মোরগের ডাকে বিরক্ত সাবেক আমলা মিলন, প্রতিবেশীকে পুলিশের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৪০ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২৪

অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন প্রতিবেশীর মোরগের ডাকে বিরক্ত হয়েছেন। এজন্য এসব মোরগ সরিয়ে নিতে বলেছেন। তার কথা না মানলে পুলিশের হুমকিও দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে মোরগ জবাই করে খেয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশি। এতেও রক্ষা নেই। সব মোরগ সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন মিলন।

বিষয়টি নিজেই স্বীকার করে সাংবাদিকদের মাহবুব কবীর মিলন বলেন, বিষয়টা তেমন না। তারা যদি কথা না শোনেন তাহলে আমাকে পুলিশের আশ্রয় নিতে হবে।

অভিযোগ জানিয়ে মিলনের এক প্রতিবেশী বলেন, গত ১৮ মার্চ এক ব্যক্তি এসে বললেন, সচিব সাহেব (মাহবুব কবীর মিলন) আপনার নম্বর চেয়েছেন। আমি নম্বর না দিয়ে নিজেই তার কাছ থেকে উনার নম্বর নিয়ে ফোন দেই। তিনি (মিলন) বলেন, ছাদে কি মুরগির ফার্ম করছেন? আমি বলি, ফার্ম না, পাখির খাঁচা বানিয়েছিলাম, সেখানে পাখি নেই। আমার সন্তানরা গ্রাম থেকে পাঁচটা মুরগির বাচ্চা এনেছে, তার মধ্যে একটা মোরগ। তিনি উত্তর দেন, মোরগ ডাকাডাকি করলে তো এলাকাটা গ্রাম আর খ্যাত হয়ে গেলো!

জবাবে আমি তাকে বলি, এ এলাকায় অনেকেই মোরগ মুরগি পালন করে, আপনার বাসার সামনেও আছে। এরপর তিনি বলেন, আমি সবাইকে বলবো, এসব সরাতে হবে, তা না হলে পুলিশের আশ্রয় নেবো।

এ ঘটনার পর ওই প্রতিবেশী মোরগটি জবাই করেন। এর দুদিন পর মো. মাহবুব কবির মিলন আবারও ওই বাসায় লোক পাঠান বলে জানান ওই প্রতিবেশী।

আরেক প্রতিবেশী বলেন, তিনি বাসায় সোসাইটির লোক পাঠান। তারা বলে গেছেন, ছাদে কোনও মোরগ মুরগি পালা যাবে না। এগুলো সরাতে হবে।

প্রতিবেশীদের দাবি, নিজ জায়গায় মোরগ-মুরগি পালতে সমস্যা কোথায়? কোথাও এরকম বিধিনিষেধ নাই। প্রধানমন্ত্রীও বাসাবাড়িতে ফাঁকা জায়গায় নিজ উদ্যোগে পশুপালন ও চাষাবাদে উৎসাহিত করেন। ঢাকা বলে কি এর ব্যতিক্রম হবে? এছাড়া এলাকার অন্যান্য প্রতিবেশীদেরও কিছু অভিযোগ আছে মাহবুব কবির মিলনের বিরুদ্ধে। এলাকায় কেউ কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে তিনি পুলিশ পাঠিয়ে তা বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন প্রতিবেশী।

এ ঘটনায় সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন তার নিজের ফেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

তাতে তিনি লিখেছেন,

শহরে বসবাস। বাড়ির উপর বাড়ি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। আমার পাশের কয়েকটি বাসায় মোরগ এবং মুরগি পালে। মোরগের ডাকে সারা রাত ঘুমাতে পারি না। বিশেষ করে শেষ রাত থেকে দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত। এই শব্দ দূষণে ফজর নামাজের পর আর ঘুমানো যায় না। সাথের ৩/৪টি বিল্ডিং-এ নিশুতি রাতে একসঙ্গে কয়েকটি মোরগ ডাকলে পরিবেশে শব্দ দূষণের কী ভয়াবহ রূপ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তাই সব বাসায় লোক পাঠিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলাম মোরগ না পালার জন্য। মুরগি পালায় কোনো সমস্যা নেই। যেহেতু মুরগি ডাকে না। এক বাসায় আপত্তি জানালে বলেছি, তাহলে থানায় জিডি করা ছাড়া আমার কোনো উপায় থাকবে না। কারণ এটা-তো শহর, গ্রাম নয়। ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা। এরপর সব বাসায় মোরগ সরিয়ে ফেলেছে। এখন কোনো সমস্যা নেই। শখ করে যারা অন্যের কষ্ট আর মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি করে, এ সামান্য বোধটুকু যাদের নেই, তাদের বোধহয় হবার জন্য দোয়া করছি। শব্দদূষণ রোধে আমি সারাজীবন কঠোর ছিলাম। এভাবেই প্রতিবাদ করা উচিত সবার।

অভিযোগের বিষয়ে মাহবুব কবীর মিলন সাংবাদিকদের বলেন, আমার অভিযোগটা ছিল মোরগ নিয়ে। শেষ রাতে নামাজের পর ঘুমানো যায় না। ভয়াবহ চিৎকার মোরগের। চারটা বাসায় মোরগ পালন করে, এসব মোরগ যদি একসঙ্গে ডাকতে থাকে তাহলে কী অবস্থা হতে পারে এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়? যারা পালেন, তারা ঢাকাকে গ্রাম মনে করেন কি না! অভিযোগ জানানোর পর মোরগ পালা বন্ধ হয়েছে। এখন একটা বাড়িতে আছে মনে হয়।

পুলিশ পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টা তেমন কিছু না। তারা যদি কথা না শোনেন তাহলে আমাকে পুলিশের আশ্রয় নিতে হবে। সবাই মিলেই আমরা বসবাস করি। একে অপরের সুযোগ-সুবিধা দেখবে না? আমার আপত্তি ছিল মোরগ নিয়ে, মুরগি তো আর এভাবে ডাকে না।

মাহবুব কবীর মিলন অবসরে যাওয়ার আগে সবশেষ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য এবং কিছু সময়ের জন্য সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ছিলেন।

টিটি/এমএইচআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।