লাইসেন্স বহাল চেয়ে সেই নারী পাইলটের রিভিউ
জাল শিক্ষাসনদ জমা দেওয়ার অভিযোগে বাতিল করা কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) পুনর্বহাল চেয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে রিভিউ পিটিশন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফার্স্ট অফিসার সাদিয়া আহমেদ।
গত ৫ মার্চ তার পক্ষে ব্যারিস্টার রাজিন আহমেদ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর এ রিভিউ পিটিশন দায়ের করেন।
পিটিশনে ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর ক্যান্সলেশন নোটিশ ও ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ সাসপেনশন নোটিশ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, পাইলট সাদিয়া আহমেদ ১৯৯৯ সালে এসএসসি এবং ২০০১ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে পাইলট হওয়ার অভিপ্রায়ে তিনি বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে ভর্তি হন। এরপর তিনি কানাডা চলে যাওয়ায় সেখানে সব ট্রেনিং সমাপ্ত করে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স প্রাপ্ত হন।
কিন্তু সিপিএল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতের আবশ্যিক শর্ত থাকায় তিনি আবারও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং ২০০৮ সালে পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতসহ জিপিএ ৪.৯০ নিয়ে বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড ঢাকা থেকে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ২০১০ সালে বেবিচক কর্তৃক সিপিএলের নিমিত্ত সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আবশ্যিক সব কাগজপত্র কর্তৃপক্ষকে প্রদান করে সিপিএল লাইসেন্স প্রাপ্ত হন। দীর্ঘ ১৩ বছর সাফল্যের সঙ্গে পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়েন। হঠাৎ গণমাধ্যমের এক রিপোর্টে প্রথম জানতে পারেন তার নাকি সার্টিফিকেট ভুয়া। অথচ দীর্ঘ ৭ বছর পর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিত সাবজেক্টসহ সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল রুলস ১৯৮৪ অনুযায়ী সব শর্ত পূরণ করেই লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সাদিয়া আহমেদের কাছে ক্লারিফিকেশন চাইলে তিনি ২২ মার্চ বেবিচক’কে জানান, তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং তার সপক্ষে সব কাগজপত্র দেশে রয়েছে। যেহেতু তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন তাই তার দেশে আসতে সময়ের প্রয়োজন এবং তিনি দেশে এসে সব কাগজাপত্রসহ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ বাতিল হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন।
‘কিন্তু বেবিচক তার লাইসেন্স ৭ দিন পরেই স্থগিত করে দেয়। তথাকথিত এক ইনভেস্টিগেশন করে দীর্ঘ ৮ মাস পরে তার পিপিএল ও সিপিএল দুটো লাইসেন্সই বাতিল করে দেয়। বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ২০১৭ মোতাবেক যে কারও লাইসেন্স বাতিল করতে হলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ দিতে হবে, যা আইনের আবশ্যিক বিধান। কিন্তু পাইলট সাদিয়া আহমেদের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ আইনের ১১(২) ধারা মানেনি বরং একতরফাভাবেই তাদের সিদ্ধান্ত পাইলট সাদিয়া আহমেদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ বলা হয় রিভিউ পিটিশনে।
পিটিশনে বলা হয়েছে, পাইলট সাদিয়া আহমেদকে ইনভেস্টিগেশন কমিটির কোনোরূপ অনুসন্ধানের ফলাফল জানানো হয়নি এবং তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোনো সুযোগও দেওয়া হয়নি। তাকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি এবং ব্যক্তিগত শুনানিরও সুযোগ দেওয়া হয়নি, যা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৭ এর ধারা ১১(২) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ১৪ বছর আগে জমা দেওয়া সার্টিফিকেটের কপি হঠাৎ করে কীভাবে বদলে গেলো সে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাইলট সাদিয়া আহমেদ। তার চাকরিজীবন শুরু হয় জিএমজি এয়ারলাইন্সের একজন কেবিন ক্রু হিসেবে। পরে তিনি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউএস-বাংলায় ফার্স্ট অফিসার হিসেবে চাকরি করেন।
এমএএস/ইএ/জেআইএম