কারিগরি বোর্ডের সার্টিফিকেট বাণিজ্য
গ্রেফতার আরও কয়েকজন, জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বোর্ড চেয়ারম্যানকেও
অডিও শুনুন
সার্টিফিকেট বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল শনিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে আলী আকবর খানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীনকে (৫৪) গ্রেফতার করেছে ডিবি। সেহেলার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক না কেন আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। এখন পর্যন্ত কাউকে ছাড় দিইনি। সার্টিফিকেট বাণিজ্য চক্রের সঙ্গে যত বড় রাঘববোয়াল জড়িত থাকুক তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের তথ্য-উপাত্তে যদি চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাবে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবো। যে কোনো সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডাকবো।
সম্মেলনে ডিবিপ্রধান বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সার্টিফিকেট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারী ফয়সালকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্যমতে বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র, এবং শত শত সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির মত বিশেষ কাগজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেওয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি উদ্ধার করা হয়।
গত ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়ার সদর থানা এলাকা থেকে গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার এ তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চক্রের সঙ্গে জড়িত কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে (৪৮) গত ১৮ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে (৪০) গত ১৯ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া সর্বশেষ চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিবিপ্রধান বলেন , গ্রেফতার এ কে এম শাসমুজ্জামান ও তার ব্যক্তিগত সহযোগী ফয়সাল গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে হস্তান্তর করেছে। একই সঙ্গে সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সার্টিফিকেটগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে কোনো দেশে বসে এ ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর গুগলে সার্চ করলে তা সঠিক পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন আরও বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন নিবেদনের ফোকাল পারসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। কোনোক্রমে ই-সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা নন। সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে সংবেদনশীল এ কাজগুলো করার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালরা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর তৈরি, রেজাল্ট পরিবর্তন পরিবর্ধন, নাম ও জন্ম তারিখ সংশোধনের তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে টাকার বিনিময়ে আদান-প্রদান করেছে কম্পিউটার অপারেটর ও সিস্টেম এনালিস্টদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এ রকম প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিপরায়ণ ২৫/৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ সিবিএ দালাল কর্মচারী-কর্মকর্তা, কম্পিউটার এবং পরিদর্শন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে রেজাল্ট পরিবর্তন, নাম-ঠিকানা পরিবর্তন, প্রার্থীদের বয়স পরিবর্তন ও সময়ে অবৈধভাবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও রোল নম্বর প্রদান সংক্রান্ত কাজগুলো করার সিন্ডিকেট বানিয়েছে।
টিটি/এমকেআর/জেআইএম