ঈদে ভারতীয় শাড়ি ও থ্রি-পিসে মজেছেন বাঙালি নারী
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। ঈদ উৎসবে শাড়ি ছাড়া নারীর সাজগোজ যেন অপূর্ণ থেকে যায়। বাঙালি নারীর ক্ষেত্রে সেটা আরও বেশি। কারণ, বাঙালি নারীর সবচেয়ে নান্দনিক পোশাক শাড়ি। আবহমান কাল থেকে শাড়ি বাঙালি নারীর সম্ভ্রম, অলঙ্কার আর অহংকারের প্রতীক। এবারের ঈদেও ভারতীয় শাড়ি ও থ্রি পিসে মজেছেন বাঙালি নারীরা।
রোববার (৩১ মার্চ) রাজধানীর নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও ধানমন্ডির ছোট-বড় বিভিন্ন পোশাকের দোকান ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ধানমন্ডির রাপা প্লাজার নীল আঁচল শাড়িজ নামের দোকানে বৈচিত্র্যময় শাড়ির সমাহার দেখা গেছে। সেখানে ভারতের তেলেঙ্গানার তৈরি এক একটি গাদোয়াল শাড়ির দাম চাওয়া হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
ওই মার্কেটে দামি শাড়িসহ মাঝারি দামের অন্য শাড়ির কালেকশনও দেখছেন ফাহমি জান্নাত নামের এক ক্রেতা। তিনি পেশায় ব্যাংকার। ফাহমি জান্নাতের এবারের ঈদ পরিকল্পনায় রয়েছে ভালো মানের শাড়ি কেনা।
ঈদের কেনাকাটা প্রসঙ্গে এ নারী জাগো নিউজকে বলেন, গাদোয়াল অথবা কাঞ্জিভরম শাড়ি কিনবো। এটাই এবারের ঈদের পরিকল্পনা।
ভারতীয় শাড়ির প্রতি আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতীয় শাড়ির ফেব্রিকস ভালো। নান্দনিক ডিজাইন আর নিখুঁত কারুকাজ ভালো লাগে। ভারতীয় শাড়িতে জরি সুতার কাজ, স্প্রিংয়ের কাজ, অরিজিনাল স্টোন দিয়ে কাজ ও মিনাকারি কাজ আমার বেশ ভালো লাগে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভারতের তামিলনাড়ুর কাঞ্জিভরমে তৈরি শাড়ি গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের নারীদেরও মনে জায়গা করে নিয়েছে। এবারের ঈদেও এ ধরনের শাড়ির চাহিদা কমেনি।
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের তাঁত, বালুচরী, উত্তরপ্রদেশের বেনারসি সিল্ক, বিহারের তসর, গুজরাটের পাটোলা, পাঞ্জাবের ফুলকারী, ছত্তিশগড়ের কোসা সিল্ক, রাজস্থানের কোটা দরিয়া ও লেহেরিয়া শাড়িও বাঙালি নারীর পছন্দের তালিকার প্রথম দিকেই থাকে।
ভারতীয় শাড়ি, যা সব সময় ধরে মেয়েদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। কালের বিবর্তনে সেসব শাড়িতে এসেছে নতুনত্ব। খাদি কাতান, মিনাকারি দিয়ে কাজ করা, আঁচলে টারসেল, ব্লাউজ পিসে কাজ করা এবং হাতে প্যানেল আছে। এসব শাড়ি ক্রেতার অন্যতম পছন্দ। শাড়িপ্রিয় নারীদের কালেকশনে ভারতীয় শাড়ি থাকবে না, এ যেন হতেই পারে না।
নীল আঁচল শাড়িজের ম্যানেজার ফারুক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ঈদ ঘিরে দোকানে সব ধরনের শাড়ি তুলেছি। আমাদের দোকানে গাদোয়াল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। এটা ভারতীয় শাড়ি। আরামদায়ক ও এক্সক্লুসিভের কারণে এ শাড়িটা নারীরা অনেক পছন্দ করেন। বারবার ধুলেও শাড়ির রং একই থাকে। এছাড়া দেশি সিল্ক ও সুতি শাড়ি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের বেশিরভাগই দোকানে এসে ভারতীয় শাড়ি খোঁজেন। কারণ, ভালো মানের শাড়ি মানেই ভারতীয় শাড়ি।
শুধু শাড়ি নয়, ভারতীয় থি-পিস, ঘারারা, সারারা, গাউন, আলেয়া কাট ও লেহেঙ্গাও মেয়েদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। মানভেদে ৩ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় এগুলো বিক্রি হচ্ছে। একটা সারারা থ্রি-পিস ১৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরাসরি ভারতের বোম্বে, কলকাতা ও আহমেদাবাদ থেকে এগুলো দেশের বাজারে আনা হয়। মোহাম্মদপুরের একটা শোরুম থেকে এবার ঈদে সাড়ে চার হাজার টাকায় একটা ভারতীয় থ্রি-পিস কিনেছেন নাঈমা সুলতানা।
এ প্রসঙ্গে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, একদিকে মানসম্মত অন্যদিকে নকশাও চমৎকার। দুই থেকে তিনবার ওয়াশ করলেও কালার ঠিক থাকে। তবে ধীরে ধীরে আমাদের দেশেও কোয়ালিটিফুল প্রোডাক্ট তৈরি হচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের শ্রীনিকেতন দোকান। সেখানে মূলত ভারতীয় থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, লেহেঙ্গা বিক্রি করা হয়। সব পণ্য আকাশপথে বাংলাদেশে আনা হয়। মুম্বাই, আহমেদাবাদ ও কলকাতা থেকে থ্রি-পিস আমদানি করা হয়। ভারতীয় ওয়েস্ট দাদর, জুলা দাদর কোম্পানি থেকে এগুলো কেনেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। এয়ার ফেয়ার ও ট্যাক্স দিয়ে প্রতি কেজি পণ্য আমদানিতে খরচ হয় এক হাজার ২০০ টাকা।
ভারতীয় থ্রি-পিস প্রসঙ্গে শ্রীনিকেতনের মালিক রাজিব জাগো নিউজকে বলেন, ক্রেতারা সব সময় ভারতের মানসম্পন্ন কাপড় কিনতে চান। মূলত ফেব্রিকস ও নকশার কারণে আমাদের দেশের মেয়েরা এসব কাপড় পছন্দ করেন। আমি যে কোম্পানি থেকে এসব কাপড় কিনি সেই কোম্পানি নিজস্ব রেশম চাষ করে। এসব রেশম যত্নসহকারে সংগ্রহ করে ফেব্রিকস তৈরি হয়। যে কারণে ভারতীয় থ্রি-পিস পরতেও আরামদায়ক। সেজন্যই ক্রেতারা বাড়তি টাকা খরচ করে হলেও সেগুলো কিনতে চান।
এমওএস/এমকেআর/জিকেএস