এমভি আবদুল্লাহ
আবুধাবিতে গিয়ে ২৩ নাবিকের মধ্যে কারা দেশে ফিরবেন সিদ্ধান্ত
• সংযুক্ত আরব আমিরাতের পথে এমভি আবদুল্লাহ
• তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে আলোচনা
• ১৯-২০ এপ্রিলের মধ্যে আমিরাত পৌঁছাবে এমভি আবদুল্লাহ
• আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করা হয় মুক্তিপণের সব কাজ
• মুক্তির দুদিন আগে নাবিকদের ভিডিও পাঠায় জলদস্যুরা
সোমালিয়ান দস্যুদের হাতে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত ২৩ নাবিকই এমভি আবদুল্লাহর সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পথে রয়েছেন। আগামী ১৯ কিংবা ২০ এপ্রিল জাহাজটি আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এরপরই জানা যাবে, মুক্ত নাবিকদের মধ্যে কারা কারা জাহাজে থাকবেন এবং কারা আবুধাবি থেকে দেশে ফেরত আসবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আবুধাবির আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছানোর পর সিদ্ধান্ত হবে, মুক্ত নাবিকদের মধ্যে কারা জাহাজে থাকতে চান, কারা চান না। যারা আবুধাবি থেকে দেশে ফিরতে চাইবেন তাদের যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেশের আনা হবে।’
গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ৩১ দিন পর জাহাজের মালিকপক্ষ, বিমা কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের সহযোগিতায় মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধ করেই ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করা হয়। এরপরই এমভি আবদুল্লাহ আবুধাবির আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে স্কট (পাহারা) দিয়ে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন
- নিরাপদে সরে যেতে কয়েকজন নাবিককে সঙ্গে নিতে চেয়েছিল জলদস্যুরা
- আন্তর্জাতিক চাপে নাবিকরা মুক্ত, মুক্তিপণ দেওয়ার তথ্য নেই
- জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি ২৩ নাবিক মুক্ত
তবে জাহাজের মালিকপক্ষ মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। এ বিষয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক যাবতীয় নিয়ম অনুসরণ করেই ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করা হয়েছে। গতরাতেই জাহাজ থেকে দস্যুরা নেমে গেছেন। জাহাজটি আবুধাবির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। মুক্তিপণের বিষয়টি আমাদের পর্যায়ে নেই।’
এদিকে এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হওয়ার পর রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত কেএসআরএম ভবনে সংবাদ সম্মেলনে করে জাহাজের মালিকপক্ষ।
এসময় প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) শাহরিয়ার জাহান রাহাত সাংবাদিকদের বলেন, গত ১২ মার্চ এমভি আবদুল্লাহ দস্যুদের কবলে পড়ে। দস্যুরা অস্ত্রের মুখে জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান উপকূলে নিয়ে যায়। ৩১ দিন পর ফাইনালি জাহাজটি ছেড়ে যায় তারা।
তিনি বলেন, ‘জাহান মণি’ জাহাজ জলদস্যুর কবলে পড়ার ১৪ বছর পর একই ঘটনা ঘটলো। ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। সাধারণত সোমালিয়ান জলদস্যুরা জাহাজ জিম্মি করে অর্থ আদায়ের জন্য। তারা জাহাজের মালিকপক্ষকে টার্গেট করে বেশি স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তারা (দস্যুরা) জিম্মির ৯ দিনের মাথায় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। আমরা তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে আলোচনা শুরু করি। আমাদের জাহাজ হাইরিস্ক এরিয়ার বাইরে ছিল। যে কারণে আমরা আর্ম গার্ড ব্যবহার করিনি।
আরও পড়ুন
- জাহাজে যেভাবে ঈদ কাটলো জিম্মি ২৩ নাবিকের
- জিম্মি জাহাজের অদূরে ইইউ নেভির যুদ্ধজাহাজ
- সোমালিয়ার জলদস্যুদের চেয়েও বিএনপি ভয়ংকর: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জাহাজটিকে ২৩ নাবিকসহ দস্যুমুক্ত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান শাহরিয়ার জাহান। তিনি বলেন, পুরো ঘটনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোরভাবে মনিটরিং করেছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধারে বিদেশি যুদ্ধজাহাজ অভিযান চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চেয়েছি। আমাদের কাছে নাবিকদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। যে কারণে আমরা অভিযানে সম্মত ছিলাম না। আমাদের সরকার কুইক রেসপন্স করেছে। পুরো ঘটনায় সাংবাদিকরা সহযোগিতা করেছে। আশা করছি, ১৯-২০ এপ্রিল জাহাজটি আমিরাত পৌঁছাবে। এরপর নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম বলেন, জাহান মণির সময় আমাদের জ্ঞানের অভাব ছিল। তখন উদ্ধারে সময় বেশি লেগেছিল। এবার জাহাজ দস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকেই আমরা জাহাজের লোকেশন ট্র্যাক করতে থাকি। যোগাযোগ শুরুর পর প্রতিদিনই দস্যুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। গত দুদিন আগে আমাদের দাবি অনুযায়ী প্রত্যেক নাবিকের ভিডিও নিয়েছি। মুক্তিপণের প্রতিটি কাজ আইনগতভাবে করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করা হয়েছে। কত ডলার সে বিষয়টি আমরা নানা কারণে বলতে পারছি না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সোমালিয়া, কেনিয়ার নিয়ম মানতে হয়েছে।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএমের ডিএমডি সরোয়ার জাহান, পরিচালক করিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এমডিআইএইচ/এমএএইচ/জেআইএম/এএসএম