ইতিহাসের দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ বইছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২৭ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
তাপপ্রবাহের এতটা ব্যাপ্তি আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যেটি গত ৩১ মার্চ শুরু হয়ে এখনো (২৫ এপ্রিল পর্যন্ত) চলছে। কখনো কখনো এটি অতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। তাপপ্রবাহের এতটা ব্যাপ্তি আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ। চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতেও দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এটিই দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ। এর আগে গত বছরও এপ্রিল মাসে টানা ১৯ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। কোথাও কোথাও তা অতি তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এবার সেটা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে।

এপ্রিল মাসের টানা তাপপ্রবাহের এ ব্যাপ্তিকালকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন আবহাওয়াবিদেরা। এর আগে এ মাসে এত দীর্ঘ মেয়াদে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার রেকর্ড নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।

আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত ১৬ মার্চ প্রথম চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ১৯ মার্চ তা আবার দূরও হয়ে যায়। পরে ৩১ মার্চ ফের রাজশাহী ও পাবনা জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। সেই তাপপ্রবাহ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত চলছে। সে হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশের ওপর দিয়ে টানা ২৬ দিন ধরে তাপপ্রবাহ বইছে।

jagonews24

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, কোনো বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি থাকলে মাঝারি ও ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।

গত ২০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে। এটিই চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড। ওইদিন দিনের তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৪ ও পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত কয়েক দিনে কিছুটা কমার পর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ফের যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দিনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এ দুটি অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

টানা তাপদাহে সিলেট ছাড়া মোটামুটি পুরো দেশেই জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন স্থানে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তীব্র গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি। শ্রমজীবী মানুষের উপার্জন কমছে। এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মার্চের শেষ দিকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সেটি কোনো ব্রেক (বিরতি) ছাড়াই চলছে। এপ্রিলের বাকি দিনগুলোতেও তাপপ্রবাহে বিরতি আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি আগামী মে মাসের ৩/৪ তারিখ পর্যন্তও এভাবে কন্টিনিউ (অব্যাহত) করতে পারে। এরপর হয়তো হালকা কিছু বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

jagonews24

তিনি বলেন, গত বছর পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে টানা তাপপ্রবাহ ছিল না। কিছু ব্রেক ছিল। গত বছর টানা ১৯ দিন তাপপ্রবাহ দেখেছি। এবার পুরো এপ্রিল মাস গড়িয়েও এর বাইরে যাচ্ছে।

আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য মতে এর আগে এত দীর্ঘ মেয়াদে কখনো তাপপ্রবাহ বয়ে যায়নি। একটানা এতদিনের তাপপ্রবাহ, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম। এরই মধ্যে এটি সব রেকর্ড ভেঙেছে, কিন্তু এটি তো আরও চলবে। কমপক্ষে আগামী আরও ৪/৫ দিন তো থাকছেই।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জাগো নিউজকে বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহ বইছে, তবে মাঝখানে কোথাও কোথাও কিছুটা কমে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, এর আগে ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গায় টানা ২৩ তিন মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গিয়েছিল। এরপর এ বছরই সর্বোচ্চ ব্যাপ্তিকালের তাপপ্রবাহ চলছে। আলাদা করে এপ্রিল মাসে এত দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ সচরাচর হয় না।

‘অতীতে বাংলাদেশে এপ্রিল মাসে টানা এত ব্যাপ্তিকালের তাপপ্রবাহের রেকর্ড নেই’- বলেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক।

আরএমএম/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।