশ কম এবং জ্বালানি তেলের তুলনায় ১২ শতাংশ কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে। মাত্র এক টন এলপিজি ৪৭টি পূর্ণ বয়স্ক গাছের সমতুল্য পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারে, যা বন উজাড় কমাতে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া এলপি গ্যাসে রান্নার ফলে ধোঁয়া উৎপন্ন হয় না। এতে একদিকে যেমন ক্ষতিকারক দূষণের সংস্পর্শ কমায়, তেমনই স্বাস্থ্যের জন্যও কম ঝুঁকিপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের এলপিজি খাতে ক্রস-ফিলিং, এলপিজি ব্যবহার সম্পর্কে অপর্যাপ্ত সচেতনতা, মিডিয়া যোগাযোগে ভুল তথ্য এবং এলপিজি সিস্টেমের অনুপযুক্ত নকশা ও ইনস্টলেশনের মতো কারণগুলোকে এ খাতের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, একসময় গ্রামের মায়েরা রান্না করার সময় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যেতেন। কাঠ দিয়ে রান্না করার কারণে ধোঁয়ায় আমি আমার মায়ের চোখে পানি দেখেছি। এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার আসার পর সেই ভোগান্তি থেকে গ্রামের গৃহিণীরা মুক্তি পেয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রতিমাসের শুরুর সপ্তাহে এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। এলপিজি ব্যবহার নিরাপদ করার জন্য আমরা বিধি এবং নির্দেশিকা প্রণয়ন করবো। যাতে এ বিষয়ে দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টি হয়।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, অনেকক্ষেত্রে না জেনেই এলপিজি সিলিন্ডার নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা করা হয়। বেইলি রোডের দুর্ঘটনাসহ গত আড়াই মাসে ঢাকা এবং গাজীপুরের তিনটি বড় ঘটনায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও আমরা সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো তেমন কোনো আলামত বা প্রমাণ পাইনি। এর ব্যবহার নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠতে পারে, কিন্তু সিলিন্ডারের মান নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন থাকে না। এছাড়া আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী সিলিন্ডার একটি নির্দিষ্ট সময় পর রি-টেস্ট করার কথা বলা আছে।
সিলিন্ডারের গায়ে ব্যবহারবিধি ও সতর্কবাণী উল্লেখ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক অপারেটরকে এলপিজির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এসব অপারেটরের অসংখ্য ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে। তিনি বিশেষ করে এলপিজি পরিবহন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ডিস্ট্রিবিউটরদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
এলওএবি মহাসচিব মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, আগামীতে এলপিজি হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসা। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে এই খাতে। তবে এ শিল্পের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। দেশে মাত্র ২ শতাংশ উৎপাদিত হয়। দেশে এলপিজির ব্যবহার এক দশকে বহুগুণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে ব্যবহার প্রায় ১০ লাখ টনে এবং গ্রাহক সংখ্যাও ৩৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে চাহিদা ছিল মাত্র ৪৭ হাজার টন। ২০৩০ সালে চাহিদা ৩০ লাখ টনে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এনএস/কেএসআর