এখনো থমথমে থানচি
ব্যাংক ও থানায় হামলা, অস্ত্র লুট, অপহরণ ও গোলাগুলির ঘটনার ২২ ঘণ্টা পরেও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদরে। দিনভর বন্ধ ছিল থানচি বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। থানচিতে কর্তব্যরত পুলিশ, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
থানচি উপজেলা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান অং প্র মোরং বলেন, ‘পুরো এলাকায় আতঙ্ক ভর করেছে। আগে কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদরে আসার সাহস করেনি। এবার পরপর দুইদিন হামলা চালিয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দাবি করছি।’
‘পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তিন থানায় তদারকের জন্য একজন করে এএসপিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। থানচি থানায় অতিরিক্ত আরও ১০০ পুলিশ সদস্য যোগ দিচ্ছে।’— বান্দরবানের সহকারী পুলিশ সুপার জুনায়েদ জাহেদী
থানচি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতের হামলায় পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেছে এলাকার মানুষ। খুব প্রয়োজন ছাড়া দোকানে আসছেন না কেউ, আবার ব্যবসায়ীরাও প্রতিষ্ঠান খুলছেন না।
আরও পড়ুন
- বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ৬ মামলা
- টাকা লুট আর সক্ষমতা জানান দিতেই কেএনএফের হামলা: র্যাব
- বান্দরবানে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার উদ্ধার
এসব ব্যবসায়ীদের মতই আতঙ্কে দিনরাত পার করছেন থানচি বাজারের প্রায় দেড়শ পরিবার। বৃহস্পতিবার গোলাগুলির সময় তারা সবাই পাশের জঙ্গলে অবস্থান নিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
থানচি বাজারে পুলিশের টহল
স্থানীয় সাংবাদিক মংবোওয়াংচিং মারমা অনুপম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে টিঅ্যান্ডটি পাড়া থেকে গুলির শব্দ শুনি। এর পরপর থানচি থানা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্প ও থানচি বাজারের চতুর্দিকে গুলির শব্দ শুনতে পাই। এ গোলাগুলি প্রায় এক ঘণ্টা চলেছে। এতে থানচি সদর ইউনিয়নের আশপাশের সান্দাক পাড়া, নাড়কেল পাড়া, আমতলি পাড়াসহ তিন ও চার নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আতঙ্কে জঙ্গলে অবস্থান নিয়েছিল। এসব মানুষ এখনো আতঙ্কে আছেন।’
‘পুরো এলাকায় আতঙ্ক ভর করেছে। আগে কখনো কেএনএফ সদরে আসার সাহস করেনি। পরপর দুইদিন হামলা চালিয়েছে। প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দাবি করছি।’— থানচি উপজেলা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে থানচি থানা আক্রমনের জন্য ৬০ থেকে ৭০ জনের একটি অস্ত্রধারী দল এক কিলোমিটার দূরের টুকতং ম্রো পাড়ায় অবস্থান নিয়েছিল। এছাড়া থানচি তিন নম্বর ওয়ার্ডের তংক্ষেয়ং পাড়া ও ওয়াকচাকু পাড়া থেকে কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহী অস্ত্রসহ অবস্থান নেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয়রা এসব দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের সহকারী পুলিশ সুপার মো. জুনায়েদ জাহেদী বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তিন থানায় তদারকের জন্য একজন করে এএসপিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। থানচি থানায় অতিরিক্ত আরও ১০০ পুলিশ সদস্য যোগ দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন
- ‘ঘোষণা দিয়েই’ বান্দরবানে হামলা চালালো কেএনএফ
- রুমায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট-ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ
- এবার থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংক লুট
বান্দরবানের দুই উপজেলায় মঙ্গলবার রাতে ১৭ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার রাতে থানচি থানা লক্ষ্য করে গুলি করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। পরে গভীর রাতে আলীকদম উপজেলায় পুলিশ ও সেনাদের একটি যৌথ তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনায় কেএনএফ জড়িত বলে ধারণা করছেন পুলিশ ও স্থানীয়রা।
সোনালী ব্যাংকের থানচি উপজেলা শাখা
এসব ঘটনায় রুমা ও থানচি থানায় ছয়টি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় পৃথক তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি, পুলিশ ও আনসারের অস্ত্র লুট, থানায় হামলা ও ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের অভিযোগ করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) সঞ্জয় সরকার।
এএজেড/এমএএইচ/এএসএম