‘পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির প্রাণের অসাম্প্রদায়িক উৎসব’
পহেলা বৈশাখ। ভোর ৬টা। সবেমাত্র রমনার বটমূলে দিনের প্রথম আলো ফোটে। লাল-সাদা শাড়ি, হাতে কাচের চুড়িতে বাঙালিয়ানার সাজে বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন ধানমন্ডির সঙ্গীতা দাস। এর কিছু সময় পর বটমূলে আহীর ভৈরব রাগে বাঁশির সুর বেজে ওঠে। এই সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুলতে থাকেন উপস্থিত সবাই।
আলাপকালে সঙ্গীতা দাস জাগো নিউজকে বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির প্রাণের অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এ উৎসবে মানুষ ও মানবতার জয়গান গায় সবাই। বটমূলে আহীর ভৈরব রাগে বাঁশির সুরে মানুষকে ভালোবেসে নিজেকে সার্থক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রেরণা পাই।
বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ রোববার ১৪৩১ সনের দিন গণনা শুরু হয়েছে। আর নতুন বছরের নতুন দিনটি উদযাপনে সবচেয়ে বড় উৎসব বসেছে রাজধানীর রমনা বটমূলে। সকাল সোয়া ৬টায় এই উৎসব শুরু হয়েছে। উৎসবে অংশ নিয়েছেন দেশের ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ধনী, নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। ফলে বৈশাখের এই আয়োজন এক বর্ণাঢ্য মহোৎসবে রূপ নিয়েছে।
সেগুনবাগিচার বাসিন্দা জিয়াউল ইসলাম। তিনিও সকাল সকাল বৈশাখী সাজে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়েছেন বৈশাখের উৎসবে। মূল বটমূলের সীমানায় জায়গা না পেয়ে লেকের পাড়ে চাদর বিছিয়ে বসে ছিলেন তারা।
আলাপকালে জিয়াউল ইসলাম বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ রুটিন অনুযায়ী নিজ ধর্মীয় উৎসব পৃথকভাবে পালন করেন। কিন্তু পহেলা বৈশাখে সব ধর্মের মানুষ রমনা বটমূলে একত্রিত হয়। সবাই গান-কবিতার মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। সবাই বিশ্বাস করে, নতুন বছর মানেই একটি নতুন সম্ভাবনা। আর এ বিশ্বাসই দেশ, জাতি, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের সমৃদ্ধি অর্জনের প্রেরণা যোগায়।
শুধু সঙ্গীতা দাস এবং জিয়াউল ইসলাম নয়, বটমূলে বৈশাখী উৎসবে অংশ নিতে ভোর ৬টা থেকে এমন হাজারো মানুষের ঢল নামে। তাদের পোশাকে স্থান পেয়েছে বৈশাখী রঙ লাল-সাদার প্রাধান্য। এর মধ্যে নারীরা লাল-সাদা শাড়ি, কাচের চুড়ি, দুল-মালায় বাঙালিয়ানায় সেজেছেন। এছাড়া পুরুষের গায়ে একই রং-নকশার পাঞ্জাবি শোভা পেতে দেখা গেছে।
লাল-সাদা পাঞ্জাবি গায়ে রমনার বৈশাখী উৎসবে হাজির হয়েছেন ঢাকার একটি বেসরকারি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র আরিয়ান রাফি ও নাহিদ হাসান। আরিয়ান রাফি বলেন, বৈশাখী উৎসব বাংলার ঐতিহ্য। উৎসবে অংশ নিতে পেরে আমাদের খুব ভালো লাগছে। কারণ এ উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন।
এমএমএ/জেডএইচ/এমএস