সদরঘাট ট্র্যাজেডি
দুর্বলতা থাকলে সার্ভেয়ারদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে
ঈদের দিন ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ’র সার্ভেয়ারদের দুর্বলতা থাকলে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
ঈদের দিন সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌপথে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সেটা সদরঘাট হোক, ভোলায় হোক, চাঁদপুরে হোক, বরিশালে হোক, মাঝ নদীতেই হোক না কেন- প্রত্যেকটার আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিভিন্ন ধরনের পানিশমেন্টগুলো হয়।
তিনি বলেন, ঈদের দিন আমরা উৎসবমুখর মুডে ছিলাম। সেখানে এ ধরনের একটি ঘটনা ঈদের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। আপনারা জানেন, জাহাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল অনেকে কিন্তু পালিয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।
‘একটা মামলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এ জায়গাটায় খুবই শক্ত আছি। যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানে যদি আমাদের সার্ভেয়ারদের কোনো দুর্বলতা থাকে, সেটাও কিন্তু শাস্তির আওতায় আনা হবে।
সদরঘাটে লঞ্চ যখন ভিড়ে, জায়গা না থাকার পরও অনেক লঞ্চ গতি ও শক্তি নিয়ে সেখানে ঢোকার চেষ্টা করে। সারা বছরই এই প্র্যাকটিসটা হয়। এটার বিষয়ে আপনারা দৃষ্টি দেবেন কি না, জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা সব লঞ্চ করে, ব্যাপারটা তা নয়। বিশেষ বিশেষ কিছু লঞ্চ করে, শক্তিশালী কোনো মালিক থাকলে তাহলে এটা করে। আমরা সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
‘মনে করেন এটার সঙ্গে মন্ত্রী বাহাদুর যুক্ত আছে বা অন্য কেউ যুক্ত আছে। তখন তার সঙ্গে স্টাফরা এ ধরনের আচরণ করে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
বলা হচ্ছে অভিযুক্ত একটি লঞ্চের মালিক একজন এমপি। এ বিষয়ে নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, তদন্তে সেটা বেরিয়ে আসবে। কার নামে রেজিস্ট্রেশন করা আছে। এ জায়গাটায় আমাদের জিরো টলারেন্স।
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে বাংলাদেশি জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করতে মুক্তিপণের বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই বলে আবারও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
ব্যাগে করে মুক্তিপণ দেওয়ার ছবি দেখা গেছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা এখন কোন সিনেমার ছবি আমি তো জানি না। এমন ছবি তো আমরা অনেক চলচ্চিত্রে দেখি। কোন ছবি কোথায় গিয়ে কীভাবে যুক্ত হয়েছে, কোনটার সঙ্গে কোনটা এডিট হয়েছে আমি জানি না।
তিনি বলেন, জানতাম পরিত্যক্ত জিনিস পানিতে ফেলে। এত দামি জিনিস (ডলার) পানিতে ফেলে, জানা ছিল না।
নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আইএমও’র (আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থা) সি ক্যাটাগরির সদস্য। আমরা একটা প্রস্তাবনা তৈরি করছি, যেটা নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। আইএমওতে যে ১৭৪টা দেশ আছে তাদের কাছে আমরা একটা প্রস্তাবনা দেবো, কীভাবে আমাদের সমুদ্রপথ নিরাপদ রাখতে পারি।
জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া জাহাজটি এখন দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে জানিয়ে নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, সেটি ১৯ বা ২০ এপ্রিল দিয়ে পৌঁছাবে। এরপরের পুরো বিষয়টি জাহাজ এবং নাবিকদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়। নাবিকরা কত দিনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেছে, সে চুক্তি তারা বহাল রাখবে, নাকি তারা ফিরে আসবে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, তবে মালিকরা গতকাল খুব ভালো একটি কথা বলেছে। তারা (নাবিকরা) যদি চায় বাংলাদেশে ফিরে আসবে, তাদের বিমানযোগে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। সেখানে তাদের রিপ্লেস কারা হবে, সেটি নিয়েও হয়তো তারা কাজ করছে।
আরএমএম/এমএইচআর/জিকেএস